Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পাকিস্তানের নতুন সামরিক ড্রোন শাহপার কতটা শক্তিশালী?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২২, ১১:০৬ AM
আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২২, ১১:০৬ AM

bdmorning Image Preview


দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের কাছে যেসব ড্রোন ছিল সেগুলো কেবল নজরদারির জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু করাচিতে চলমান অস্ত্র প্রদর্শনীতে পাকিস্তানের অস্ত্র প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো প্রথমবারের মতো এমন ধরনের ড্রোন প্রদর্শন করেছে, যা আক্রমণ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। 

করাচিতে অস্ত্র প্রদর্শনী চার বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রধান এতে অংশ নিয়েছেন।

১৮ নভেম্বর শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীতে চীন ও তুরস্ক ছাড়াও আরও অনেক দেশের কোম্পানি অংশ নিয়েছে।  

ড্রোনে আত্মনির্ভরশীলতা: পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় মার্কিন ড্রোন বিমান যখন উগ্রপন্থীদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে, তখনই পাকিস্তানের মানুষ ড্রোনের সাথে পরিচিত হন।  

যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানি এলাকায় বেশ কয়েকটি ড্রোন হামলা চালায় এবং এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।  

নজরদারি ড্রোনের (গুপ্তচরবৃত্তির জন্য গোয়েন্দা ড্রোন) মাধ্যমে ড্রোনের জগতে প্রথম পা রেখেছিল পাকিস্তান। 

নজরদারির জন্য ব্যবহৃত এই ড্রোনগুলো আগের অস্ত্র প্রদর্শনীতে দেখা গিয়েছিল।

পাকিস্তান সরকারের কোম্পানি গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ডিফেন্স সলিউশনের (জিআইডিএস) সিইও আসাদ কামাল বলেন, পাকিস্তান সরকার তাকে পরিষ্কারভাবে বলেছিল যে, পাকিস্তান যে প্রযুক্তির জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল, তা ধীরে ধীরে পাকিস্তানে বিকশিত করতে হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।  

২০১৮ সালে সর্বশেষ প্রদর্শনীতে বরাক নামের একটি নজরদারি ড্রোন বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়, এর কাজ ছিল শুধু ভিডিও তৈরি করা এবং হাই রেজুলেশনের ছবি তোলা।

আসাদ কামাল বলেন, এরপর আমরা আমাদের পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করি। আমাদের সেনাবাহিনীরও প্রয়োজন ছিল যে তারা কেবল লক্ষ্যবস্তুটি দেখতে পাবে না, এটি ঘিরে ফেলবে এবং যদি তারা চায় তবে এটি ধ্বংস করতে পারে এমন ড্রোন। এরপর আমরা শাহপার-২ ড্রোন নিয়ে গবেষণা ও কাজ করেছি।

আসাদ কামাল বলেন, যখন আপনি কোনো প্রযুক্তি অন্য দেশ থেকে পান এবং কয়েক দিন পরে সেই দেশ আপনাকে প্রযুক্তি দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তখন আপনার পণ্যটি অসম্পূর্ণ থাকে এবং তারপরে আপনি এটি নিজে ব্যবহার বা পুনরুদ্ধার করতে পারবেন না। তাই এই ড্রোনের প্রাথমিক প্রযুক্তি তৈরি হয়েছে খোদ পাকিস্তানেই। 

শাহপার-২কে বলা হচ্ছে পাকিস্তানের ফ্ল্যাগশিপ ড্রোন; যা এখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে।  

পাকিস্তান সরকার এই ড্রোন অন্য দেশের কাছে বিক্রিও করতে চায়।

আসাদ কামাল ব্যাখ্যা করেন, শাহপার-২ এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে পারে এবং এর লক্ষ্যবস্তুতে প্রবেশ করতে পারে। এই ড্রোনটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, দিন বা রাতের যে কোনও অপারেশনে সফল এটি। ড্রোনটি লেজার ব্যবহার করে লক্ষ্য স্থির করে এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম। 

শাহপার-২ ঘণ্টায় ১২০ নটিক্যাল মাইল (নটস) পর্যন্ত গতিতে উড়তে পারে। এর টেক-অফ স্পিড ৮০ নটিক্যাল মাইল থেকে ৮৫ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত। এর ক্রুজ গতিও ৮০-৮৫ নট। 

এর ডাটা লিংক রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার। এই ফাইটার ড্রোনটি উড্ডয়নের সময় তার ইঞ্জিন পুনরায় চালু করার ক্ষমতাও রাখে।

