রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে হলি ক্রস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী পারপিতা ফাইহা (১৪)। ক্লাসের দিবা শাখার ‘সি’ শাখায় তার রোল ১। অভিযোগ উঠেছে, ক্লাসের গণিত শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় ওই শিক্ষক তাকে ইচ্ছা করে প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেন। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে গত মঙ্গলবার সে আত্মহত্যা করে। যদিও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। কমিটি হলি ক্রসের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছে। পারপিতাসহ ৫৫ শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতাও জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ ও পারপিতার সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পারপিতা গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে তেজগাঁও রেলস্টেশন রোডের বাসায় ফিরে সরাসরি লিফট দিয়ে ১২ তলা ভবনের ছাদে চলে যায়। স্কুল পোশাকেই ছাদ থেকে নিচে লাফিয়ে পড়ে সে। গুরুতর অবস্থায় পারপিতাকে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রাত ৮টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পারপিতার সহপাঠীরা বলছে, স্কুলের উচ্চতর গণিতে ফেল করার বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করতে পারে। এ বছর প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ‘সি’ ও ‘ডি’ শাখার ১০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জন ফেল করে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতে ৫৫ জন ফেল করে। নবম শ্রেণির ‘সি’ ও ‘ডি’ শাখায় উচ্চতর গণিতের ক্লাস নেন শিক্ষক শোভন রোজারিও। তিনি আবার এ বিষয়ে নিজের বাসায় প্রাইভেটও পড়ান। পারপিতাকেও তিনি তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়তে বলেছিলেন। কিন্তু পারপিতা তাতে রাজি না হওয়ায় ওই শিক্ষক তাকে ইচ্ছা করেই ফেল করিয়ে দেন। আর এ কারণেই পারপিতাকে তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে আসতে বলে থাকতে পারেন স্কুলের অধ্যক্ষ। ফেল করার এই অপমান এবং মা-বাবার সামনে অপমানিত হওয়ার ভয়ে পারপিতা আত্মহত্যা করেছে।
পারপিতার বাবা আব্দুল মাজেদ একজন ব্যবসায়ী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে পারপিতা ছিল বড়। পারপিতার মা কামরুন নাহার অভিযোগ করেছেন, স্কুলে পড়াশোনার বিষয়ে শিক্ষকের অতিরিক্ত চাপের কারণে তাঁর সন্তান আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তার মৃত্যুর পর স্কুল থেকে জানানো হয়েছে যে পারপিতা তিনটি বিষয়ে ফেল করেছে। তবে তার মৃত্যুর আগে তাঁরা পারপিতার ফেল করার বিষয়টি জানতেন না। গতকাল শিক্ষক শোভন রোজারিওর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির দিবা শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শিখা রায়। অধ্যক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রশাসন অনেক স্বচ্ছ। শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের দেখা করার সুযোগ রয়েছে। কিভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা খতিয়ে দেখব। ’