Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর: সমুদ্রবিরোধ মেটাতে পূর্ণ প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৫:২৭ AM
আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২২, ০৫:২৭ AM

bdmorning Image Preview


২০১২ সালে জার্মানির হামবুর্গভিত্তিক সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে (ইটলস) মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডসের স্থায়ী সালিশি আদালতের রায়ে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি হয়। এর পরই সমুদ্রে পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র পায় বাংলাদেশ। সেই রায় মিয়ানমার ও ভারত মেনে নিলেও সমুদ্রের মহীসোপানে সীমানা নিয়ে ঢাকা-দিল্লি বিরোধে জড়ালে গ্রে এরিয়া বা ধূসর এলাকার সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর সামনে রেখে এ সংকট সমাধানে করণীয় বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি রাখছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম। সমকালকে তিনি বলেন, 'এ বিরোধ নিষ্পত্তিতে আন্তর্জাতিক রায় ও জাতিসংঘ কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি বা আনক্লজের আইন অনুসরণ করবে বাংলাদেশ।'

২০১২ সালের ইটলসে বাংলাদেশের দাবি অনুযায়ী ন্যায্যতার ভিত্তিতে রায় দেওয়ায় ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক এলাকা এবং তদূর্ধ্ব মহীসোপান এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আর ভারতের বিরুদ্ধে সালিশি আদালতের রায়ে বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশ পেয়েছে। বাকি ৬ হাজার ১৩৫ বর্গকিলোমিটার পেয়েছে ভারত।

এই রায়ের ফলে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি সুরাহা হওয়ায় বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের টেরিটোরিয়াল সমুদ্র ও ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল পেয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে পেরেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ভারত-বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হলেও মহীসোপানের দাবিকে ঘিরে করোনার মধ্যে জাতিসংঘে পাল্টাপাল্টি চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে দুই দেশ একটা বিরোধপূর্ণ অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। দুইশ নটিক্যাল মাইলের পর মহীসোপানের বাংলাদেশের দাবিতে ভারতের আপত্তি নতুন এ বিরোধের জন্ম দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের পর যে আপত্তি দিয়েছে ভারত, তা অমূলক। বাংলাদেশ তার বেজলাইন আদালতের রায় ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে ভূমি থেকে নির্ধারণ করেছে। আর ভারত যে বেজলাইন টেনেছে, তার সাড়ে ১০ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রের ভেতর রয়েছে। তাদের ৮৭, ৮৮ ও ৮৯ তিনটি পয়েন্টের বেজলাইন ধরা হয়েছে পানির ওপর থেকে। এর ভেতর ৮৯ বাংলাদেশের মধ্যে। এটি ভূমি থেকে নির্ধারণ করলে ধূসর এলাকার সৃষ্টি হতো না। আনক্লজের নিয়ম অনুযায়ী পানির ওপর থেকে বেজলাইন ধরা যায় না।

তিনি বলেন, আদালত আমাদের যে পরিমাণ মহীসোপান দিয়েছেন, তা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি। তার ভিত্তিতে আমরা সমুদ্রের দাবি জানিয়েছি। এখানে ভারতের আপত্তি হচ্ছে, সমুদ্র আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের এ দাবি অবৈধ। বিষয়টি নিয়ে আগে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছে। তবে তা সমাধানের আগে ভারত জাতিসংঘে গিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ তার জবাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সমাধানের চেষ্টা করবে কিনা- জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, বিরোধ মেটাতে বাংলাদেশ আগে একবার চেষ্টা করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময়ে বিষয়টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আসতে পারে। তাই এ বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি রাখছে ঢাকা। এখনও নিশ্চিত নয় যে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার এজেন্ডায় এটি রাখা হবে কিনা। বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার পর সমুদ্রবিরোধ দ্বিপক্ষীয়ভাবে নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানিয়েছিল ভারত। তবে তাতে সাড়া না দিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের ওপর নির্ভর করেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ জাতিসংঘে মহীসোপানের দাবি প্রথম তুলে ধরে ২০১১ সালে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর মহীসোপানের ওই দাবি সংশোধন করে ২০২০ সালে নতুন করে কমিশনে জমা দেয় ঢাকা। বাংলাদেশ যখন নতুন বেজলাইন টেনে মহীসোপানের দাবি উপস্থাপন করে, তারপরই সংকটের শুরু। বাংলাদেশ সংশোধিত মহীসোপানের দাবি উপস্থাপনের ছয় মাসের মধ্যেই ভারত জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানায়। ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল ভারত জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক চিঠিটি দিয়ে বাংলাদেশের মহীসোপানের দাবির ব্যাপারে আপত্তি তুলে ধরে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশও জাতিসংঘে পাল্টা চিঠি দিয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করে।

বাংলাদেশের নতুন বেজলাইনের ২ ও ৫ নম্বর পয়েন্ট নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে ভারত। দেশটির দাবি, বাংলাদেশ যেটি দাবি করছে, তা ভারতের দুইশ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে; যা ভারতের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল। এটাকেই ধূসর এলাকা বলছে ভারত। ভারতের বেজলাইনের ৮৯ নম্বর পয়েন্ট নিয়ে আপত্তি রয়েছে বাংলাদেশের। বাংলাদেশ বলছে, আন্তর্জাতিক আইন মেনে বেজলাইন নির্ধারণ করলে এ ধূসর এলাকা থাকবে না।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংশোধিত বেজলাইন পাঁচটি পয়েন্টে এবং ভারতের বেজলাইন ৮৯টি পয়েন্টে বিভক্ত।

সূত্র: সমকাল 

Bootstrap Image Preview