Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাশিয়ার যুদ্ধ জাহাজ মস্কভা ডুবে যাওয়ার তাৎপর্য কী?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২২, ০৩:১২ PM
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২, ০৩:১২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর নামে নামকরনকৃত এবং দেশটির কৃষ্ণ-সাগরীয় রণতরী বহরের গর্ব রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কভা আগুনে পুড়ে ডুবে গেছে। সোভিয়েত যুগের জাহাজটি জর্জিয়া, সিরিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সময় কাজে লেগেছে এবং এমনকি শান্তির সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও সহায়তা করেছে। ইউক্রেনের সেনাদের দাবি তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই যুদ্ধ জাহাজটি ডুবে গেছে।

কী ঘটেছিল?

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে যে, মস্কভা আগুনে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং বন্দরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গিয়েছে।

এর আগে তারা বলেছিল যে, ‘গোলাবারুদের বিস্ফোরণ’ জাহাজটিতে আগুনের সূত্রপাত করে এবং নাবিকদের সরিয়ে নিতে বাধ্য করে’।

অন্যদিকে, ইউক্রেনের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন যে, জাহাজটির রাডার সিস্টেমগুলোকে সফলভাবে এড়িয়ে একটি নেপচুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে মস্কভাকে আঘাত করেছিল ইউক্রেনের সেনারা।

যুক্তরাষ্ট্রও বলছে যে, তারা ইউক্রেনের দাবির সত্যতার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে।

আগুন লাগার সময় জাহাজটি ইউক্রেনীয় বন্দর ওডেসা থেকে দূরে কোথাও কৃষ্ণ সাগরে অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাহাজটিতে সাধারণত ৫০০ জন নাবিক থাকত।

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার তাৎপর্য কী?

১২,৫০০ টন ওজনের মস্কভা বহু জাহাজ-বিধ্বংসী এবং সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং কৃষ্ণ সাগরে এটিই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধ জাহাজ। অন্য দুটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজ- মার্শাল উস্তিনভ এবং ভারিয়াগ, যথাক্রমে রাশিয়ার উত্তর এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের সঙ্গে মোতায়েন করা আছে।

দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (আইওডব্লিউ) বলেছে যে, ইউক্রেনের সেনারাই যুদ্ধজাহাজটি ডুবিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি তারা। তবে মস্কভা ডুবে যাওয়ার ঘটনা ‘ইউক্রেনের জন্য একটি বড় প্রচারণা বিজয়’। বিপরীতে, এই ঘটনা রাশিয়ান সেনাদের মনোবল কমিয়ে দিতে পারে।

তবে, সামরিক দিক থেকে রাশিয়ার জন্য এই ক্ষতি অতটা উল্লেখযোগ্য নাও হতে পারে।

আইওডব্লিউ জানিয়েছে, মস্কভা সম্ভবত ইউক্রেনের লজিস্টিক সেন্টার এবং এয়ারফিল্ড সহ সামরিক স্থাপনাগুলোতে কালিবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।

আইওডব্লিউ বলছে, ‘এই হামলাগুলো বেশ কার্যকর ছিল। কিন্তু বিমান হামলা এবং ভূমি থেকে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় সংখ্যায় সীমিত ছিল। মস্কভা হারানো রাশিয়ার জন্য বড় কোনো আঘাত হওয়ার সম্ভাবনা কম’।

রাশিয়ান সামরিক বিশেষজ্ঞরাও মস্কভা ডুবে যাওয়ার সামরিক তাৎপর্যকে খাটো করে দেখছেন।

রাশিয়ান সামরিক বিশ্লেষক আলেকজান্ডার খরামচিখিন রয়টার্স বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, জাহাজটি সত্যিই অনেক পুরোনো। প্রকৃতপক্ষে, গত পাঁচ বছর ধরেই জাহাজটি বাতিল করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল’।

‘বাস্তব সামরিক মূল্যের চেয়ে এর মর্যাদাগত মূল্য বেশি ছিল। আর বর্তমান অভিযানেও এর তেমন বড় কোনো ভুমিকা ছিল না। এটি ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না’।

মস্কভার ইতিহাস

১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে মার্কিন বিমানবাহী রণতরীগুলোকে মোকাবেলা করার জন্য এবং সাগরে সোভিয়েত জাহাজগুলোকে আকাশ প্রতিরক্ষা দেওয়ার জন্য যেসব জাহাজ তৈরি করা হয়েছিল মস্কভা তাদের একটি। সেই সময়ে জাহাজগুলোর ডাকনাম ছিল ‘ক্যারিয়ার কিলার’।

ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স ফার্ম জেনসের মতে, ১৯৭৯ সালের জুলাই মাসে ইউক্রেনের মাইকোলাইভ (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত) শিপইয়ার্ড থেকে এই যুদ্ধজাহাজটির যাত্রা শুরু হয়। সেসময় এর নাম ছিল স্লাভা। জাহাজটি ১৮৬ মিটার (৬১০ ফুট) লম্বা ছিল এবং অতিরিক্ত ৬২ জন অফিসার সহ ৪৭৬ জন কর্মীকে বহন করতে পারত। ১৯৮২ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে জাহাজটি রুশ নৌ-বাহিনীর জন্য কমিশন করা হয়।

স্লাভা ছিল কৃষ্ণ সাগরে সোভিয়েত নৌবহরের প্রধান যুদ্ধ জাহাজ। স্নায়ুযুদ্ধের সময় এর ডেক বন্দুক, টর্পেডো এবং মর্টারের পাশাপাশি পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। এতে একটি হেলিকপ্টার ডেকও ছিল।

১৯৯০-র দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর জাহাজটি মেরামত করা হয়েছিল। সে সময়ে রাশিয়ায় ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট চলছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে ইউক্রেন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০০৩ সালে জাহাজটির নাম পরিবর্তন করে মস্কভা রাখেন। পুতিন ১৯৯৯ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তৎকালীন ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ওই নামকরণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জাহাজটিতে উঠেছিলেন।

২০০৮ সালে জর্জিয়ায় রাশিয়ার হামলার সময় মস্কভা কৃষ্ণ সাগরে অভিযানে অংশ নিয়েছিল। জর্জিয়ার সরকার জানিয়েছে, মস্কভা জাহাজটিও তাদের দেশে হামলায় অংশ নিয়েছিল।

২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের সময় মস্কভা ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীকে অবরোধের সময় অংশ নিয়েছিল। পরের বছর মস্কভা সিরিয়ায় যুদ্ধরত রাশিয়ান বাহিনীর জন্য আকাশ প্রতিরক্ষা দেয়।

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর জাহাজটি ইউক্রেনের স্নেক আইল্যান্ডে হামলা চালায়। ওই হামলার পর অনলাইনে ভাইরাল হওয়া একটি অডিওতে আত্মসমর্পন না করা এক ইউক্রেনীয় সৈন্যকে জাহাজটির উদ্দেশ্যে গালাগালি করতে শোনা যায়। সেই ইউক্রেনীয় সেনাকে হত্যা করা হয়। সেখানে থাকা বাকী ইউক্রেনীয় সৈন্যরাও মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করে।

ওই ঘটনা ইউক্রেনের জন্য একটি বীরত্বের বিষয় হয়ে উঠেছে এবং দেশটি ওই ঘটনার স্মরণে পোস্টাল স্ট্যাম্পও প্রকাশ করেছে।

Bootstrap Image Preview