মেজবা মিলন।।
‘আমি তো বুড়ো হয়ে যায়নি’ গত বছর বিপিএল শুরু আগে এমন একটি কথা বলেছিলেন টাইগার দলের টেস্ট অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল।বয়স তার এখন ৩৫। এই বয়সে অনেক খেলোয়াড় যখন অবসরে যাওয়ার কথা ভাবে।কিন্তু আশরাফুল ঠিক তার বিপরিত। পাঁচ বছরের নিষধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারো জাতিয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর লড়াইয়ে নেমেছেন এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান।আজ ১৩ই আগস্ট। যে দিনটার জন্য চাতক পাখির মত এতোদিন চেয়ে ছিলেন তিনি। ম্যাচ ফিক্সংয়ের পাঁচ বছরের পাপ মোচন হলো সাবেক এই ক্রিকেটারের।
পাঁচ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অনেক পাল্টিয়ে গিয়েছে। দেশের ক্রিকেট এখন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে তখন দূর থেকেই সেই সাফল্য দেখছন আশরাফুল।হয়তো তিনিও পারতেন এই পথ চলার সঙ্গী হতে কিন্তু ফিক্সংয়ের অভিযোগ সেই পথ চলায় বাঁধা হয়ে গেল।
জাতীয় দলের হয়ে অসাধারণ সব কীর্তি গড়লেও আশরাফুল দর্শকদের কাছে ভিলেন হয়ে উঠেন ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিংয়ের মতো অন্ধকারে পা দিয়ে। হারিয়ে ফেলেন নিজের সব ভালোবাসা ও সম্মান।এক সময় যাকে নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতো বাংলাদেশ।যার খেলার ছন্দে গোটা দেশ ছিলো মাতাল।রাতারাতি সে হয়ে গেল ঘৃণার পাত্র।যাকে সহ্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো টাইগার ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে।
অপরাধে জড়িয়ে পড়ার কথা স্বীকার করার পর থেকে আশরাফুলের প্রতি ঘৃণার মাত্র আরও বেড়ে যায়।তাকে শুনতে হয়েছে অনেক কথা। ছোট হতে হয়েছে অনেকের কাছে।অনেক সময় ধর্য্যের বাধ ভেঙে গিয়েছে। দিয়ালে পিট ঠেকলেও। চোয়ালের দাঁত শক্ত করে সব কিছু সহ্য করেছেন।দিন গুনেছেন নতুন দিনের জন্য।যে দিন বলতে পারবেন আমি মুক্ত।আমি স্বাধীন। আমাকে আর কেউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে বাঁধা দিতে পারবে না।অবশেষে আজ এসেছে সেই দিন।যে দিনটির জন্য দীর্ঘ পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছেন তিনি।আজ থেকে সকলের সামনে মাথা উঁচু করে বলতে পারবে আমি নিষিদ্ধ খেলোয়াড় নয়ই।আমি মুক্ত । আমি এখন থেকে সব ধরণের ক্রিকেট খেলতে পারবো।
আজ থেকে দুই বছর আগে এই দিনেই শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার অনুমতি পান এই ডান হাতি ব্যাটসম্যান।গত দুই মৌসুমে আশরাফুলের পারফম্যান্স বলার মতো। তাঁর উল্লেখযোগ্য পারফম্যান্স ছিল ২০১৭-১৮তে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে লিস্ট এ’তে পাঁচটি সেঞ্চুরি।ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর লিস্ট-এ’তে ২৩ ম্যাচে তার গড় রান ৪৭ দশমিক ২৩। তবে প্রথম শ্রেণীতে খুব ভালো করতে পারেননি। ১৩ ম্যাচে একটি সেঞ্চুরিসহ গড় রান ২১ দশমিক ৮৫। অসাধারণ এই পারফম্যান্স করে সবাইকে চমকে দেন তিনি।
২০১৪ জুন মাসে আশরাফুলকে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় এবং একই সাথে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আশরাফুলের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে করা হয় পাঁচ বছর। যা গণনা শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে।
এখন নিজেকে শতভাগ পরিশুদ্ধ, পরিশীলিত ও পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে যদি প্রত্যাবর্তন করতে পারেন তাহলে আবারো কোটিমানুষের প্রিয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ আশরাফুল, খুব দ্রুতই জায়গা করে নিবেন। ততদিন সেই অপেক্ষায় আশরাফুলভক্তরা।