Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কে এই মরিয়ম মান্নান? সবার চোখে ছিলেন রহস্যপূর্ণ!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫৭ PM
আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫৮ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


গত কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হইচই মরিয়ম মান্নানের মায়ের ‘নিখোঁজ’ হওয়া নিয়ে। মরিয়ম নিজেই দিয়ে আসছিলেন নানা আপডেট। একপর্যায়ে মায়ের মৃত্যুর খবর জানিয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দেয়া হয়। এবার সেই আইডি থেকেই দেয়া হয়েছে মায়ের বেঁচে থাকার খবর।

প্রথমদিকে যারা মরিয়মের মায়ের খোঁজের আন্দোলনে এই মাধ্যমে লাইক, কমেন্টে শেয়ার করে ভার্চুয়ালি সঙ্গে ছিলেন, এখন তাদের অনেকেই মরিয়মের পোস্টে বিরূপ মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, ‘আবেগ ফেরত চাই’।

এ নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর ‘ক্ষেপেছেন’ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী মরিয়ম মান্নান। সাংবাদিকদের বিষোদগার করে ‘দালাল’ আখ্যা দিয়ে মায়ের জন্য করা আন্দোলনের জন্য যে চোখের জল পড়েছে তার দাম চেয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে।

চার বছর আগেও কোটা আন্দোলনে পুলিশি হেফাজতে নিজের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন মরিয়ম মান্নান। সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে ভাইরাল হন এই শিক্ষার্থী। তখন মরিয়ম তার দাবির পক্ষে জোরালো যুক্তি দিতে পারেননি বলে দাবি পুলিশের।

তখন তার একটি ছবি বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলো।  সে সময় তিনি তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহীদ মিনারে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসেন।

সে সময় মরিয়ম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনার জানতে চান ওই দিন তারা আমার কোথায় কোথায় হাত দিয়েছিল? কি বলে ছিল?আপনাদের শুনতে ইচ্ছে করতেছে, আমাকে কোথায় কোথায় ধরছে? আমাকে কীভাবে কী করছে? সবাই আমাকে ফোন দিচ্ছে, তোমাকে কী করছে! এখন আমি লাইভে যাব? লাইভে যেয়ে বলব, আমাকে কী করছে? কেমন করে ধরছে? আমি কান্না করব আর সবাই আমাকে সিম্প্যাথি (সহানুভূতি) দেখাবে?'

তিনি বলেন, 'সিম্প্যাথি দেখানোর মেয়ে আমি না। আমি একটি যৌক্তিক আন্দোলনে আসছি। একজন মানুষ হিসেবে আমার কিছু অধিকার আছে। এখানে আসার অধিকার আমার আছে।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর বিরোধীদের হামলার সময় তিনি এগিয়ে যান মার খাওয়া মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্যে। উল্টো তিনি হন লাঞ্ছনার শিকার। কীভাবে তাকে অপমানিত করা হয়েছিল। জানান, কীভাবে প্রথমে তাকে লাঞ্ছিত করেছিল হামলাকারীরা, পরে পুলিশ সদস্যরা।

তিনি বলেন, ‘যখন দেখি ফারুক ভাইকে মারছে তখন আমি ভিড়ের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম তাকে রক্ষা করার জন্য। যাওয়ার পর যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা ভিডিওচিত্রে আপনারা দেখছেন। তার পুরোটা ভাষায় বলা সম্ভব না।’

সেই পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে মরিয়ম বলেন, ‘ওরা (লাঞ্ছনাকারীরা) যখন বলেছিল থানায় নিয়ে চল, মনে হয়েছে যে থানায় নিয়ে গেলে আমি সেফ। কিন্তু, মনে হলো থানা আমার জন্য সেকেন্ড জাহান্নাম।’

মরিয়ম বলেন, ‘আমি সিএনজিতে উঠেছিলাম বাসায় যাওয়ার জন্য। সেই সিএনজিটা ঘিরে ধরেছিল অন্তত ২০০ মোটরসাইকেল। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারা আমার ফোন-ব্যাগ নিয়ে যায়।’ আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। (আমাকে) ধাক্কাচ্ছে।

