Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রেলস্টেশনে জিন্স-টপস পরায় তরুণীকে হেনস্তাকারী যুবক জেলে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২২, ০৮:৩৮ PM
আপডেট: ২১ মে ২০২২, ০৮:৩৮ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে অশালীন পোশাক পরার অভিযোগ তুলে তরুণীকে হেনস্তাকারী ইসমাইল হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। ওই ব্যক্তির নাম ইসমাইল হোসেন। বয়স ৩৮।  তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী সদরের নজরপুর ইউনিয়নের বুদিয়ামাড়া । তিনি একজন রাজমিস্ত্রি।

জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান শনিবার বিকেলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে পুলিশ ইসমাইলকে আটক করে। পরে তাকে ভৈরব থানায় দেয়া হয়। তবে তার বিরুদ্ধে হেনস্তার শিকার কেউ অভিযোগ করেননি।

‘এদিন বিকেল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করেছি। পরে তাকে আদালতে তোলা হয়। বিচারক তখন ফৌজদারি আইনের ৫৪ ধারায় তাকে কারাগারে পাঠান।’

রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহিদী বলেন, ‘আমরা ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে হেনস্তার শিকার তরুণীর সঙ্গে থাকা এক তরুণকে শনাক্ত করেছি। তাকে ফোন করে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে এসে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছিল, তবে তিনি জানিয়েছেন, তারা থানা-পুলিশে জড়াবেন না। এর পর থেকে তার মোবাইল বন্ধ।’

ভিডিওতে দেখা যাওয়া হেনস্তাকারী নারী চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথের নিয়মিত যাত্রী নন বলে জানান স্টেশনের বিক্রেতারা।

লিচু বিক্রেতা হামিদা বলেন, ‘ঝগড়া শেষে বাটিকের সালোয়ার-কামিজ পরা ওই নারী আমার কাছ থেকে চেয়ে পানি খান। এরপর ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনে উঠে চলে যান। তিনি এই পথের নিয়মিত যাত্রী নন। আমরা নিয়মিত যারা যাতায়াত করে তাদের চিনি।’

নরসিংদী রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টারের ঘরের সামনে দুটো ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরা আছে।

ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার এটিএম মূছা জানান, এই ক্যামেরাগুলো নষ্ট। অন্য সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে দেয়া আছে।

হেনস্তার ঘটনার সময় স্টেশন মাস্টারের দায়িত্বে ছিলেন নাইয়ুম মিয়া। ঘটনার পর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত তিনি কাজে আসেননি।

মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে নাইয়ুম মিয়া বলেন, ‘ভোরে আমি কন্ট্রোল রুমে বসে ছিলাম। সিলেটগামী উপবন এক্সপ্রেসকে সিগন্যাল দিচ্ছিলাম। তখন দেখি বাইরে কিছু লোক জড়ো হয়ে আছে।

‘আমি গেটের সামনে আসতেই বাঁচাও বাঁচাও করে আধুনিক পোশাক পরা এক তরুণী ও আরেক তরুণ আমার কক্ষে আসে। তাদের কাউকে ফোন দিতে দেখলাম। অল্প সময়ের মধ্যে স্টেশন ও থানা পুলিশ এসে হাজির।’

তিনি আরও বলেন, “তখন মেয়েটি বলছিল, ‘আমি এসব পোশাক পরাতে এদের সমস্যা কী? তারা আমাদের হেনস্তা করছে। বাংলাদেশের সবাই শাড়ি পরে বেড়াবে নাকি?” পুলিশ তাদের সঙ্গে কথা বলে। আমি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা মেইল ট্রেন থামানোর জন্য সিগন্যাল দিতে ব্যস্ত হয়ে যাই।’

ফেসবুকে হেনস্তার ভিডিওটি ভাইরাল হয় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। ঘটনাটি নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার ভোরে ঘটে।

বৃহস্পতি ও শুক্রবার স্টেশন ঘুরে দুই দোকানদার মো. আমিনুল ও ইখলাস উদ্দিন এবং ভাসমান পণ্য বিক্রেতা মো. মেহেদীর সঙ্গে কথা হয় । পুরো ঘটনা তারা দেখেছেন।

তারা জানান, ভোরে ঢাকামুখী ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই দুই যুবক ও তরুণী। হঠাৎ পাশ দিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ তরুণীকে দেখে বলে ওঠেন, ‘আপনার বাড়ি কই? কাল রাতেও এখানে আসছেন। আজকেও আসছেন। এসব পোশাক পরে কেউ স্টেশনে আসে নাকি?’

মেয়েটির সঙ্গে থাকা হলুদ রঙের টি-শার্ট পরা তরুণ ওই বৃদ্ধকে তখন বলেন, ‘আপনি এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন? আপনি এভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না।’

এ নিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে ওই যুবকের বাগ্‌বিতণ্ডার মধ্যে আরেক নারী এসে মেয়েটির পোশাক নিয়ে কটাক্ষ ও গালমন্দ করতে থাকেন। ততক্ষণে চারপাশে কিছু লোক জড়ো হয়ে যায়।

ওই বৃদ্ধ ও নারীর সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ হয়ে তরুণী ও যুবককে গালমন্দ করতে থাকেন। ওই যুবকও তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যান। একপর্যায়ে আরেক ব্যক্তি যুবককে ধাক্কা দেন। মেয়েটি তখন যুবককে নিয়ে সরে যেতে চেষ্টা করলে ওই নারী মেয়েটিকে টানাহেঁচড়া করতে থাকেন।

তরুণী ও সঙ্গে থাকা দুই যুবক সরে গিয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন।

প্রত্যক্ষদর্শী দুই দোকানদার আরও জানান, তখনই ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন চলে আসায় ওই তরুণী ও সঙ্গে থাকা প্রতিবাদকারী যুবক তাতে উঠে চলে যান। সব মিলিয়ে পুরো ঘটনাটি মিনিট দশেকের।

ভাসমান দোকানদার মেহেদী জানান, ঘটনার সূত্রপাত এক নারীর কটাক্ষের জেরে।

তিনি জানান, ওই যুবক ও তরুণীকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার ট্রেনে করে নরসিংদী নামতে দেখেছেন। বুধবার ভোরে তারা আবার ঢাকা যাওয়ার ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন। সে সময় এক নারী মেয়েটির পোশাক নিয়ে প্রথম মন্তব্য করেন।

মেহেদী বলেন, ‘ওই নারী মেয়েটাকে বলতে থাকে যে, এসব পোশাক পরে কেন ঘোরাঘুরি করছে, তার বাড়ি কই। ওই নারী মেয়েটার ভিডিও করতে নেয়। তখন মেয়েটার সঙ্গে থাকা একটা ছেলে প্রতিবাদ করতে থাকে।

‘সে সময় কালো শার্ট পরা একটা লোক ওই ছেলেকে ধাক্কা দেয়। মেয়েটা তখন মোবাইল বের করে কাউকে কল করতে থাকে। এসবের মধ্যে ওই নারী মেয়েটার দিকে তেড়ে যায়।’

Bootstrap Image Preview