Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

খালেদা জিয়াকে পদ্মায় চুবনি: ফখরুলের আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২, ০৫:৪৯ PM
আপডেট: ১৯ মে ২০২২, ০৫:৪৯ PM

bdmorning Image Preview


পদ্মা সেতুতে নিয়ে চোবানোর যে কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাকে হত্যার হুমকি হিসেবে দেখছে বিএনপি। সরকারপ্রধানকে এই ধরনের কথা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নইলে তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।

আওয়ামী লীগপ্রধান পদ্মা সেতু, বেগম খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসকে নিয়ে বক্তব্য রাখার পরদিন বৃহস্পতিবার তার জবাব দেন ফখরুল।

ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে শ্রমিক দলের আয়োজনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপি ক্ষমা চেয়ে পদ্মা সেতু ব্যবহার করতে পারবে- তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের এমন একটি উক্তির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ফখরুল বলেন, ‘এই সেতু তথ্যমন্ত্রীর বাবার টাকায় হয়নি।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই ধরনের বক্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এই ধরনের উক্তি করলে তার যে আইনগত বিষয় থাকে, সেটা আমরা নেব।’

গতকাল রাজধানীতে আওয়ামী লীগের দলীয় এক আলোচনায় শেখ হাসিনা জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক যেন সরে যায়, সে জন্য ড. ইউনূস, ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক নানা সক্রিয় চেষ্টা চালিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, এই সেতু ভেঙে পড়ে যাবে- এই ধরনের বক্তব্য রাখায় খালেদা জিয়ার প্রতিও ক্ষোভ জানান শেখ হাসিনা।

নানা বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি পদ্মা সেতুবিরোধীদের সেতুতে নিয়ে চোবানোর কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার উক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।’

ড. ইউনূসের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবনি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবনি দিয়ে সেতুতে উঠিয়া নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’

আজ ফখরুল বলেন, তিনি মনে করেন সরকারপ্রধানের এই বক্তব্য প্রচ্ছন্নভাবে খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসকে হত্যার হুমকি।

তিনি বলেন, ‘দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে তিনি রয়েছেন, যেভাবেই আসুন না কেন। তিনি এই ধরনের উক্তি করতে পারেন না।

‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, তাকে সরাসরি হত্যার হুমকির শামিল। সেতু থেকে ফেলে দেয়া- এটা কখনই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। আমরা বিস্মিত হয়েছি এবং ক্ষুব্ধ হয়েছি এবং প্রচণ্ডভাবে নিন্দা জানাই তার এই উক্তিকে।’

ফখরুল বলেন, ‘এই রকম অরাজনৈতিক, অশালীন বক্তব্য কেউ কখনও আশা করতে পারে না। কিন্তু ওনার স্বভাবই এটা। তিনি এভাবেই কথা বলেন এবং এভাবেই তার প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায় কথা বলেন এবং আক্রমণ করেন, যা রাজনৈতিক কোনো শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।

‘আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের জাতি এই ধরনের নেতৃত্ব থেকে এই ধরনের কথাবার্তা শুনেছে।’

ড. ইউনূস সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সেটি নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘এটাও পুরোপুরিভাবে আমি মনে করি যে সমস্ত রকম রাজনৈতিক শিষ্টাচার, শালীনতা, ভদ্রতা, সবকিছুর বাইরে। এই কথাটা বলার অর্থই হচ্ছে তিনি প্রচ্ছন্ন হুমকি বলা যায়। জীবনের প্রতি হুমকিই বলা যায়।’

আগের দিন পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার পেছনে ড. ইউনূসের ভূমিকা আছে বলে পুরোনো অভিযোগ নতুন করে তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে, ইমেরিটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। কিন্তু সেখানে সে থাকবে না। তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।

‘কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম। তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ইমেইল পাঠায়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিস্টার জোয়েলিক তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ডসভায় না, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।’

ক্ষমা চেয়ে বিএনপিকে পদ্মা সেতু ব্যবহার করতে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ যে পরামর্শ দিয়েছেন, তার কী জবাব দেবেন- এমন প্রশ্ন ছিল একজন সাংবাদিকের।

জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা ওনার বাবার টাকায় তৈরি করা না, বাংলাদেশের মানুষের টাকায় তৈরি করা। বাংলাদেশের মানুষের এটা পুরোপুরি ট্যাক্সের টাকা। এই টাকাও তারা লুট করেছে। ১০ হাজার কোটি টাকার সেতু তারা ৩০ হাজার কোটি টাকায় বানিয়েছে।

এই সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে হওয়া উচিত বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য রেখেছেন, সে বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে ফখরুল কিছু বলতে রাজি হননি। বলেন, ‘এটা আমার বিষয় না।’

সরকার সারাদেশে বিএনপির ২৫ লাখ নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। ৬০০ নেতাকে গুম ও নানা বাহানায় ক্রস ফায়ার দিয়েছে। আজ দানব বেশে বুকে বসা এ সরকারকে তাই আন্দোলনের মাধ্যমে উৎখাত করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে দেশকে এগিযে নিতে হবে। তাই আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও আইনের শাসন নিয়ে তিনি বলেন, কথায় কথায় রাষ্ট্র দ্রোহিতার মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। তারা শুধু বহুতল বাড়ি আর দামি গাড়ি করতে ব্যস্ত।  

স্থানীয় বিএনপি নেতা শওকত হায়াত শাহ-এর সঞ্চালনায় এ কর্মীসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য  ইশরাক হোসেন,  রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান হাবিব দুলু, রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান ওয়াদুদ,  রংপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আ. খালেক, সৈয়দপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম ওবায়দুল হক,  উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহিন আক্তার, উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি রেনু অফজাল, সাধারণ সম্পাদক রুপা বেগমসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

এর আগে রংপুর জেলা বিএনপির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বিপুর আকস্মিক মৃত্যুতে মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং বিএনপি মহাসচিব তার পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তার নগদ চেক প্রদান করেন। 

Bootstrap Image Preview