আসাদুল্লা লায়ন-
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি লেকের পরিবেশ দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। আশপাশের এলাকার ময়লা লেকের কয়েকটি পয়েন্টে জমা করে প্রক্রিয়া করণের কাজ চলছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে লেকের পানিতে অবাধে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। প্লাষ্টিক, রাবার জাতীয় বর্জসহ বিভিন্ন ধরণের ময়লা ফেলার কারণে খুব দ্রুত পানি দুষিত হয়ে এর রঙ পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও।
রবিবার(১২ আগষ্ট) দুপুরে ঢাকা দক্ষিন সিটি কপোরেশন(ডিএসসিসি) এর আওতাধীন ধানমন্ডি লেকে ঘুরে পানি দুষণের এমন পরিস্থিতি লক্ষ করা যায়।
উল্লেখ্য, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা ঘিরে বিসর্পিল আকারে এটি প্রবাহিত এ লেকটি প্রাথমদিকে কাওরান বাজার নদীর একটি পরিত্যক্ত খাল ছিল যা তুরাগ নদীর সাথে মিলিত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে উন্নয়ন প্রকল্পে ১৬% লেকের জন্য বরাদ্ধ রেখে ২৪০.৭৪ হেক্টর জমিতে ধানমন্ডি লেকের আশেপাশের এলাকাকে আবাসিক এলাকা হিসেবে উন্নীত করা হয়েছিলো।
বিশ্বের নবম বৃহত্তম এবং সর্বাপেক্ষা জনবহুল শহরগুলির মধ্যে অন্যতম এ ঢাকায় প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। অবকাঠামোগতভাবে এগিয়ে থাকলেও খেলার মাঠ এবং পরিবেশের দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকা এ শহরের মানুষ একটু সস্তি পেতে বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, ও লেকে ভিড় জমান তার মধ্যে ধানমন্ডি লেক অন্যতম।
ধানমন্ডি ও এর আশপাশের এলাকার মানুষজন প্রতিদিনই এই লেকে সময় কাটিয়ে থাকেন। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে চোখে পড়ে দুর দুরান্ত থেকে আসা দর্শনাথীদের উপচে পরা ভিড়। অন্যদিকে বিশেষ দিবসগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো এখানে বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে। কিন্ত বর্তমানে সঠিক ব্যাবস্থাপনার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এর পরিবেশ ফলে আগ্রহ হারাচ্ছে ঘুরতে আসা মানুষজন।
লেকে ঘুরতে আসা আব্দুল আলিম জানান, লেকের পানি আগের চেয়ে অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি প্রায় সময়ই এখানে ঘুরতে আসি। লেকে বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে পরিবেশ এর উপর এখনি গুরত্ব দেওয়া উচিত। যারা লেকের বিভিন্ন স্থানে পানিতে ময়ল ফেলে থাকে। তাদের সচেতন করা দরকার। এছাড়া সিটি কপোরেশনের তৎপরতা বাড়ানো খুবিই প্রয়োজন।
রবিবার দুপুরের ছবি -বিডিমর্নিং
বিজিবি উত্তর গেট থেকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই লেকটির বিভিন্ন স্থানে পানিতে ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। এর ফলে প্রতিনিয়তই দুষিত হচ্ছে লেকের পানি। এছাড়া বছরের পর বছর ধরে লেকের ধারে একাধিক পয়েন্টে সিটি কপোরেশন বর্জ ব্যাবস্থাপনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত ময়লা ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে এখানে বেড়াতে আশা দর্শনার্থীদের। অন্যদিকে লেক হাড়াচ্ছে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য।
এর মধ্যে কলাবাগান ক্লাবের পেছনের পানিতে অনেকদিন ধরেই জমে আছে ময়লার স্তুপ। এদিকে ১৩’এ রুটে ব্রিজের পাশে ও ১১ নম্বর রুটের পাশ দিয়ে লেকের যে অংশ প্রবাহিত তাতে বর্তমানে যেভাবে প্লাষ্টিকজাতীয় বর্জসহ নানা ময়লা অবাধে ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে এর রঙ পরিবর্তিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এখান থেকে ৩২ নম্বার এর বাস স্টপ পর্যন্ত লেকের দুই ধারে যেভাবে ময়লা ফেল হয় তাতে কিছুদিন পর পথচারীদের চলাচল কঠিন হয়ে পরবে।
লেকের ব্যায়ামাগারে পেছন দিয়ে ধানমন্ডি ১২’এ এর যে সড়কটি তার অর্ধেকটা জায়গা জুড়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে সিটি কপোরেশনের বর্জ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম। এর ফলে ব্যায়ামাগার থেকে রবীন্দ্রসরবর মুখী লেকের একপাশ দিয়ে চলাচলে অনেকটাই অসস্তিতে পরতে হয়।
এছাড়া রবীন্দ্র সরবরের উল্টোপাশে ৭ নম্বর সড়কের পাশে, ধানমন্ডি ২ নম্বর রুটের লেক রুটের পাশের জায়গাসহ প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ লেকের বিভিন্ন প্রান্তের পানিতে ময়লা ফেলা, ময়লা প্রক্রিয়া করণের কাজসহ নানাভাবে ব্যাবহারের যেনো প্রতিদিনের চিত্র।
লেকের পরিবেশ প্রতিনিয়তই অবনতি হচ্ছে অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তামিম আইমান বলেন, সময় পেলেই আমরা লেকে ঘুরতে আসি। পানিতে ময়লা ফেলার কারণে এর পানি ও পরিবেশ দিন দিন নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে এখনি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
সাংস্কৃতিককর্মী মো: ইলিয়াস হায়দার বলেন, ধানমন্ডি লেকে যেভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলে এর পানি নষ্ট করা হচ্ছে তাতে এর পরিবেশ একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতেই অব্যবস্থাপনায় রয়েছে তারপর লেক ঘেঁষেই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন বা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মান করা হচ্ছে।এই এসটিএস এর কারণে লেকের পরিবেশের উপর ব্যাপক প্রভাব পরবে। আমি এই কার্যক্রম দ্রুত অনত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
রবিবার দুপুরের ছবি -বিডিমর্নিং
লেকের পরিবেশ ও নির্মানাধীন এসটিএস নিয়ে জানতে চাইলে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসাইন স্বপন বিডিমর্নিংকে বলেন, অত্র এলাকার ময়লা এখানে জমা করে তা এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ময়লা সিটি কর্পোরেশনের লোকজন প্রতিদিনই পরিষ্কার করেন। তবে প্রতিদিনই দিনই শতভাগ পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। নির্মানাধীন এসটিএস নগরবিদদের করা পরিবেশ বান্ধব মডেলে করা হচ্ছে, এছাড়া পরিবেশবাদী ও সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্তেই এটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটা ধানমন্ডি লেক ও আশপাশের পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলবে না সেভাবেই ডিজাইন করে তৈরি করা হচ্ছে।
লেকে পানি দূষণ নিয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বিডিমর্নিংকে জানান, লেকের পানি বর্তমানে যেমনটা আছে এটা অবশ্যই মনিটরিং করে এর সঠিক পরিচর্যা করা দরকার, এর দায়িত্ব সিটি কপোরেশনের। আমরা লেকের পানি ও এর পরিবেশ নিয়ে যথাযথভাবে মনিটরিং করতে সিটি কপোরেশনকে নানাভাবে আহ্বান জানিয়েছি। আমরা বিভিন্ন সময়ে এর পানি পরিক্ষা করে জনসাধারনকে সচেতন করেছি।