Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৩ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কাবাঘরের গিলাফ তৈরি করতে কত টাকা খরচ হয়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ জুলাই ২০২২, ০১:৫২ PM
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২২, ০১:৫২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


কালো গিলাফের আঁচল ও সবুজ গম্বুজের ছায়ার স্বপ্ন দেখেন, প্রতিটি মুমিন। কাবা শরিফের প্রাসঙ্গিকতা আসলেই দুই চোখে ভেসে ওঠে ‘বাইতুল্লাহ’র হৃদয়লোভন দৃশ্য। মুসলিম উম্মাহর অগণিত সদস্যের আশৈশব বাসনা— কাবার পবিত্র গিলাফ একবারের জন্য হলেও ছুঁয়ে দেখা।

সাধারণত পবিত্র কাবাঘরের চারপাশ— আদ্যোপান্ত কালো গিলাফে জড়ানো থাকে। স্বর্ণখচিত কোরআনের আয়াত ও বিভিন্ন পবিত্র শব্দ দিয়ে গিলাফে আঁকা থাকে আলপনা। এই লেখায় কাবার গিলাফের কিছুটা ইতিহাস— সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে।

কী দিয়ে তৈরি হয় কাবার গিলাফ?

সেই কাবার পবিত্র গিলাফ তৈরি করা হয়, প্রায় ৭০০ কেজি প্রাকৃতিক রেশম দিয়ে। মোট পাঁচ টুকরা গিলাফ বানানো হয়। চার টুকরা চারদিকে এবং পঞ্চম টুকরাটি কাবাঘরের দরজায় লাগানো হয়। টুকরাগুলো মজবুতভাবে সেলাইযুক্ত। প্রতিবছর দুইটি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি করা হয়। হাতে তৈরি করতে সময় লাগে আট থেকে নয় মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়। এতে খরচ পড়ে প্রায় ২৫ মিলিয়ন রিয়াল বা ৫৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সমমূল্য।

কী লেখা থাকে কাবার গিলাফে

১৪ মিটার উঁচু কালো রঙের এই গিলাফ সর্বমোট ১৬টি ছোট টুকরা দিয়ে সুবিন্যস্ত। কাবা শরিফের দরজায় ঝোলানোর জন্য আলাদাভাবে এতে সাড়ে ছয় মিটার উঁচু এবং সাড়ে তিন মিটার প্রস্থ পর্দা রয়েছে। গিলাফের এক-তৃতীয়াংশের ওপর দিকে ৯৫ সেন্টিমিটার প্রস্থের বন্ধনীতে সোনার প্রলেপকৃত রুপার সুতা দিয়ে কারুকার্যশোভিত আল্লাহর নাম এবং কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ক্যালিগ্রাফি খচিত করা হয়। আরো লেখা থাকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’, ‘আল্লাহ জাল্লা জালালুহু’, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম’, ‘ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নান’ ইত্যাদি।

উত্তর দিকের অংশে লেখা থাকে, ‘খাদেমুল হারামাইন শরিফাইনের বাদশাহ সালমান ইবনে আবদুর রহমান আল সাউদের নির্দেশে এই গিলাফ পবিত্র নগরী মক্কায় তৈরি করা হয়েছে’।

মিসর থেকে আসত কাবার গিলাফ

ইতিহাসের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কাবাঘরের গিলাফ মিসর থেকে আসত। মাঝে ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ব্যবহূত কাবার গিলাফ সৌদি আরবের মক্কায় তৈরি হয়েছিল। ১৯৩৯ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মিসর ফের সেই দায়িত্ব পালন করেছে। বর্তমানে সৌদি আরবে তৈরি হওয়া এই গিলাফও মিসরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে।

কোথায় তৈরি করা হয় গিলাফ?

১৯৭৭ সালে নতুনভাবে স্থাপিত মক্কা নগরীর উম্মে জাওদ নামের জায়গায় অবস্থিত এ অত্যাধুনিক কারখানায় কাবাঘরের বাইরের ও ভেতরের গিলাফ তৈরি হয়। মদিনায় রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারকে ব্যবহৃত অভ্যন্তরীণ গিলাফও এখানে তৈরি করা হয়।

কারখানাটি ছয়টি অংশে বিভক্ত—বেল্ট, হস্তশিল্প, যান্ত্রিক, ছাপা, রং ও অভ্যন্তরীণ পর্দা বিভাগ। বর্তমানে এতে ২৫০ জনের বেশি শিল্পী নিয়োজিত আছেন।

কাবায় গিলাফ পরানো হয় কখন থেকে?

