Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

হেলমেট পরে নাহিদকে কারা পিটিয়েছে চিনতে পারছে না শিক্ষার্থীরা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২২, ০৪:১৭ AM
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২২, ০৪:১৭ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


রাজধানীর নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত নাহিদ মিয়াকে নিয়ে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, নিরীহ পথচারী হিসেবে সংঘর্ষে নিহত হন তিনি। নাহিদের পরিবারও দাবি করে, বাসা থেকে দোকানে যাওয়ার সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন নাহিদ। অথচ বিভিন্ন ভিডিও ও আলোকচিত্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সেগুলোতে দেখা যায়, ব্যবসায়ীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষে সরাসরি অংশ নেন নাহিদ। তিনি কখনও ছাত্রদের দিকে ইট ছুড়ছেন, কখনও বড় ছাতার আশ্রয় নিয়ে ছাত্রদের ছোড়া ইট থেকে নিজেকে রক্ষা করছিলেন।

একপর্যায়ে বিপরীত দিকে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের পক্ষে থাকা একদল হেলমেটধারী তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। নুরজাহান মার্কেটের সামনে মারধরের শিকার হন নাহিদ। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত সোয়া ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নাহিদের মৃত্যু ঘিরে বিভিন্ন তথ্য ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দাবি করা হচ্ছে ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে প্রাণ হারান তিনি। পরিবারও দাবি করছে, বাসা থেকে দোকানে যাওয়ার সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন নাহিদ।তবে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, নাহিদও ওই সংঘর্ষে যোগ দিয়েছিলেন।  ঢাকা কলেজের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশের নুরজাহান মার্কেটের সামনে মারধরের শিকার হন নাহিদ। সে সময়ের ভিডিও ফুটেজ এবং এর কিছু আগে ব্যবসায়ীদের পক্ষে নাহিদের সংঘর্ষে জড়ানোর বেশ কিছু আলোকচিত্র পেয়েছে । এসব ছবিতে নাহিদের উপস্থিতি তার প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও শনাক্ত করেছে।

এর একটিতে দেখা গেছে, হেলমেট পরা এক যুবক বেধড়ক পেটাচ্ছেন মাটিতে লুটিয়ে পড়া একজনকে। ফেসবুকে ভেসে বেড়ানো এই ভিডিও দেখে সন্তানকে চিহ্নিত করেছেন বাবা।

সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা জানিয়েছেন সেদিন এই পোশাকেই ছিলো নাহিদ। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও শিক্ষার্থীরা বলছেন, তারা হেলমেট পরাদের চিনতে পারছেন না। সন্তান হারানোর বিচার তিনি শুধু সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইবেন বলেও জানান। নাহিদের বাসা ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে। তিনি সাত মাস আগে বিয়ে করেছেন।

ভিডিওটির বিষয়ে জানতে ঢাকা কলেজের বিভিন্ন হলে ঘুরে দুজনকে পাওয়া যায়। কিন্তু ফুটেজ দেখিয়ে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পাশ থেকে কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

আরেকজন ঘটনার কাছাকাছি সময় সেখানে থাকার কথা স্বীকার করলেও হেলমেট পরা কাউকে চিনতে পারছেন না বলে দাবি করেন।

তবে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই বের হবে করা নাহিদকে পেটানোর ঘটনায় কারা জড়িত ছিলো।

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নুরজাহান মার্কেটের সামনে অবস্থান ছিল ঢাকা কলেজের ছাত্রদের। আর ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সামনে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। দুই পক্ষই একে অপরের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ছিল। একপর্যায়ে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ধাওয়ার মুখে ব্যবসায়ীরা পিছু হটে গাউছিয়া ও নিউ মার্কেটকে সংযুক্ত করা ওভার ব্রিজের নিচে চলে যান। আরেক অংশ চলে যায় ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং কমপ্লেক্সের দিকে।পরে ব্যবসায়ীরা সংগঠিত হয়ে ধাওয়া দিলে ছাত্ররা নূরজাহান মার্কেটের সামনে থেকে সরে বদরুদ্দোজা মার্কেট ও গ্লোব মার্কেটের দিকে চলে যান।

সংঘর্ষের সময়ের বিভিন্ন ছবিতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে ঘটনাস্থলে নাহিদকে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষে তাকে সংঘর্ষে অংশ নিতে দেখা যায়। তার পরনে ছিল ডি-লিংকের মনোগ্রামসংবলিত টি-শার্ট। তিনি কখনও ছাত্রদের দিকে ইট ছুড়ছেন, কখনও বড় ছাতার আশ্রয় নিয়ে ছাত্রদের ছোড়া ইট থেকে নিজেকে রক্ষা করছিলেন।একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা ১টার দিকে ব্যবসায়ীরা ছাত্রদের ধাওয়ার মুখে কিছুটা পিছু হটলে নূরজাহান মার্কেটের সামনে আটকে পড়েন নাহিদ। সকাল থেকেই ঢাকা কলেজের ছাত্রদের পক্ষে সংঘর্ষে অংশগ্রহণকারী হেলমেটধারীরা এ সময় তাকে বেদম মারধর করেন। আঘাতে ফুটপাতে লুটিয়ে পড়েন নাহিদ।

একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নূরজাহান মার্কেটের সামনের ফুটপাতে পড়ে আছেন নাহিদ। কালো হেলমেট পরা কেউ একজন তাকে আঘাত করছেন। পরে হলুদ হেলমেট পরা একজন কালো হেলমেটধারীকে জোর করে সরিয়ে নেন। ভিডিওতে যাকে দেশীয় অস্ত্র হাতে নাহিদকে পেটাতে দেখা গেছে, তিনি সংঘর্ষ শুরুর পর থেকেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন। একপর্যায়ে গুরুতর আহত নাহিদকে একপর্যায়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা।

সংঘর্ষে নিহত নাহিদদের বাসা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের মধ্য রসুলপুর এলাকায়। সে চাকুরি করতো এলিফ্যান্ট রোডের মাসুমা প্লাজার দ্বিতীয় তলায়। প্রতিষ্ঠানের নাম ডেটাটেক। কম্পিউটার বিক্রির এই প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারিম্যানের কাজ করতেন নাহিদ। প্রতিদিন সকাল ১০টার দিকে ডেটাটেক দোকানটি খোলা হয়। নাহিদও সাধারণত এ সময়ের মধ্যে অফিসে আসতেন। ঘটনার দিন সকাল ১০টার দিকে ডেটাটেকের ইনচার্জ ‍রেজাউল করিমকে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে নাহিদ জানান, তার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। দোকানে পৌঁছাতে ঘণ্টাখানেক লাগবে।

‍রেজাউল করিম জানান, দুপুর সাড়ে ১২টা বেজে গেলেও নাহিদ অফিসে না আসায় অপরিচিত ওই নম্বরে তিনি ফোন দেন। তখন নাহিদ জানান, নিউ মার্কেটে ঝামেলা হচ্ছে, যে কারণে তিনি আসতে পারছেন না। তখন রেজাউল অন্য দিকের রাস্তা ঘুরে নাহিদকে দোকানে আসতে বলেন। ডেটাটেকে নাহিদের সাথে কামরাঙ্গীরচরে জাহাঙ্গীর নামে আরও একজন ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করেন। 

এই বিষয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, আমি আর নাহিদ দুজন সাধারণত কামরাঙ্গীরচর থেকে নবাবগঞ্জ হয়ে নিউ পল্টন, ওখান থেকে রাইফেল স্কয়ার ৩ নম্বর গেট বা নিউ সুপার মার্কেটের ভেতর দিয়ে ঢুকি। আর নিউ সুপার বন্ধ থাকলে নীলক্ষেত মোড় হয়ে নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে দিয়ে গাউছিয়া, ইস্টার্ন মল্লিকা হয়ে এলিফ্যান্ট রোডের দোকানে আসি।’তবে মঙ্গলবার জাহাঙ্গীর ও নাহিদ একসঙ্গে দোকানের উদ্দেশে রওনা হননি। জাহাঙ্গীর  বলেন, ‘আমি ঘটনার দিন ওই পথ ধরেই আসছি। ও হয়তো গাউছিয়ার সামনে এসে মারামারি দেখে ওদের (ব্যবসায়ী) সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

ডেটাটেকের ইনচার্জ ‍রেজাউল করিম সংঘর্ষের সময়ের ভিডিও ও ছবি দেখে নাহিদকে শনাক্ত করে বলেন, “ছবিতে যে টি-শার্টটি দেখা যাচ্ছে, তা রাউটার কোম্পানি ডি-লিংকের। ওই টি-শার্ট আমরাই ওকে দিয়েছিলাম।”

একই বর্ণনা দিয়ে নাহিদের খালা মনিকা আক্তার বলেন, “সকালে অফিসে যাওয়ার কথা বলে এই টি-শার্ট পরেই নাহিদ বাসা থেকে বের হয়। যাওয়ার পথে মারামারি মধ্যে পড়ে। কারা মারছে আমরা জানি না।”

মামলার তদন্তকারীরা জানান, তারা ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সংগ্রহ করছেন। সেগুলো বিশ্লেষণ করে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।ডিএমপি নিউ মার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান  বলেন, ‘নাহিদ হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছি। ছবি, ভিডিও বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’

Bootstrap Image Preview