ক্লাসে পাঠ্যবই না আনায় কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে ছাত্র। এ জন্য ছাত্রকে বেত্রাঘাত করেন শিক্ষক। ঘটনাটি গড়িয়েছে থানা পর্যন্ত। এক সপ্তাহ পর শিক্ষকের নামে মামলা করেছে ওই কলেজছাত্র।
ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহ নগরীর রয়েল মিডিয়া কলেজে। বৃহস্পতিবার শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর দেয়া লিখিত অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছে পুলিশ।
ওই শিক্ষার্থীর নাম আসিফ ইকবাল শাওন। সে ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিক্ষকের নাম ইমরুল হাসান সিদ্দিকী। তিনি একই কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট সকালে একাদশ শ্রেণির বাংলা ক্লাস চলছিল। এ সময় কে কে ব্যাকরণ বই আনেনি জানতে চান শিক্ষক ইমরুল হাসান। তখন আসিফ নামের ওই ছাত্র বই আনেনি জানালে শিক্ষক তাকে বেত দিয়ে পেটান। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষকের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয় আসিফ। বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ হয়েছে।
শিক্ষক বলছেন, ক্লাসে বই না আনার কারণ জানতে চাইলে ওই ছাত্র অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তাই তাকে শাসন করতে বেত দিয়ে মারা হয়েছিল। যদিও ওই ঘটনায় ছাত্রের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়াও তার বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা ছেয়েছিলেন তিনি।
শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার কারণ জানতে চাইলে আসিফ বলেন, ‘কলেজে ওই শিক্ষকের লেখা একটি ব্যাকরণ বই পাঠ্য হয়েছে। কোনো শিক্ষার্থী বইটি না কিনে থাকলে ভয়ভীতি দেখানো হয়। সেই সঙ্গে ক্লাসে এসে মা-বাবাসহ গালাগাল করেন তিনি।
গত ৩১ আগস্ট ক্লাস চলাকালে শিক্ষক আবারও জানতে চান কে কে বই আনেনি। একপর্যায়ে যাদের বই নেই তাদের গালাগালি করে শ্রেণিকক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর সবাইকে বসিয়ে দিলেও আমাকে বেত দিয়ে ১৫ থেকে ২০টি আঘাত করে নানা কথা বলে অপমান করেন। পরে বাধ্য হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে শিক্ষক ইমরুল হাসান বলেন, ‘বই পাঠ্য করেছে কর্তৃপক্ষ। বই যদি কেউ না আনে তবে জবাব চাওয়া যেতেই পারে। এ জন্য ওই ছাত্র অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। ফলে ছাত্রকে শাসন করতেই বেত দিয়ে গায়ে কয়েকটি আঘাত করা হয়।’
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি মামলা পর্যন্ত গড়াবে কল্পনাও করিনি। ঘটনাটি ভিন্ন খাতে যাচ্ছে ভেবে ওই ছাত্রের কাছে দুঃখ প্রকাশ ছাড়াও তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমাও চেয়েছি। কিন্তু মামলাটি তুলে নেয়া হয়নি।’
মামলার ঘটনা তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে হয়েছে বলে মনে করেন রয়েল মিডিয়া কলেজের অধ্যক্ষ স্নেহাশীষ চন্দ্র দে। তিনি বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে ওই শিক্ষক শুধু বলেছিলেন কেন বই আনা হয়নি। এতে ছাত্র বেয়াদবি করেছিল। একজন ছাত্রকে শিক্ষক শাসন করতেই পারেন। এ জন্য মামলা করতে হবে, তা ভাবতেও অবাক লাগে। এটা হয়েছে তৃতীয় কারও ইন্ধনে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটির তদন্ত চলছে। দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’