রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল বুধবার গভীর রাতে হত্যাসহ মোট তিনটি মামলা করা হয়েছে। পথচারী নাহিদ হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা এসব মামলায় ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকার মিলে মোট এক হাজার ৩০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসব মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
নিউমার্কেট থানায় তিন মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিউমার্কেট অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার শরীফ ফারুকুজ্জামান।
তিনি বলেন, পথচারী নাহিদ হত্যা মামলায় চারজন ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি আসামিরা অজ্ঞাতনামা। ভিডিও ফুটেজ ও তদন্তে এসব অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় আজ আহত যে দোকান কর্মচারী মারা গেছেন সে বিষয়ে আরেকটি মামলা হবে ।
নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ ম কাইয়ুম বলেন,
দুটি মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির। গতকাল (বুধবার) রাতে মামলা দুটি দায়ের হয়েছে। গুরুত্বসহ মামলা দুটি তদন্ত করে দেখছি।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় মোরসালিন (২৬) ও নাহিদ (১৮) নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। নাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
মঙ্গলবার সকালে আবারও সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে এবং লাঠি হাতে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরাও লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা নিউ মার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়। থেমে থেমে সারাদিন চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী-কর্মচারী আহত হন।
সংঘর্ষের রেশ চলে বুধবার দিনভর। দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। বিকেলে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখান করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। এরপর রাতে তারা সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট ডিসি, এডিসি ও নিউ মার্কেট থানার ওসির প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবি জানান।