বিয়ের দাবিতে বরগুনায় প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেয়া জামালপুরের সেই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বেতাগী থানা পুলিশ শুক্রবার ভোরে চান্দখালি এলাকার মাহমুদুল হাসানের বাড়ি থেকে ওই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। আদালতের মাধ্যমে সকালেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মাহমুদুল হাসানকে প্রেমিক দাবি করে গত ২৯ এপ্রিল থেকে বিয়ের জন্য তার বাড়িতে অবস্থান নিয়ে ছিলেন ওই তরুণী।
বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)শাহ আলম হাওলাদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে মাহমুদুলের বাবা মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার মামলা করেছেন। তাতে জিম্মি করে তালা ভেঙে বাসায় প্রবেশ, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও আত্মহত্যার হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই মামলায় মেয়েটিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে প্রেমের টানে জামালপুরের বরগুনায় এসে বিয়ের দাবিতে ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রের বাসার সামনে অবস্থান নিয়েছেন তিনি। লঞ্চযোগে ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনা আসেন। তার পর থেকে ওই তরুণী বরগুনার বেতাগী উপজেলার চান্দখালি বাজার সংলগ্ন কাঠপট্টি এলাকায় ওই শিক্ষার্থীর বাসার সামনে অবস্থান করছেন।
তরুণী জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়িতে তার গ্রামের বাড়ি। তিনি ঢাকার উত্তরায় থাকেন এবং সেখানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যায়নরত।
তরুণী বলেন, ‘আমি বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি। ও আমায় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। গত তিন বছর ধরে আমাদের সম্পর্ক। আমি সর্বস্ব খুইয়ে এখন নিরূপায় হয়ে এখানে এসেছি। বিয়ে করে স্ত্রীর মর্জাদা দিয়ে ঘরে না তুললে এখানেই আত্মহত্যা করব। ’
এদিকে ১০ মে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরগুনার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত বিয়ের দাবিতে বরগুনার বেতাগীতে আসা জামালপুরের সেই তরুণীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ।
আইনজীবী সাইমুল ইসলাম রাব্বি জানান, শিখা আক্তার মৌ নামের ওই তরুণী জানিয়েছেন, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে তার গ্রামের বাড়ি। ঢাকার উত্তরায় থাকেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।
মৌয়ের দাবি, উত্তরার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তিন বছর প্রেমের পর সম্প্রতি বিয়ের কথা বললে নানা অজুহাতে মৌকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন মাহমুদুল। রোজার শুরুতে যুবকটি গ্রামের বাড়ি চলে আসেন।
এরপর গত ২৮ এপ্রিল মৌ বেতাগী উপজেলার চান্দখালীতে মাহমুদুল হাসানের বাসার সামনে অবস্থান নেন। তবে সে সময় মাহমুদুলের বাসা তালাবদ্ধ পান।
আইনজীবী রাব্বি আরও জানান, একপর্যায়ে ওই তরুণী যুবকের মামাকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়দের সহায়তায় তালা ভেঙে ওই বাড়িতে ঢোকেন। বিয়ের দাবি মেনে না নিলে সেখানেই আত্মহত্যার হুমকি দেন।
এরপর মৌয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মাহমুদুলের বাবা-মা বাড়িতে ফিরলে তাদেরও অবরুদ্ধ করেন।
মাহমুদুলের বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ওই মেয়ের আগে বিয়ে হয়েছিল এবং একটি সন্তান আছে। সে এসব তথ্য গোপন করেছিল। আমরা তাকে তালাকনামা দেখাতে, বৈধ অভিভাবক হাজির করতে ও গণমাধ্যমের সঙ্গে আর কথা না বলার শর্ত দেই। এসব শর্ত পূরণ করলে বিয়ের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেই।
‘সে শর্ত ভেঙে গণমাধ্যমে কথা বলা চালিয়ে যায় এবং তালাকনামা ও অভিভাবক না এনে উল্টো আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকে। এ অবস্থায় অনধিকার প্রবেশ, জিম্মি করে রাখা ও আত্মহত্যার হুমকির অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে ওই মেয়ের নামে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে মামলা করি।’
মোশাররফের আইনজীবী রাব্বি বলেন, ‘বিচারক বেতাগী থানাকে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছেন।’
তবে বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ‘আমি এখনও আদালতের আদেশ হাতে পাইনি। আদেশ পেলে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
এখনও মাহমুদুলের বাড়িতে অবস্থানরত মৌয়ের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার বক্তব্য নেই।’