রায়হান শোভন।।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই নিম্নমুখী হচ্ছে এই খাতের রপ্তানি আয়। যদিও ২০২১ সালের মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা রপ্তানি আয় হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। কিন্তু দিন দিন কমেই যাচ্ছে চামড়ার দাম।
সদ্যসমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১৩৮ কোটি ডলারের বিপরীতে আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২১ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ১২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ডলার।
দেশে ২০১৩ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ৮৫-৯০ টাকা এবং খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০-৫৫ টাকা। ২০১৪ সালে প্রতি বর্গফুট চামড়ায় ১৫-২০ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০-৭৫ টাকা এবং খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫-২০ টাকা কমিয়ে ৩০-৩৫ টাকা। ২০১৫ সালে আরো ২০ টাকা কমিয়ে গরুর চামড়া দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫০-৫৫ টাকা এবং খাসির চামড়ার দাম ১৫ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০-২৫ টাকা। ২০১৬ সালে প্রতি বর্গফুটে ১০ টাকা কমিয়ে গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৫-৫০ টাকা এবং খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০-২২ টাকা।
গত বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামরার জন্য নির্ধারিত মূল্য ছিল ৪০-৫০ টাকা এবং খাসির চামড়ার জন্য ছিল ২০-২২ টাকা। এ বছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা এবং প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮-২০ টাকা।
তবে আমাদের দেশে সব ধরনের পণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। তবে প্রতিনিয়ত কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম। গত ছয় বছরে ক্রমান্বয়ে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। ছয় বছর আগে বিক্রি হওয়া ৯০ টাকা বর্গফুট দরের গরুর চামড়া এবার বিক্রি হবে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায়। সরকার এই দরই নির্ধারণ করে দিয়েছে। এখানেও শর্ত আছে। এই দাম পেতে হলে চামড়ায় লবণ মাখিয়ে দিতে হবে। লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া এবার বিক্রি করতে হবে সর্বোচ্চ ৫০ আর সর্বনিম্ন ৪৫ টাকা। এভাবেই কমছে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম।
কারণ একটাই, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের বিক্রি ও চাহিদা উভয়ই কমে গেছে। এই এক অজুহাত দেখিয়েই দেশের চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির মৌসুম এলেই আহাজারি শুরু করেন। আর সেই আহাজারিতে দুর্বল হয়ে সরকারও দর কমিয়ে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বিডিমর্নিংকে বলেন, আমাদের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের বেশিরভাগ ক্রেতা হচ্ছেন নিম্ন আয়ের এবং এবং নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষেরা। বিশ্বে আর্টিফিশিয়াল লেদারের ব্যবহার বেড়ে গেছে সেজন্য আমাদের চামড়ার চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাই চামড়ার দাম কম।
তিনি আরও বলেন,‘কমপ্লায়ান্স’ বলতে যা বোঝায় তার ধারেকাছেও আমাদের এ শিল্প যায়নি। যার কারণে আমরা আমাদের যে আকাঙ্ক্ষিত মার্কেট সে মার্কেটে পৌছাতে পারিনি।
মহিউদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন, বাংলাদেশি চামড়ার বাজারে মন্দা, ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির দরপতন কিন্তু টাকার দাম বৃদ্ধি, চামড়ার পুরোনো মজুত রয়ে যাওয়া- এসব কারণে এ বছর চামড়ার দর কমিয়ে ধরা হয়েছে।’
এ বিষয়ে কাচা চামড়া ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বিডিমর্নিংকে বলেন, আমরা গত দশ বছর আগে ৩ হাজার কোটি টাকা চামড়া রপ্তানি করেছি। সে হিসাবে এখন এ বছর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রপ্তানি আয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম একেবারে কমে যাওয়ায় এবং আমাদের চামড়া শিল্প নগরীকে শতভাগ দুষণমুক্ত করতে পারেনি বলে আমাদের দেশে বিদেশি ক্রেতারা চামড়া কেনার জন্য আগ্রহী হচ্ছেন না। পাঁচ বছর আগে চামড়ার রপ্তানি মূল্য ছিল দেড় ডলার বর্তমানে তা কমে নেমে এসেছে ১ ডলারে। তাছাড়া চামড়া সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ক্যামিকেলের দাম বেড়ে গেছে তাই দাম কমেছে চামড়ার।
এ বিষয়ে এপেক্স ট্যানারীর এম এ মাজেদ বিডিমর্নিংকে বলেন, হাজারিবাগ থেকে আমাদের চামড়া শিল্পকে সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করা জন্য। কিন্তু সাভারে গিয়েও একই উপায়ে দূষিত হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী।
তিনি বলেন, ট্যানারির চাহিদা অনুযায়ী তৈরী হয়নি সিইটিপি। নিম্নমানের যন্ত্র, প্রয়োজনীয় প্লান্ট না থাকা ও অদক্ষ ঠিকাদারসহ আরও সব অনিয়ম যুক্ত হওয়ায় এই শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে আমি শঙ্কিত । কারণ সাভারের ট্যানারীর যোগাযোগ এবং পরিবেশগত অবকাঠামো ব্যবস্থা অনেক খারাপ। আর যে কারণে বিদেশি ক্রেতারা আমাদের দেশ থেকে চামড়া ক্রয়ে আগ্রহী হচ্ছেন না।