Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশের মজুদ গ্যাসে আর চলবে আট বছর

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২২, ০৫:৩২ AM
আপডেট: ১৫ মে ২০২২, ০৫:৩২ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


দেশের ২৮টি গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ আছে মাত্র ১০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। দেশে গ্যাসের বার্ষিক চাহিদা প্রায় এক টিসিএফ। যেকোনো কূপ থেকে মজুদকৃত গ্যাসের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ উত্তোলন করা যায়। এ হিসাবে দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস আছে প্রায় আট টিসিএফ।

এই মজুদ দিয়ে মাত্র আট বছর চলা যাবে। ভূতাত্ত্বিক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক বছরের মধ্যে দেশে যদি বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া না যায়, তাহলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, সার কারখানা, তৈরি পোশাক শিল্পসহ গ্যাসভিত্তিক শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতা ও প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তখন সরকারকে বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস-এলএনজি দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে হবে।

দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা যে হারে বাড়ছে, গত দুই দশকে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সেভাবে হয়নি।

দেশে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান বলেন, ‘আমরা যদি গ্যাসের মজুদ বাড়াতে না পারি তাহলে বর্তমান মজুদ আট থেকে সাড়ে আট বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তাই আমরা নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের পাশাপাশি যেসব পুরনো কূপে উৎপাদন কমে গেছে সেগুলো ওয়ার্কওভার করে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। সম্প্রতি কৈলাসটিলার ৭ নম্বর কূপ থেকে এই প্রক্রিয়ায় দৈনিক ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়েছে। এমন আরো পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্রে ডিপ ড্রিলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ’

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফেনী থেকে শুরু করে পার্বত্য অঞ্চলে টুডি সিসমিক সার্ভের কাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে ফল পাওয়া যাবে। সেখান থেকে ইতিবাচক ফল পেলে মিরসরাই, সীতাকুণ্ডসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাগুলোতেও ড্রিলিং করা হবে। এরই মধ্যে ভোলার গ্যাসক্ষেত্রে ড্রিলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় কম্পানি গ্যাসপ্রম এ কাজ করছে। এখানে ভালো মজুদ পাওয়ার আশা করছি। ’

নাজমুল আহসান বলেন, ‘আমাদের শেষ চেষ্টা হচ্ছে গভীর সমুদ্র। সাগরে ভারতীয় কম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড (ওভিএল) একটি কূপ খননও করেছে। তবে গ্যাসের অস্তিত্ব পায়নি। তারা আরো একটি কূপ খনন করতে দরপত্র আহবান করেছে। ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় কূপ খননের কাজ শুরু করবে। ’

পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ করা হয় তিন হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে দুই হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসছে দেশীয় কূপগুলো থেকে। বাকি ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে দেশীয় কূপগুলো থেকে দৈনিক দুই হাজার ৫৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছিল। ২০২২ সালে এসে দৈনিক উত্তোলন দাঁড়ায় দুই হাজার ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। এ থেকে বোঝা যায়, গ্যাসের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান বেড়েছে। চাহিদা সামাল দিতে সরকারকে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হচ্ছে। গ্যাস উৎপাদনে যে খরচ হয়, এলএনজি আমদানিতে তার ৭ থেকে ১০ গুণ বেশি খরচ হয়। এতে জ্বালানি খাতে ভর্তুকির চাপ বেড়েই চলছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেডও (বাপেক্স) দীর্ঘদিন অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়ে ছিল। বাপেক্সের কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন তাঁরা স্বল্পমেয়াদি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছেন। এই লক্ষ্য পূরণ করতে বাপেক্স তাদের নিজেদের নির্ধারিত এবং অন্যান্য উৎপাদন কম্পানির এলাকায় ২২টি কূপ খনন করবে।

জানতে চাইলে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গ্যাস উৎপাদনের স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় অনুসন্ধান কূপ, ওয়ার্কওভার ও কূপ উন্নয়নের কাজগুলো করা হচ্ছে। বাপেক্স নিজেদের কাজের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের কাজও চুক্তিভিত্তিক করছে। গত বছর জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস যুক্ত করা হয়েছে। ’

তবে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাস অনুসন্ধানে দেশি কম্পানির মনোযোগ আরো বাড়ানো উচিত। তাঁরা বলছেন, এ জন্য সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। সরকার না চাইলে এসব গ্যাসক্ষেত্রের উন্নয়ন করা যাবে না। কারণ এখানে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এত দিনে এই অর্থ বিনিয়োগ করলে এর সুফলও পাওয়া যেত।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ভূতাত্ত্বিক বদরূল ইমাম বলেন, ‘আমরা যদি দেশীয় গ্যাস জোগান দিতে না পারি, তাহলে ২০৩০ সালের পরে খুব বিপদে পড়ে যাব। কারণ তখন চাহিদার পুরোটাই আমদানি করা এলএনজি দিয়ে পূরণ করতে হবে। এলএনজির যে খরচ সেটি দেশের জন্য বহন করা কঠিন হবে। বর্তমানে গ্রিডে যে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে, তার মাত্র ২০ শতাংশ হচ্ছে এলএনজি। আর বাকি ৮০ শতাংশই দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস। এখন ২০ শতাংশ এলএনজির ব্যয় বহন করতেই সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ’

পরামর্শ দিয়ে বদরূল ইমাম বলেন, ‘দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের বিকল্প নেই। অথচ দেশে এখন পর্যন্ত জোরালো অনুসন্ধানকাজ হয়নি। আমরা শুধু সমুদ্র জয় করে উৎসব করেছি। মিয়ানমার সমুদ্রে বেশ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। মিয়ানমার জলসীমার কাছাকাছি বাংলাদেশের জলসীমার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ বড় গ্যাসক্ষেত্রের সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে যদি অনুসন্ধান চালানো হয়, দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্রগুলো সেখান থেকেই আবিষ্কার হবে। এখন পর্যন্ত সমুদ্রে জোরালো অনুসন্ধানের পরিকল্পনা দৃশ্যমান নয়। ’

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

Bootstrap Image Preview