Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শীর্ষ ২০ নেতাকে নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ মে ২০২২, ০২:২০ PM
আপডেট: ০১ মে ২০২২, ০২:২০ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


দলের বেশ কয়েকজন নেতার প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়ছে বিএনপিতে। কয়েকজন নেতার বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। সরকারের সঙ্গে এসব নেতার বিশেষ সম্পর্ক আছে—এমন ধারণাই এই সন্দেহের মূল কারণ। আবার নির্বাচনের আগে অথবা পরে জাতীয় সরকার গঠন নিয়েও বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের একাধিক শরিক ও ঐক্যফ্রন্টের মতের অমিল আছে। চিন্তার ফারাক আছে মিত্র হিসেবে পরিচিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের কারো কারো সঙ্গে।

সম্প্রতি একাধিক ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, ১৯৮৬ সালে এবং এক-এগারোর সময় দালাল দেখা গেছে। এখনো যারা বা যেসব দল রাতের সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে সহায়তা করছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

শীর্ষ পর্যায়ের এমন বক্তব্যে বিএনপির ভেতরে নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তা থেকে জানা গেছে, দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ২০ জন নেতাকে সরকারের সঙ্গে আঁতাত এবং তৃতীয় শক্তির উত্থান তৎপরতায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে বিএনপির সাবেক একাধিক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আছেন। তাঁদের একজন রাজধানীতে এমপিও ছিলেন। এই তালিকায় আছেন দলের তিনজন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, দুজন কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব, উত্তরাঞ্চলের একজন সংসদ সদস্য, খুলনার এক নেতা, ঢাকার প্রয়াত এক বিএনপি নেতার ছেলে, যুবদলের সাবেক এক নেতা, নারায়ণগঞ্জ জেলার দুজন নেতা, সিলেটের এক নেতা এবং দলের কয়েকজন সহসম্পাদক। এই নেতাদের কয়েকজন গত কয়েক মাসে ব্যাংকক, মালয়েশিয়া ও নেপালে পৃথক বৈঠক করেছেন বলেও তথ্য আছে বিএনপির কাছে। উত্তরায় সম্প্রতি হওয়া একটি বৈঠক নিয়েও দলে নানা আলোচনা আছে।

দলীয় সূত্র বলছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদকে দ্বিতীয়বার কারণ দর্শানো, আ ন ম এহছানুল হক মিলনের পদাবনতি এবং ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া ওই সন্দেহ-অবিশ্বাসের অংশ। সম্প্রতি টেলিভিশন টক শোতে বক্তব্য দেওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের কাছেও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে দল থেকে।

এর মধ্যে এহছানুল হক মিলন বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। নিয়মিত এলাকায় যাচ্ছি। ’ পদাবনতি নিয়ে কথা বলতে চাননি তিনি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতায় জড়িত, তাদের বার্তা দিয়েছেন দলের শীর্ষ নেতা। দল কী চাচ্ছে, এটা নেতাদের অনুধাবন করা উচিত। ’ তিনি বলেন, বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র আগেও হয়েছে। কিন্তু সরকার সফল হয়নি। পদবঞ্চিত হলেই দলের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রবণতাও ঠিক নয়।

জোটসঙ্গী এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব এবং গণফোরামের কয়েকজন নেতাকেও ভিন্ন চোখে দেখছে বিএনপি। গণ-অধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়ার বিষয়েও বিএনপি নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদল হয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অনুষ্ঠানে দলীয় নেতাদের উপস্থিত থাকতে নিষেধ করা হয়েছে আগেই।

গত মার্চে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি বলেছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনে ক্ষমতায় এলে সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। বিএনপি এখন এই পন্থা সামনে রেখেই কথাবার্তা বলছে।

কিন্তু সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আ স ম রব বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের উপস্থিতিতে নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান। শুধু রব নন, অলি আহমদ, গণফোরামের দুই অংশের নেতারা, গণ-অধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া, বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমও নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকারের পক্ষে কথা বলছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকারের দাবির পেছনে ষড়যন্ত্র আছে। কারণ জাতীয় সরকার হলে সেখানে আওয়ামী লীগও থাকবে। তাহলে তো শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এতে বিএনপির লাভ কী? যাঁরা এ ধরনের তৎপরতায় জড়িত তাঁরা হয় সরকারের, না হয় কোনো বিশেষ শক্তির হয়ে কাজ করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, বিএনপির কিছু নেতা একদিকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঐক্য বিনষ্টের জন্য সভা-সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি বলেন, এলডিপি জাতীয় সরকার চায়। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের নিজস্ব মতামত আছে। একটি দল তাদের নিজস্ব বক্তব্য প্রকাশ করলে তারা সরকারের দোসর হয়ে যাবে, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে এ ধরনের বক্তব্য পরিহার করতে হবে।

গত ২৭ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শওকত মাহমুদের উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে পেশাজীবী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীও ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে পেশাজীবীদের ব্যানারে সমাবেশ করায় শওকত মাহমুদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিএনপি। এর জবাবও দিয়েছেন তিনি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর ‘সরকারের পতনের’ লক্ষ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও জমায়েত করা হয়। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকায় শওকত মাহমুদকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তখন তিনি ক্ষমা চাওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

শওকত মাহমুদের অনুষ্ঠানে যাঁরা নেতাকর্মীদের পাঠাচ্ছেন এবং তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় বৈঠকে বসছেন, এমন নেতাদেরও এখন সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। কিছুদিন আগে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে সরকারের ওপর দেশি-বিদেশি নানা চাপ আছে বলে মনে করে বিএনপি। কিন্তু বিএনপি চাচ্ছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে না গেলে দলের বিক্ষুব্ধ অংশকে ভোটে নেওয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সরকার—এমন আলোচনাও বিএনপিতে আছে।

একইভাবে দেশি-বিদেশি শক্তিগুলো বর্তমান ব্যবস্থায় বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করছে। এ নিয়ে কিছু তৎপরতাও আছে। সেখানে আসন ভাগাভাগির মতো বিষয়ও আলোচনায় আসছে। সাম্প্রতিক এসব তৎপরতার সঙ্গে নানা কারণে ক্ষুব্ধ দলের কোনো কোনো নেতার যুক্ত হওয়ার তথ্য পাচ্ছেন বলে জানান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই সরকার দল ভাঙার চেষ্টা করে। এখন বিএনপি পুনর্গঠনের কাজ চলছে। তাই সরকার আরো মরিয়া হয়ে উঠেছে। সরকারের ফাঁদে যাতে কেউ পা না দেয়, সে জন্য দল থেকে নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি এখনো ঐক্যবদ্ধ আছে।

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

 

Bootstrap Image Preview