জীবনের কোনো না কোনো সময় প্রায় প্রত্যেকেই কোমর ব্যথাজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে, বিশেষ করে কিডনি রোগ বহির্বিভাগে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেকের ধারণা, যেহেতু কোমর ব্যথা, সেহেতু কিডনির সমস্যা হতে পারে। অথচ প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এসব রোগীর বেশির ভাগেরই কিডনি রোগের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
জেনে রাখা দরকার, কিডনি রোগের উপসর্গগুলোর একটি কোমর ব্যথা হলেও এর আরো অনেক কারণ রয়েছে। কিডনি রোগই এর একমাত্র কারণ নয়। আবার রোগভেদে কোমরে ব্যথার তীব্রতারও তারতম্য হয়। তাই কোমরে ব্যথা মানেই কিডনি রোগ—এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।
কারণ
কিডনি রোগ ও মেরুদণ্ডের হাড়ের কোনো সমস্যা ছাড়াও কোমরের ব্যথার বিভিন্ন্ন কারণ থাকে। তবে নিচের রোগগুলোর উপসর্গ হিসেবে রোগীরা কোমরের ব্যথায় বেশি ভুগে থাকেন—
স্থূলতা বা অতিরিক্ত শারীরিক ওজন।
মেরুদণ্ডের হাড়ের সমস্যা। যেমন—হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়া, হাড়ের প্রদাহ, হাড়ে আঘাত পাওয়া, হাড়ের টিউমার, হাড়ের টিবি রোগ ইত্যাদি।
নানা কারণে মেরুদণ্ডের দুই পাশের মাংসপেশিতে চোট পাওয়া।
অসমান জুতা-স্যান্ডেল, যেমন হাইহিল (১ ইঞ্চির বেশি) ব্যবহার করা।
নারীদের জরায়ুর নানা সমস্যা, যেমন জরায়ুতে প্রদাহ, টিউমার ইত্যাদি।
মূত্রনালিতে প্রদাহ, কিডনিতে প্রদাহ, পাথর, টিউমার বা সিস্ট ইত্যাদি।
আকস্মিক কিডনি বিকল রোগ।
ধীরগতির বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ।
কিডনির নিকটবর্তী অন্য কোনো অঙ্গের টিউমার, প্রদাহ, পাথর
ইত্যাদি।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
কোমরের ব্যথার জন্য প্রাথমিকভাবে নিচের পরীক্ষাগুলো করা যেতে পারে—
টিসি, ডিসি, ইএসআর, এইচবি
ইউরিন আর/ই
সিরাম ক্রিয়েটিনিন
আলট্রাসনোগ্রাম (হোল অ্যাবডোমেন)।
এক্স-রে কেইউবি
এক্স-রে লাম্বো স্যাকরাল স্পাইন বি/ভি
ওপরের পরীক্ষাগুলোর কোনোটিতে কোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা দেখা গেলে পরবর্তী ধাপের পরীক্ষা ও সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
করণীয়
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও স্বল্পমাত্রার ব্যথার ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। তবে ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি নিলে ভালো কাজ দেয়। মনে রাখতে হবে, মাত্রাতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ সেবন বেশ ক্ষতিকারক, যাতে কিডনি পর্যন্ত বিকল হতে পারে।
পরামর্শ
সমান ও শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।
ভারী জিনিস তুলবেন না এবং ভারী কাজ করবেন না।
সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো কাজ করবেন না।
শরীরের ওজন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।
মেরুদণ্ড বাঁকা করে কোনো কাজ করবেন না বা বসবেন না, সব সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখবেন।
কখনো হাঁটু ভাঁজ করে কুঁজো হয়ে বসবেন না।
চেয়ারে বসার সময় মেরুদণ্ড সোজা করে বসবেন।
কখনোই হাইহিল জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করবেন না
চেয়ারে বসে নামাজ পড়বেন।
টয়লেটে উঁচু কমোড ব্যবহার করবেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ব্যায়াম করবেন।
লেখক: ডা. এ কে এম শাহিদুর রহমান(মেডিক্যাল অফিসার, কিডনি রোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়