লাঞ্চনার শিকার এই শিক্ষার্থী বলেন, তারা সিএনজির ভেতরেও ঢুকছে। তারপরে কী করছে, এগুলোও বলবো? কীভাবে কীভাবে আমাকে টাচ করছে? আমাকে বলছে, আমি বেশ্যা। এরপরে আমাকে নিয়ে গেল শাহবাগ থানায়।

মরিয়ম বলেন, তখন মনে হয়েছে থানা আমার জন্য সেফ। কিন্তু থানায় যেয়ে মনে হল থানা আমার জন্য এটি সেকেন্ড জাহান্নাম। কিন্তু তারা (পুলিশ) যে আচরণ করেছে তা ভয়াবহ।

তিনি বলেন, তার ব্যাগে ছিল একটি পানির বোতল ও দুইটা মেকআপ বাক্স। অথচ পুলিশ আমার ব্যাগ থেকে বের করলো একটা ছুরি’ বলেন লাঞ্ছনার শিকার ওই শিক্ষার্থী।

মরিয়ম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, 'অনেকখন ধরে একটা মেয়ে কনস্টবল আমার পাশে বসা। সে আমাকে বারবার ওই ছবিটা দেখানোর চেষ্টা করতেছে। আজকে আমি তাদেরকে (আন্দোলনকারীদের) বাঁচাতে গিয়েছি বলে আমার এই অপরাধগুলো হইছে? তারা আমাকে স্বীকার করাচ্ছে, কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক গোপন খবর আমি জানি। তাদেরকে তা দিতে হবে! না হলে ফারুককে কেউ বাঁচাতে গেল না, আমি কেন গেলাম? একটা কুকুরকে এভাবে মারলেও তো মানুষ যায়, সেখানে একটা মানুষকে মারছে, আমি যাব না?'

তিনি বলেন, তারা বলল, আমি ইয়াবা খাই। আমাকে জোর করতেছে বলতে যে, আমি ইয়াবা খাই। আমি নেশা করি। আমি বললাম, আমার ব্যাগটা তারা নিয়ে গিয়েছিল। আমার ব্যাগে কিচ্ছু ছিল না, ছিল ওয়াটার পট আর দুটো মেকাপ। মানসিকভাবে টর্চার তো করেই যাচ্ছে, স্বীকার করানোর জন্য যে, আমি নেশা করি আর ওই জিনিসগুলো আমার।

মরিয়ম বলেন, 'আমাকে আর ছাড়ছে না , রাত ১১টা বাজে, ১২টা বাজে। রাত ১টার দিকে আমার বাসা থেকে লোক আসলো। আসার পরে বলল, এত রাতে একটা মেয়ে, ওকে ছেড়ে দেন। আমার দুলাভাই আবার পুলিশে চাকরি করে। সে ফোন দিয়েছিল। আমার সামনে তাকে বললো, আপনার শালী তো একটা বেয়াদব। আপনি পুলিশে চাকরি করেন বলে ছেড়ে দিলাম। ফোনটা রাখার পরে বলল, দুলাভাই যদি পুলিশ না হত। আজকে বেশ্যা বলে কোর্টে চালান করে দিতাম।

সে ঘটনার চার বছর পর মাকে জড়িয়ে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাটিও সারা দেশে সৃষ্টি করেছে রহস্যের ধূম্রজাল। অনেকে মনে করছে চার বছর আগের ঘটনারই কি পুনরাবৃত্তি?

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা শান্তা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে পুরো বিষয়টির সমালোচনা করেছেন। বিষয়টিকে তিনি ওয়েব সিরিজের সঙ্গে তুলনা করে লিখেছেন, ‘সাবস্ক্রিপশন ছাড়াই একটা থ্রিলার ওয়েব সিরিজ দেখে ফেললাম। আপনার এহেন কাজ হাজার হাজার অভিযোগ সন্দেহের চোখে হাল্কা হয়ে যাবে। অভিনন্দন আপনাকে এতো সুন্দর অভিনয় করার জন্য। এখন আমার প্রশ্ন আপনার মা আসলেই এতদিন কোথায় ছিলেন? এতদিনের আত্নগোপনের এতো নিরাপদ জায়গা কোথায়?’


