Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশকে ৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার দিবে এডিবির

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৫:৩৬ AM
আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৫:৩৬ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধার অব্যাহত রাখতে এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা থেকে উদ্ভূত প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তার জন্য আগামী তিন বছরে বাংলাদেশকে প্রায় ৯.৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

গত ২৪ জুলাই বাংলাদেশ লেন্ডিং পাইপলাইন ২০২৩-২০২৬-এর হালনাগাদ তালিকা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক ব্যাংকটি। হালনাগাদ তালিকার আওতায় বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পাবে এডিবির কাছ থেকে।

এর আগে ২০২২-২৪ পাইপলাইনে এডিবির ঋণ প্রস্তাব ছিল ৭.৯১ বিলিয়ন ডলার। 

ইআরডি ও এডিবি কর্মকর্তারা জানান, লেন্ডিং পাইপলাইনের আওতায় এডিবি মোট ৪৪টি প্রকল্পে ঋণ দিতে সম্মতি জানিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোগ্রামিং মিশন (সিপিএম) রিপোর্ট-২০২২ অনুযায়ী, এডিবি দেশের প্রধান প্রধান অবকাঠামোগুলোর অব্যাহত উন্নতির জন্য সহায়তা দেবে।

আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে, বাজারে আরও ভালো প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে এবং চাকরির সুযোগ ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ সড়ক ও রেলপথ করিডোরের উন্নয়নে সহায়তা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন ও অভিযোজনে সমন্বিত সমাধানও দেবে এডিবি।

পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে রূপান্তর ত্বরান্বিত করার জন্য জ্বালানি দক্ষতা ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের সুযোগ অনুসন্ধান করা হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া টেকসই পরিবহন গড়ে তোলার জন্য এডিবি ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ও বৈদ্যুতিক বাহনের উন্নয়নকে সহায়তা দেবে।

মোট ছয়টি খাতে ভাগ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প তালিকা তৈরি করেছে এডিবি। 

বাংলাদেশ লেন্ডিং পাইপলাইন ২০২৩-২৫-এর তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি ঋণ পাবে পরিবহন খাত। আগামী তিন বছরে এ খাতে ২.৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এডিবি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ২.৩৫ বিলিয়ন, পানি ও নগর খাতে ১.৩৯ বিলিয়ন, আর্থিক খাতে ১.৩ বিলিয়ন, জ্বালানিতে ১.০৭ বিলিয়ন এবং কৃষি খাতে ৪৪১ মিলিয়ন ডলার দেবে। 

এডিবি আগামী তিন বছরে কয়েকটি সড়ক ও রেল প্রকল্পেও অর্থায়ন করবে। যেমন আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত রেললাইনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তর প্রকল্পে ৩০০ মিলিয়ন ডলার দেবে সংস্থাটি।

এছাড়া টঙ্গী-ভৈরব-আখাউড়া লাইলনের মিটারগেজকে ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইনে রূপান্তরে আরও একটি প্রকল্প এডিবি স্ট্যান্ডবাই রেখেছে। 

সংস্থাটি বলছে, সব প্রক্রিয়া শেষ করে এই প্রকল্পে ২০২৩ সালে অর্থয়ান করা সম্ভব হবে।

সরকার ইতিমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের রেললাইনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে রূপান্তরের কাজ শুরু করেছে। ৭২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আখাউড়া-লাকসাম অংশ এই প্রকল্পেই অন্তর্ভুক্ত। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশের বেশি।

অন্যদিকে ঢাকা-টঙ্গী ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের কাজও চলছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম পিপিপি হাইওয়ে প্রকল্পের জন্যও ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি।

শহর দুটিতে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে ও বিদ্যমান হাইওয়েতে যানজট কমাতে বাংলাদেশকে নতুন এক্সপ্রেসওয়ের ডিজাইন প্রণয়নে সহায়তা করছে এডিবি।

ঢাকা-নর্থওয়েস্ট করিডোর রোড প্রজেক্ট প্রকল্পে পরপর দুই বছরে মোট ৭০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া যাবে সংস্থাটির কাছে থেকে ।

অন্যদিকে এ সময়ে গাজীপুরে ধীরাশ্রম ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো নির্মাণে ২০২৩ সালে এডিবির কাভহ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়া যাবে। 

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন ৫ সাউদার্ন রুট), এসএএসইসি ইন্টিগ্রেটেড ট্রেড ফ্যাসিলিটি প্রজেক্টসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প এডিবির পাইপলাইন থেকে অর্থায়ন পাবে।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের অধীনে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা হিসেবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি। বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটি টিকা উৎপাদন ও রেগুলেটরি আপগ্রেডেশনের জন্য দেবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার।

এছাড়া সেকেন্ড স্ট্রেংদেনিং সোশ্যাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণের আশ্বাস দিয়েছে এডিবি। 

দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সংস্থাটি দুই বছরে ৬০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নেও সহায়তা প্রদান করবে।

এছাড়া টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচির আওতায় ২০২৩ সালে এডিবি বাংলাদেশকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা দেবে।

জলবায়ু পরিবর্তন শক্তিশালীকরণ কর্মসূচির আওতায় বাজেট সহায়তা দেওয়া হবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। ২০২৩ ও ২০২৫ সালে দুই কিস্তিতে এ ঋণ দেওয়া হবে।

'স্ট্রেংদেনিং ইকোনমিক স্ট্রাকচার ফর এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন' শীর্ষক একটি কর্মসূচির আওতায় ২০২৫ সালে বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ২৫০ মিলিয়ন ডলার পাবে।

এডিবি দুই ধরনের শর্তে ঋণ দেয়। সফট লোন দেওয়া হয়ে সাধারণ মূলধন সম্পদ (রেয়াতি) থেকে। এই ঋণ দেয়া হয় নির্দিষ্ট ২ শতাংশ হারে। আর সাধারণ মূলধন সম্পদ (নিয়মিত) থেকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুদ নির্ধারিত হয় 'সেকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট' ও 'কনট্রাকচুয়াল স্প্রেড' (০.৫%)-এর ভিত্তিতে। 

দুধরনের ঋণ পরিশোধের মেয়াদকালই ২৫ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছরের। আর অবিতরণকৃত ঋণের ওপর ০.১৫ শতাংশ কমিটমেন্ট চার্জও আছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অভ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, 'এরকম ছাড়ের ঋণ আমাদের আরও দরকার। যা আমাদের বর্তমান অর্থনীতি পরিস্থিতির উন্নতি করতে আনতে সাহায্য করবে। প্রত্যাশিত সুফল পেতে চাইলে আমাদের যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।'

Bootstrap Image Preview