সুন্দরী নারীদের ছবি দিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে মধ্য বয়সী শিল্পপতি ও ধনী ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায় আজহার উদ্দিন সাগর (১৯)। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার পর মেসেঞ্জারে নারী সেজে স্পর্শকাতর ও অন্তরঙ্গ চ্যাটিং শুরু করে। টার্গেট করে প্রেমের সম্পর্ক ও সখ্যতা গড়ে তুলে। একপর্যায়ে টার্গেট করা ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানায় ভিডিও কলে আসার জন্য। ভিডিও কলে আসার পর সাগর স্ত্রিন শেয়ারের মাধ্যমে মোবাইলে আগে থেকে সংগ্রহ করা সিঙ্গেল মেয়েদের খোলামেলা ভিডিও চালিয়ে দেয়। আর কৌশলে অপর পাশে থাকা ব্যক্তির নগ্ন ভিডিও স্ক্রিন রেকর্ডারের মাধ্যমে ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও ওই ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ভিডিও আত্মীয়স্বজন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। মান সম্মানের ভয়ে অনেক ভুক্তভোগী তার চাহিদামতো টাকা দিতে বাধ্য হতো।
তিন মাস আগে আনিকা আক্তার নামের একটি আইডি দিয়ে একজন শিল্পপতিকে টার্গেট করে ফেসবুকে পরিচিত হয় সাগর। কৌশলে ওই শিল্পপতির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে।
গত ২৪শে জুন ওই শিল্পপতিকে সাগর ভিডিও কল দেয়। তিনি সেটি খুব সহজেই রিসিভ করেন। সাগর একটি পর্নো ভিডিও ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ক্যামেরার সামনে থেকে সরিয়ে নেয়। শিল্পপতি বুঝতে পারেননি সেটি আগে থেকে ধারণ করা ভিডিও। তাই তিনিও খোলামেলা ভাবে ক্যামেরার সামনে আসেন। সাগর সেই দৃশ্য রেকর্ড করে নেয়। পরে আনিকা আক্তার আইডি থেকে সেই ভিডিও শিল্পপতির মেসেঞ্জারে পাঠায়। টাকা চেয়ে হুমকি ধামকি দিতে থাকে। না হলে মানসম্মানহানি করবে বলে জানায়। পরে তিনি বাধ্য হয়ে তার দেয়া বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেন। টাকা পাওয়ার পরও থামেনি সাগর। ফের টাকা চাইতে শুরু করে। উপায়ান্তর না পেয়ে শিল্পপতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাহায্য নিয়ে তাদের পরামর্শে থানায় মামলা করেন। পরে ওই মামলায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ আজহার উদ্দিন সাগরকে গ্রেপ্তার করে। ডিবি সাইবার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নবম শ্রেণি পাস সাগর ফেনী জেলার বাসিন্দা। প্রযুক্তি ব্যবহারে সে অত্যন্ত পারদর্শী। তার মোবাইলে শতাধিক নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ ভিডিও, মেয়েদের পর্নো ভিডিও ও ছবি পাওয়া গেছে।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ছাগলনাইয়ার পশ্চিম পাঠান নগরের মোল্লাবাড়ি থেকে তাকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছি। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ও দুটি সিম কার্ড উদ্ধার করেছি। সে মূলত টাকা আছে এমন ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলতো। বিশেষ করে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, বড় চাকরিজীবী ও প্রবাসীদের। আর ফাঁদে ফেলার প্রথম টোপ ছিল ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রোফাইলে সুন্দরী নারীদের ছবি। সুন্দর নারীদের ছবি থাকায় যাকেই রিকুয়েস্ট পাঠাতো একসেপ্ট করতো। তারপর পরিকল্পনামাফিক কথা শুরু করে ভিডিও কলে এনে নগ্ন করতো। সাগর আগে থেকেই বলে দিতো ভিডিও কলে এসে সে কোনো কথা বলবে না। তাই সে স্ক্রিন শেয়ারের মাধ্যমে ভিডিও চালু করে দিতো। ভুক্তভোগীরা মনে করতো আইডির মালিক নারীই, ভিডিও কলে নগ্ন হয়ে আসছে। তাই তারাও নগ্ন হয়ে আনন্দ করতো।
সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জোনায়েদ আলম সরকার বলেন, সাইবার প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত অপরাধীরা অপরাধ করে যাচ্ছে। কেউ বুঝে করছে আবার কেউ না বুঝেও করছে। দুটিই অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। সাইবার জগতে যেমন অপরাধীরা তৎপর, ঠিক তেমনি আমরা বিভিন্ন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করছি। কেউ ভুক্তভোগী বা প্রতারণার শিকার হলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাতে হবে। সাইবার প্ল্যাটফরম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার আগে পরিচিত ব্যক্তি কিনা সেটি নিশ্চিত হতে হবে। অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এ ছাড়া একান্ত ব্যক্তিগত কিছু শেয়ার করা যাবে না।