Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

সমকামী যুগলও পরিবার, রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৫২ AM
আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৫২ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


এ রায়ের পর সমকামী যুগলও কীভাবে উপকৃত হবে বা তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েই বা কী ভাবছে? তাদের সঙ্গে কথা বলে জানল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। সুপ্রিম রায়ে সমকামী যুগলও পরিবার, স্বপ্নপূরণ নিয়ে কী বলছে শহরের কুয়ের সমাজ? নানা প্রশ্ন, নানা স্বপ্ন, নানা আশা-আকাঙ্খার মধ্য দিয়ে প্রতিদিন এগিয়ে চলেছে তারা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

গত ২৮ আগস্ট একটি মামলায় যুগান্তকারী রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। রায় অনুসারে এবার থেকে কোনও পরিস্থিতিতে পারিবারিক কাঠামোর পরিবর্তন হতেই পারে এবং দুই অবিবাহিত মানুষ, সমকামী যুগলকে নিয়েও এই পরিবার তৈরি হতে পারে। এহেন রায়ের পর কলকাতার কুয়ের গোষ্ঠীর বক্তব্য কী? কেমন আছে তারা? এ রায়ের পর তারা কীভাবে উপকৃত হবে বা তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েই বা কী ভাবছে? তাদের সঙ্গে কথা বলে জানল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।

কলকাতার প্রাইড ওয়াকে কতজন মানুষ অংশগ্রহণ করেন প্রতি বছর? সমকামী মানুষের সংখ্যা কত? বা কলকাতার কুয়ের গোষ্ঠীতে কতজন মানুষ আছেন? এই পরিসংখ্যানগুলো কি এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আদৌ জানা সম্ভব?  এ বিষয়ে অনিন্দ্য হাজরা কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়ে বলেন, “এরকম কোনও সংখ্যা বলা সম্ভব কি? এমন কোনও সমীক্ষাও হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। কয়েকজন সাহস করে সামনে আসতে পেরেছেন কিন্তু অনেকেই এখনও অন্তরালে আছে। সেদিক থেকে দেখলে কি পরিসংখ্যানটা দেওয়া যাবে এই মুহূর্তে? আজকে সুপ্রিম কোর্টের পরিবার সংক্রান্ত রায়ের পর কলকাতায় যদি একটাও কাপল থাকে তাহলে কি তারা বঞ্চিত হবে অধিকার থেকে? তা তো নয়।”

এছাড়াও, প্রিয়দর্শিনী মুখার্জির গলায়ও পরিসংখ্যান বিষয়ে একইরকম সুর শোনা যায়। তিনি জানান, এমন পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব নয় কেন না কেউ এমন কোনও সমীক্ষা এর আগে করেনি। কেউ এটার রেকর্ড রাখে না যে আমাদের এই কুয়ের গোষ্ঠীতে কতজন মানুষ আছে। কতগুলো কাপল আছে ইত্যাদি। একথা জানানোর পর তিনি বলেন, “যদি কেউ এমন কোনও পরিসংখ্যান দেয় তাহলেও সেটা ভুল হবে, যদি না সে নিজে এই বিষয়ে কোনও সমীক্ষা করে থাকে। বা যদি না কোনও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। তাছাড়া এরকম কোনো তথ্য দেওয়া খুব মুশকিল।”

এই বক্তব্যগুলো থেকে আন্দাজ করা যায় হয়তো এই পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কলকাতার কুয়ের গোষ্ঠী থেকে যে যুগলরা সাহস করে সামনে এগিয়ে এসেছেন, তারা। তাদের নিশ্চয়ই পাওয়া যায়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা কথা বলেছিল এমন কিছু সমকামী যুগলের সঙ্গে। আসুন শুনে নেওয়া যাক, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে তাদের কিছু বক্তব্য।

কলকাতার এমনই এক সমকামী যুগলের কথা জানাচ্ছে বিশ্বজিৎ। যদিও তিনি তার পুরুষসঙ্গীর নাম প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয় তবুও তিনি তাদের সম্পর্ক ও তাদের  অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। বিশ্বজিৎ ও তার সঙ্গী প্রায় ৩ বছর ধরে যুগল হিসাবে একসঙ্গে আছে। কলকাতার সমাজে তাদের সম্পর্কের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলছেন, “খুব যে বাধা আছে, তা নয়। অন্তত লোকে মুখের ওপর কিছু বলে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখেছি যারা শিক্ষিত আর প্রগ্রেসিভ, ক্লিয়ার একটা লেফটিস্ট পলিটিক্যাল আইডিওলজি রাখে, তারাও অদ্ভুত রিয়্যাক্ট করে। যেন এরকম কিছুর অস্তিত্বই থাকতে পারে না। আমি একদম কোট-আনকোট বলছি, “কীসব চয়েস হচ্ছে দিনদিন লোকের।” এটা আমার ব্যাপারে বলেনি অবশ্য, কিন্তু আমার সামনেই বলেছে।”

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় নিয়ে তার বক্তব্য, “সুপ্রিম কোর্টের রায় এলে লোকের কাছে ব্যাপারটা পৌঁছায় বেশি। লোকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাটুকু করে কোনও কোনও সময়, কিন্তু খুব যে কিছু বদলায়, এমন নয়। পরিবারের সংজ্ঞা বদলালে লোকের কাছে অন্তর্ভুক্তির একটা বড় সুযোগ তৈরি হলেও কিন্তু এটা মূল স্রোতে আসতে সময় লাগবে।”

কলকাতার আরেক সমকামী যুগল হলেন অলংকৃতা আর শ্রেয়া। তারা প্রায় গত দুবছর ধরে একসঙ্গে সমকামী যুগল হিসাবে জীবনযাপন করছেন। তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে অলংকৃতা বলছে, “আলাদা করে কাউকেই জানাতে হয় না যে আমরা কীসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। হ্যাঁ সবসময়ে অভিজ্ঞতা খারাপ হয় না। যেমন আমার বাবাও জানে আমার ব্যাপারে, কিন্তু বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করেও দেয়নি। আমাকে কোনও কিছু থেকে আটকায়ওনি। কিন্তু অনেকসময়েই লোকজন সমকামিতাকে অস্বাভাবিক মনে করেন। আমাদের নিজেদের নিজেদের কর্মক্ষেত্রে যখনই কেউ আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জেনেছে তখনই আমি এবং আমার সঙ্গী শ্রেয়া দুজনেই অনেক ভুলভাল কথা শুনেছি। ব্যাপারটা এরকমই।”

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় নিয়ে অলংকৃতার বক্তব্য, “আমরা খুশি। আমরা তো আর সেই আদ্যিকালে পড়ে নেই। এটা খুবই ভালও হয়েছে। কিন্তু এখনও সমকামী যুগলের বিয়ে এবং বাচ্চা দত্তক নেওয়া ভারতে স্বীকৃত নয়। এমন অবস্থায় পরিবার সম্পূর্ণ হবে কীভাবে?”

সবশেষে, কিছুটা এমনভাবেই আছে কলকাতার কুয়ের সমাজ। নানা প্রশ্ন, নানা স্বপ্ন, নানা আশা-আকাঙ্খার মধ্য দিয়ে প্রতিদিন এগিয়ে চলেছে তারা। 

Bootstrap Image Preview