কোনো ব্যক্তি কি নিজের চেয়ে এক বছরের কিংবা আরও বেশি বয়সের বড় নারীকে বিয়ে করতে পারবে? বয়সে বড় নারীকে বিয়ে করলে কি কোনো অসুবিধা আছে? এমন প্রশ্ন করে অনেকে জানতে চান যে, বয়সে বড় নারীকে বিয়ে করা যায় কিনা।
এর উত্তর হলো- রক্তের সম্পর্ক যাদের সঙ্গে রয়েছে, তাদের বিয়ে করা জায়েজ নেই; এর বাইরের অন্য কেউ যদি বয়সে— এক দুই বছরের বড় হয় বা পাঁচ বছর বড় হয়— তাহলে তাকে অবশ্যই বিয়ে করা যাবে।
আমরা সকলেই জানি যে, আল্লাহ নবী (সা.) খাদিজাতুল কুবরা (রা.)-কে বিয়ে করেছিলেন। বয়সের দিক থেকে খাদিজাতুল কুবরা (রা.) আল্লাহর নবী থেকে বড় ছিলেন। কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহর রাসুল থেকে তার বয়স ১৫ বছর বেশি ছিল। আল্লাহর নবী ছিলেন পঁচিশ বছর বয়সী। আর খাদিজাতুল কুবরা (রা.) ছিলেন চল্লিশ বছরের। আল্লাহর নবী থেকে পনের বছরের বড় ছিলেন হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)। কাজেই বয়সে বড় হওয়ার কারণে বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই। তবে এটা অনেক সময় বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ, স্ত্রীকে আয়ত্তে রাখা কারও কারও জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। স্ত্রীর যেসব হক গুলো আছে এবং যেসব পারস্পরিক লেনদেন আছে, সেগুলোর জন্য স্ত্রী যদি বয়সে হয়— তখন সাংসারিক জীবন পরিচালনা করা সহজ হয়। এজন্য বয়সে কিছুটা ছোট বিয়ে করাটা বুদ্ধিমানের কাজ। আর স্বামী-স্ত্রী উভয়ের বয়সের ভারসাম্য থাকাটা খুব জরুরি।
(সূত্র : সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৬৭; আত-তাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সা'দ : ১/১০৫)
স্বামী-স্ত্রীর বয়সের ভারসাম্য
স্বামী-স্ত্রীর বয়সে ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত। বয়স স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আচরণগত (স্বভাব ও দৈহিক) বিষয়ে প্রভাবক। এ ক্ষেত্রে কোরআনের সরাসরি নির্দেশনা না থাকলেও ইঙ্গিত আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং (জান্নাতে) তাদের পাশে থাকবে সমবয়সী আয়তনয়না (জান্নাতি রমণী)। ’ (সুরা : সাদ, আয়াত : ৫২)
অন্য আয়াতে এসেছে, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি জান্নাতি রমণীদের উত্তমরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদের করেছি চিরকুমারী, সোহাগিনী, সমবয়স্কা। ’ (সুরা : ওয়াকিয়া, আয়াত : ৩৫-৩৮)
সুতরাং স্বামী-স্ত্রীর বয়স কাছাকাছি হওয়া বাঞ্ছনীয়।
বয়সের বেশি ব্যবধানে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তাই প্রয়োজন ভারসাম্য। ফাতেমা (রা.)-কে বিয়ে করার প্রস্তাব সর্বপ্রথম আবু বকর (রা.) দেন। অতঃপর ওমর (রা.) প্রস্তাব দেন। উদ্দেশ্য ছিল—তাঁরা রাসুল (সা.)-এর জামাতা হওয়ার সম্মান অর্জন করবেন। রাসুল (সা.) বলেন, সে [ফাতেমা (রা.)] অনেক ছোট। তাঁদের বয়স অনেক বেশি ছিল। রাসুল (সা.) বয়সের কথা বিবেচনা করে তাঁদের আবেদন নাকচ করে দেন।
এতে বোঝা যায়, মেয়ের বয়স কম হলে স্বামীর বয়স অতিরিক্ত বেশি হওয়া উচিত নয়। বয়সের বেশি অসমতায় বিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। (ইত্তিহাফুস সায়েল বিমা লিফাতিমাতা মিনাল মানাকিবি ওয়াল ফাদাইল, পৃষ্ঠা : ৩৪-৩৬)
ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ের সময় বয়স ছিল সাড়ে ১৫ বছর। (সিয়ারু আলামিন নুবালা, পৃষ্ঠা : ৪২৩)। তবে ইবনে সাদের মতে, সে সময় তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর। আর আলী (রা.)-এর বয়স ছিল ২১, মতান্তরে ২৫ বছর। ইসলামে আলী (রা.) ও ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ে একটি আদর্শ বিয়ে।
এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে জানা যায়, বর-কনের বয়সের ভারসাম্য রাখা উচিত। উত্তম হলো, বয়স কাছাকাছি হওয়া। স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বয়স কিছু কম হওয়া মন্দ নয়। কেননা নারীর গ্রোথ পুরুষের চেয়ে প্রবল। তাই পরস্পরের বয়সে ভারসাম্য আনতে স্বামীর তুলনায় স্ত্রীর বয়স কিছু কম হওয়া কাম্য। অভিজ্ঞরা বলেন, স্ত্রী যদি স্বামীর চেয়ে বয়সে একটু ছোট হয় তাহলে ভালো। আর নারীর শারীরিক কাঠামো থাকে দুর্বল। ফলে সে আগে বৃদ্ধা হয়ে যায়। যদি দুই-চার বছরের পার্থক্য থাকে তাহলে সমতা আসে। (হুকুকুল জাওজাইন, পৃষ্ঠা ৩৭০)
পরিশেষে, আমৃত্যু এক ছাদের নিচে থাকার স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। আর স্বামী-স্ত্রীর বয়সের অতিরিক্ত তারতম্যের পরিণতি অনেক ক্ষেত্রে সুখকর হয় না। বিবাহ শুধু কিছুদিন এবং কয়েক বছরের উপভোগের জন্য হওয়া উচিত নয়। আর এ ক্ষেত্রে পরস্পর বোঝাপড়া ও শারীরিক সক্ষমতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত থাকে। তাই কাছাকাছি বয়স বা সামান্য ব্যবধান দীর্ঘস্থায়ী দাম্পত্যজীবনের অনুকূল।