রুয়েল মাহমুদ নামে এক ছাত্রলীগ নেতা মরিয়মের গত প্রায় এক মাসের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে এই একটা মেয়ে মরিয়ম মান্নানকে দেখেছি যে তার মাকে হারানোর পরেও অনলাইনে দফায় দফায় প্রোফাইল পিকচারে তার কান্নার ছবি দিতো! এক অজ্ঞাত মহিলার লাশকে খুব কনফিডেন্টলি তার মা বলে দাবি করলো! ইভেন তখন ওই লাশের কাছে থাকাকালীন সময়েও তাকে নিয়ে যেই পোস্ট করেছে সেখানে সে কমেন্টস করছে রিপ্লে দিচ্ছে!! কীভাবে সম্ভব ২৭ দিন পর মায়ের লাশ (তার ভাষ্যমতে) পেয়েও এভাবে অনলাইনে এতো এক্টিভ থাকা? আচ্ছা যাই হোক, উনি নাকি ওনার মাকে চিনতে ভুল করেননি! করবেনও না!  তাহলে এখন কীভাবে তার মাকে জীবিত অক্ষত উদ্ধার করা হলো? সব যেনো কেমন  রহস্যময়!!

এদিকে, মরিয়ম মান্নানের ফেসবুক পেজে দেয়া তার নিজের স্ট্যাটাসে সিলেটের বাসিন্দা মিথুন দত্ত মন্তব্যের ঘরে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি মন্তব্যে লিখেন, ‘মেরিল প্রথম আলো শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে রয়েছে আপনার জন্যে পরিবেশ বান্ধব ২টা গাছ, ১টা কামাল সাবান।’  


একই স্ট্যাটাসের মন্তব্যের ঘরে তরুণ তালুকদার নামে অপর একজন লিখেছেন, ‘আমি সবসময় একজন কোরিয়ান থ্রিলার পরিচালকের ভক্ত ছিলাম। সেটা হচ্ছে Bong Joon-ho। ভদ্রলোক মস্তিষ্ক নিয়ে খেলতেন। আমি ভাবতাম বাঙালি এমন পরিচালক হতে পারে না। আমার ইচ্ছেটা আজ পূরণ হলো। আজ আমি মরিয়মের ভক্ত। এই দুষ্ট মেয়েটা শুধু ইমোশন নিয়ে খেলে।’


নিশাত তামান্না মুন নামে এক নারী মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘আপনি বড় ভয়ংকর। মায়ের লাশ পেয়েছেন এটা জানার পরেও যে অনলাইনে থেকে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমার একটু সন্দেহ হয়েছিল যে এই অবস্থায় মানুষ অনলাইনে থাকে কীভাবে????????আবার আপনার আইডির প্রোফাইল পিকচার আপনি এটা দিছেন কেন? তখনও সন্দেহ হয়েছিল ভাই, ভয়ংকর অভিনয় ভাই রে ভাই।’


মাদারীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সায়মা ইসলাম জান্নাত অনেকটা রসিকতা করে তার আবেগ ফেরত চেয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বইন এতদিন জানতাম আমার এক্স দুনিয়ার সেরা অভিনেতা, এখন দেখি তুই তার থেকেও বড় পল্টিবাজ???? এতদিন এই কাহিনী সত্যি ভেবে কত খারাপ লাগছে আহারে..... আমার আবেগ ফেরত দে????????।’

মাহবুব হাসান নামে একজন মন্তব্য করে লিখেছেন, ‘নেটফ্লিক্স আরও একটা গল্প পেয়ে গেল, movie name: The mom return।’

Bootstrap Image Preview