Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাংলাদেশের মোহাম্মদকে দেখতে গেলেন মেসি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২২, ১২:১৮ AM
আপডেট: ১৮ মে ২০২২, ১২:১৮ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিল মোহাম্মদ। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে ছোট। মা-বাবা বাংলাদেশি হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় তার জন্ম। বাবা কাতারেই একটি পাওয়ার স্টেশনে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। ফুটফুটে মোহাম্মদ অন্য বাচ্চাদের তুলনায় একটু বেশি-ই চঞ্চল আর হাসিখুশি ছিল। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল।  কিন্তু, হঠাৎ কী যে হয়ে গেল! বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারির শুরুর দিকের কথা। মোহাম্মদের লিভারে সমস্যা দেখা দেয়। ‘ফুলমিনান্ট হেপাটিক ফেইলিওর’-এ আক্রান্ত হয়। ওই দেশের চিকিৎসকদের পরামর্শ একটাই- বাঁচাতে হলে তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। 

বাবা বললেন, ‘আমি-ই লিভার দেবো’। মা’র দাবি, তিনিই দান করবেন

কিন্তু, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেল বাবার লিভারের অংশটুকুই নেয়া সম্ভব। অবশেষে, ইচ্ছা অনুযায়ী বাবাই তার জীবন বাজি রেখে ছেলেকে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। 
লিভারের ব্যবস্থা তো হলো। কিন্তু, ওই চিকিৎসা যে কাতারে নেই। বিশ্বের নামমাত্র কয়েকটি দেশেই কেবল সেটা করা যায়। আর, করোনা পরিস্থিতির কারণে কাতার থেকে বাইরে যাওয়াও তখন নিষিদ্ধ ছিল। ওদিকে, মোহাম্মদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভ্যান্টিলেটর সাপোর্ট দেয়া হয়। 

জানা গেল, ভারতে চিকিৎসাটি খুব ভালো হয়। অবশেষে, বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় মোহাম্মদকে বিদেশ যেতে দিতে রাজি হলো কাতার কর্তৃপক্ষ। গত বছরের শেষের দিকে প্রাইভেট এয়ার এম্বুলেন্সে মোহাম্মদকে ভারতের চেন্নাইয়ের বিখ্যাত রিলা ইনস্টিটিউট এবং মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছিল। 
কথামতো মোহাম্মদের বাবাই তাকে লিভার দিলেন। সঙ্গে ছিলেন কেবল শুধু বাবা আর মা-ই। করোনার কারণে বাংলাদেশ থেকে কেউ গিয়ে যে তাদের সান্ত্বনা দেবেন সেই সুযোগও ছিল না। দেশ থেকে সবাই শুধু ফোন করেই খোঁজখবর রাখছিলেন। করোনার কারণে হাসপাতালে মোহাম্মদের পাশাপাশি তার মা-বাবা দুজনই উচ্চ ঝুঁকিতে ছিলেন। 

মোহাম্মদের যে অপারেশনটি হয়েছে সেটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনগুলো একটি। ভারতের চিকিৎসকরাও সেটা বলেছেন। যে কারণে ভারতীয় গণমাধ্যমে মোহাম্মদের বিষয়টি প্রচার করা হয়েছিল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলও তার অপারেশনটি ধারণ করেছিল বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। 

২০২১ সালের ডিসেম্বরে হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়: বাংলাদেশের পাঁচ বছরের শিশু মোহাম্মদকে বাঁচানো গেছে। যদিও চিকিৎসকরা বলেছিলেন, ও মাত্র ৭২ ঘণ্টা বাঁচবেন। অপারেশনের পর ঝামেলামুক্ত ১০ দিন পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে। মোহাম্মদ এবং তার বাবা ভালো আছেন। 

ভারতে চিকিৎসার পর মোহাম্মদ কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলে পরিবারটি আবারো কাতার ফিরে যায়। কিন্তু, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। কাতার যাওয়ার পর ফের মোহাম্মদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। নতুন করে তার বোন ম্যারোতে সমস্যা দেখা দেয়। তাকে ফের কাতারের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

সবমিলিয়ে মোহাম্মদের চিকিৎসার প্রায় তিন বছর হতে চললো। এই পরিস্থিতিতে কাতারে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত তার পরিবার-পরিজনদের মনোবল একেবারে ভেঙে গেছে। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও চাইছে, মোহাম্মদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা করতে।  

মোহাম্মদের প্রিয় খেলোয়াড় এই সময়ে এই গ্রহের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার মেসি। দীর্ঘদিন বিখ্যাত স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় খেলার পর গত বছর প্যারিস সেন্ট জার্মেনি (পিএসজি) ক্লাবে নাম লিখিয়েছিলেন মেসি। কাতারে পিএসজি’র বিভিন্ন অংশীদারদের কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে  রোববার (১৫ই মে) দোহায় আসেন মেসি এবং তার ক্লাব সতীর্থরা। 

আগেই বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছোট্ট মোহাম্মদের প্রিয় খেলোয়াড় মেসি। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মেসির অগণিত ক্ষুদে ভক্তদের মধ্যে মোহাম্মদও একজন। বিষয়টি অজানা ছিল না তাকে চিকিৎসা দিয়ে যাওয়া কাতারের ‘সিদরা মেডিক্যাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও। 

দোহা পৌঁছে মোহাম্মদ এবং অন্যান্য ক্যান্সারাক্রান্ত ক্ষুদে শিশুদের দেখতে সিদরা  হাসপাতালে যান মেসি এবং পিএসজি’র পুরো দল। অবুঝ শিশুদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তারাও যেনো শিশু হয়ে উঠেছিলেন। শিশুদের খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি গল্প-গুজবে মেতে উঠেন সবাই। হাসপাতাল সূত্র মানবজমিনকে জানায়, এটাও তাদের চিকিৎসারই একটি অংশ। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পিএসজি’র অফিশিয়াল পেইজগুলোতেও মেসিদের সিদরা হাসপাতাল ভ্রমণের ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। জানা গেছে, মোহাম্মদের সঙ্গে আবারো দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেসি। তাদের ক্লাবের খেলা দেখার আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে, প্রিয় তারকাকে একেবারে সামনে পেয়ে বেজায় খুশি মোহাম্মদ। 

মোহাম্মদের মামা কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মিজানুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, ‘সবাই মোহাম্মদের জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাকে হেফাজত করে নেক হায়াত দান করেন। দেশে এলে সে আমাদের সবাইকে সবসময় বলতো, বড় হয়ে আমি ফুটবলার হবো। আমি আমার ছোট বোনকে বলতাম ওকে খেলোয়াড় বানাবো। এখন সে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমরা সবাই আল্লাহর কাছে দোয়া চাচ্ছি। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন।’

Bootstrap Image Preview