কুমিল্লার দেবীদ্বার এলাকায় আবেদনের পাঁচ বছর পরও বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি চার পরিবার। ফলে কুপিবাতি, হারিকেন, মোমবাতিই তাদের একমাত্র ভরসা।সরকারি সড়কের পাশে দুই ফুট ভেতরে প্রতিবেশী হুমায়ুন কবিরদের নিজস্ব জায়গায় বৈদ্যুতিক খুঁটিটি থাকায় তারা তাদের জায়গা থেকে বাবরি মিয়ার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছেন না। উপরন্তু বিদ্যুতের দাবি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অতীতের ন্যায় পিটিয়ে আহত করে ঘরে বসিয়ে রাখার হুমকি দেয় প্রতিপক্ষ।
ওই ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে পোনরা গ্রামের বাবরি মিয়ার পুত্র নাছির উদ্দিন বাদী হয়ে হুমায়ুন কবিরসহ আটজনকে অভিযুক্ত করে দেবীদ্বার থানায় একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।চার পরিবারের ১৭ জন অধিবাসী ও আট শিক্ষার্থীর লেখাপড়া চলে কুপি বা হারিকেনের আলোয়। প্রচণ্ড গরমে হাতপাখা পেলেও ইন্টারনেটসহ অধুনিক যুগের সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত এই পৌর নাগরিকরা।সরেজমিনে বাবরি মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ১০ বছর ধরে ওই বাড়ির চারপাশের লোকজন যখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত, ভোগ করছে আধুনিক সব সুবিধা, তখন বাবরি মিয়ার বাড়ি ডুবে আছে অন্ধকারে, বিদ্যুৎহীন মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।
বাবরি মিয়ার বড় ছেলে নাছির উদ্দিন জানান, তাদের বাড়িসহ ১১ পরিবার ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে আবেদন করে। বিদ্যুৎ অফিস থেকে ১১টি বৈদ্যুতিক মিটার অনুমোদন পেলেও প্রতিবেশী প্রভাবশালী হুমায়ুন কবির ও তার পরিবারের প্রতিরোধে তাদের চার পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। অভিযুক্ত হুমায়ুন কবির বলেন, 'আমি যেমন জমি কিনে বাড়ি করেছি, তেমনি বাবরি মিয়াও জমি কিনে বাড়ি করেছেন। আমার কেনা ১৫ শতক জমি মাঠ জরিপে ১২ শতক হয়ে যায়, আর বাবরি মিয়ার জমি ঠিক থাকে, এ কেমন করে হয়? আমার বাকি তিন শতক জমি বাবরি মিয়ার দখলে। ওই জমি যতক্ষণ না ফেরত দেবেন ততক্ষণ বিদ্যুৎ সংযোগ পাবেন না। '
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (কুমিল্লা) চান্দিনা-১-এর দেবীদ্বার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী দিপক কুমার সিংহ বলেন, 'বাবরি মিয়ার বাড়ির চার পরিবার এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। প্রায় চার দফা এজিএম, ঠিকাদার, পুলিশ, আমিসহ বিপুল জনবল নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। ওই বাড়ির প্রায় ৩০-৪০ জন মহিলা এসে অকথ্য ভাষায় গালমন্দই নয়, কাজ করতে গেলে বৈদ্যুতিক খুঁটি জড়িয়ে ধরে রাখে। কর্তব্যকাজে বাধাদানের অভিযোগে আমি নিজে বাদী হয়ে হুমায়ুন কবিরসহ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেছি। '
দেবীদ্বার থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (কুমিল্লা) চান্দিনা-১-এর জেনারেল ম্যানেজার মো. মুকবল হোসেন ক্ষোভের সাথে বলেন, 'আমার লোকজন ঠিকাদার এবং পুলিশ নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে চারবার গিয়েছেন। একটি পরিবারের প্রতিরোধে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। আমার লোকজন নিরাপত্তাহীন। বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ মালামাল ঘটনাস্থলেই পড়ে আছে। এ ব্যপারে ইউএনওকে অবহিত করা হয়েছে। এখন পুলিশের ভূমিকা কী তা আপনারা থানা পুলিশ থেকে জানতে পারেন। '
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক-উন-নবী তালুকদার বলেন, 'পল্লী বিদ্যুতের লোকজন যখন বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে যাবে তখন সমন্বয় করে যেতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, পল্লী বিদ্যুতের লোকজন একসাথে টাস্কফোর্স গঠন করে গেলে সমস্যা থাকার কথা নয়। আমাকে কখনো ওভাবে বলা হয়নি। '