হিজরতের পূর্বে কে গিলাফ পরিয়ে ছিল তাতে মতবিরোধ থাকলেও সকলে ঐকমত্য যে, হিজরতের ২২০ বছর আগে বাদশাহ তুব্বা আবি কারব আসাদ এ গিলাফের প্রথম প্রচলন করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের পর ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সা.) এবং হযরত আবু বকর (রা.) কাবা শরিফে গিলাফ পরিয়ে দেন। এরপর থেকে মুসলিম খলিফা এবং শাসকেরা এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন।

এছাড়াও নারীদের মধ্যে সর্বপ্রথম কাবা শরিফের গিলাফ পরানোর সৌভাগ্য অর্জন করেন আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের জননী নুতাইলা।

গিলাফ পরিবর্তন করা হয় কখন?

গিলাফ তৈরি করার পর তা কাবা শরিফের চাবি-রক্ষক বনি শাইবা গোত্রের মনোনীত খাদেমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১০ জিলহজ সবার সহযোগিতায় গিলাফ কাবা শরিফের নতুন গিলাফ গায়ে জড়ানো হয়।

গিলাফ পরিবর্তনের কাজে মসজিদুল হারার ও মসজিদে নববির কার্যপরিচালনা পরিষদের তত্ত্বাবধায়ক নেতৃত্ব দেন। এ সময় সৌদি বাদশার প্রতিনিধিসহ দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন। পুরাতন গিলাফ ঠিকভাবে টুকরো টুকরো করে প্রতি বছর বিভিন্ন মুসলিম সরকারপ্রধান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপহার দেওয়া হয়।

কাবার গিলাফ সম্পর্কে জেনে নিন ১০টি চমৎকার তথ্য।

১. নাম : কাবাঘরের গিলাফকে ‘কিসওয়াহ’ বলা হয়।

২. গিলাফ পরিবর্তনের দিন : প্রতিবছর ৯ জিলহজ আরাফার দিন কাবাঘরে নতুন গিলাফ চড়ানো হয়।

৩. যেখানে তৈরি হয় : কাবার গিলাফ তৈরি হয় মক্কায় অবস্থিত কিসওয়াহ ফ্যাক্টরিতে।

বাদশাহ আবদুল আজিজ আল-সউদের নির্দেশে ১৯২৭ সালে ফ্যাক্টরিটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

৪. অর্থ ব্যয় : কাবার গিলাফ তৈরিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬ কোটি ৭২ লাখ ৫১ হাজার ৮০০ টাকা।

৫. যে মেশিনে তৈরি : বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেলাই মেশিনে কাবার গিলাফ তৈরি হয়। যে মেশিনের আয়তন ১৬ মিটার।

৬. যে সুতায় এমব্রয়ডারি করা : স্বর্ণমিশ্রিত সুতা দিয়ে এমব্রয়ডারি বা সূচিকর্ম করা হয়।

৭. যত স্বর্ণ ব্যবহার করা হয় : কাবার গিলাফ তৈরিতে ২৮০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ ব্যবহার করা হয়।

৮. কর্মী ও কারিগর : কাবার গিলাফ তৈরিতে ১৬০ জন কর্মী ও কারিগর যুক্ত আছেন।

৯. কাপড় ও সুতা : একটি নতুন গিলাফ তৈরিতে ৬৭০ কেজি সিল্কের কাপড়, ১২০ কেজি স্বর্ণের সুতা ও এক কেজি রৌপ্যের সুতা ব্যবহার করা হয়। কাবার গিলাফে ব্যবহৃত ক্যালিগ্রাফির পুরুত্ব হয় ২.৫ সেন্টিমিটার।

১০. পুরনো গিলাফ যা করা হয় : কাবাঘরের পুরনো গিলাফের বিভিন্ন অংশ কেটে খণ্ড খণ্ড করা হয় এবং তা হজে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্টজনদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।

তথ্যসূত্র : হারামাইনের টুইট বার্তা

Bootstrap Image Preview