রাজধানীতে ডিজে দম্পতি সাদমান সাকিব ও তাসফিয়া জাহান নীলা হত্যার ৪ বছর পর স্বীকারোক্তি দিয়েছে আসামিরা। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া ডিজে রিফাত ও মারফি সিআইডির কাছে এ হত্যাকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তারা কৌশলে সাকিব-নীলাকে অতিরিক্ত মাদক সেবন করিয়ে অসুস্থ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় বলে জানিয়েছে।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়েও দম্পতিকে সহযোগিতা না করার কথাও স্বীকার করেছে তারা। এছাড়া এতদিন তারা সাকিবের পরিচিতি ব্যবহার করে সারা দেশে ডিজে পার্টিতে অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা করেছে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দুই অভিযুক্ত জানায়, ডিজে দম্পতি সাদমান সাকিব ও তাসফিয়া জাহান নীলাকে একটি ঘরোয়া পার্টিতে অতিরিক্ত মাদক নিতে বাধ্য করেছিল তারা। অতিরিক্ত মাদক সেবন করিয়ে তাদের বাসায় রেখে ওই তিনজন রাতে চলে যায়। অসুস্থ হয়ে সাকিব-নীলা পরদিন তাদের সহযোগিতা চাইলেও তারা এগিয়ে আসেনি। এরপর সাকিব-নীলা বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পরিবার ও স্বজনরা যখন তাদের উদ্ধার করে। ততক্ষণে আর কিছুই করার ছিল না চিকিৎসকদের।
গত ৩০ আগস্ট দুই ডিজে রিফাত ও মারফিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেয় সিআইডি। পরে গত ১ সেপ্টেম্বর তারা দুজন আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দেয়।
২০১৮ সালে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান সেই সময়ের জনপ্রিয় ডিজে (ডিস্ক জকি) দম্পতি সাকিব-নীলা। পরে হাসপাতাল থেকে দেওয়া সনদে তাদের মৃত্যুর কারণ লেখা হয়- ‘হার্ট ফেল বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু’। তবে হঠাৎ দুজন সুস্থ মানুষ এভাবে মারা যাওয়ায় জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের।
এ ঘটনার একমাস পর ডিজে সাকিবের বাবা মাসুদুর রহমান (৪৮) প্রথমে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তাকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেয়। পরে তিনি ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় সাকিবের বন্ধু ও ছোট ভাই ডিজে মারফি, ডিজে শুভ ও ডিজে রিফাতকে। পরে আদালতের নির্দেশে ঘটনার ৮৪ দিন পর মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মামলাটি প্রথমে খিলগাঁও থানা পুলিশ তদন্ত করে। প্রায় দুই বছর তদন্তের পর সব আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসাআই) বিজন কুমার বিশ্বাস।
পরে মামলার বাদী সাকিবের বাবা মাসুদুর রহমান ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেন। এরপর আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০২১ সালের ১ অক্টোবর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। বর্তমানে সিআইডি মামলা তদন্ত করছে।
কৌশলে পার্টির আয়োজন
২০১৮ সালে মারফি উচ্চমাধ্যমিক পাস করে। এ জন্য সে সবাইকে খাওয়াতে চায়। পরে ১৯ জুলাই রাতে পার্টির আয়োজন হয় সাকিবের স্ত্রীর বনশ্রীর বাসায়। রাত ৯টা থেকে শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত চলে পার্টি। সেখানে সাকিব-নীলা দম্পতিসহ অংশ নেয় তখনকার উদীয়মান ডিজে মারফি, ডিজে শুভ ও ডিজে রিফাত। তারা সাকিবের সহযোগী হিসেবে কাজ করত।
সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ‘পার্টিতে মদ ও মাদক নিয়ে আসে ডিজে শুভ। তারা রাতে পার্টিতে বিভিন্ন খাবারের পাশাপাশি মদ ও মাদক সেবন করে। তবে ওই তিন ডিজে কম সেবন করে। কৌশলে বিভিন্ন কথা বলে ও প্রলুব্ধ করে সাকিব ও নীলাকে অতিরিক্ত মদ সেবন করানো হয়। এ ছাড়া মদের সঙ্গে ইয়াবা সেবন করানো হয় তাদের। ২০ জুলাই ভোরে মারফি, শুভ ও রিফাত চলে যায়। এদিকে অসুস্থ হয়ে পড়ে সাকিব ও তার স্ত্রী নীলা।’