জিআইডিএসের অন্যান্য ড্রোনের মধ্যে রয়েছে শাহপার-১, ইকাব; এগুলো অস্ত্র বহনে সক্ষম। 

আবাবিল ড্রোন সিরিজ: এর আগে পাকিস্তানের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি আবাবিল নামে একটি নজরদারি ড্রোন তৈরি করেছিল। এখন এই ড্রোনগুলোকেও প্রাণঘাতী করে তোলা হয়েছে এবং সেগুলোও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে।

পাকিস্তানের উপজাতি এলাকায় স্থানীয় মানুষ ড্রোনের নাম রাখেন আবাবিল। 

পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ড্রোন ইউনিটের প্রধান রিয়াজ আহমেদ বলেন, আবাবিল সিরিজের এই ড্রোনগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং এই সব ড্রোন দিন ও রাতে অভিযান চালাতে সক্ষম। 

তিনি বলেন, আবাবিল ফাইভ ড্রোনটি পাঁচ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে এবং এতে দুটি মর্টার শেল লোড করা যায়। একটি মর্টার ১৬ মিলিমিটার এবং অন্যটি ১৮ মিলিমিটার। এর গতিবেগ ঘণ্টায় পঁয়তাল্লিশ কিলোমিটার। এই ড্রোনটি বাতাসে দেড় ঘণ্টা উড়তে পারে। 

আবাবিল ভি-৫ উপস্থাপনের সময় তিনি বলেছিলেন যে এটি উল্লম্বভাবে উড্ডয়ন করতে পারে এবং যে কোনও জায়গায় অবতরণ করতে পারে। এটি একটি উচ্চগতির ড্রোন যা ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে এবং দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এটির স্টোরেজ ক্ষমতাও রয়েছে এবং এটি পাঁচ কিলোগ্রাম পর্যন্ত গোলাবারুদ বহন করতে পারে। 

আবাবিল-১০ ড্রোনটি ১০ কেজি ওজনের অস্ত্র বহন করতে পারে। এর পাল্লা ৩০ কিলোমিটার এবং এটি ৩০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে।  

পাকিস্তানে তুষারাবৃত এলাকা এবং মরুভূমি, সমুদ্র এবং সমভূমি রয়েছে। জিআইডিএসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদ কামাল বলেন, যুদ্ধ আবহাওয়া বা এই অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে না। 

তিনি বলেন, পাকিস্তানের সামরিক চাহিদা খুবই শক্তিশালী এবং আমাদের মাইনাস ডিগ্রি থেকে শুরু করে মরুভূমির গরম তাপমাত্রা পর্যন্ত এলাকা রয়েছে। সুতরাং আমাদের সেনাবাহিনীতে কোনো অস্ত্র যুক্ত হওয়া মানে এটি বিশ্বের যে কোনো সেনাবাহিনীতে যুক্ত হতে পারে।  

পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির মুখপাত্র সালমান খান বলেন, নতুন প্রযুক্তিটি দুইভাবে পরিমাপ বা পরীক্ষা করা হয়। একটি হচ্ছে, যারা এসব অস্ত্র ব্যবহার করে, তাদের কী প্রয়োজন। অস্ত্র প্রস্তুতকারক এবং ব্যবহারকারী উভয়ই যৌথভাবে এটি মূল্যায়ন করে এবং এটি প্রযুক্তিগতভাবে পরীক্ষা করা হয়।
 
চলমান  অস্ত্র প্রদর্শনীতে তুর্কি ড্রোনও প্রদর্শন করা হয়েছে। এই ড্রোনগুলো তুরস্কের সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি তার মিত্ররাও ব্যবহার করে।

এছাড়াও চীনের অনেক ধরনের ড্রোন ও নতুন অস্ত্রও প্রদর্শিত হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে নতুন ড্রোনের মডেল। চীনের ড্রোনগুলো অনেক ধরনের অস্ত্রে সজ্জিত হতে পারে।

পাকিস্তান বিশ্বের অন্যতম দেশ যারা সামরিক অস্ত্র তৈরি করে, বিক্রি করে এবং ক্রয় করে।

জিআইডিএসের সিইও আসাদ কামাল জানিয়েছেন, তিনি ১৬টিরও বেশি দেশে পাকিস্তানে তৈরি অস্ত্র রপ্তানি করেছেন।

পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি জানিয়েছে, তাদের আবাবিল সিরিজ খুব শিগগিরিই পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করা হবে এবং কিছু বিদেশি প্রতিনিধিও এ ড্রোন নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।

পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির এক মুখপাত্রের মতে, তারা ৪০টিরও বেশি দেশের কাছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে।

Bootstrap Image Preview