Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গোড়ান ক্লাবের আড্ডায় ক্লু রেখে যায় খুনি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২২, ০৪:২৩ PM
আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২, ০৪:২৩ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


প্রচলন আছে- খুনিও কোনো না কোনো আলামত রেখে যায়। এই কথা পুরোপুরি মিলে গেল শাহজাহানপুরের জোড়া খুনের ঘটনায়। কীভাবে কী প্রক্রিয়ায় গোয়েন্দারা শুটারের নাম-পরিচয় জানতে পারলেন, খুনের নেপথ্যে কী আছে? ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক কর্মকর্তার কাছে এমন প্রশ্ন রাখলে বেরিয়ে আসে চমকপ্রদ কাহিনি।

দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় হত্যা মিশন সফল করেই ২৪ মার্চ রাতে নিজ এলাকা গোড়ান ক্লাবে যায় শুটার মাসুম মোহাম্মদ। ক্লাবে প্রতিদিনের মতোই তার দীর্ঘদিনের পুরোনো বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছিল। তবে মাসুমের অভিব্যক্তি দেখে বন্ধুদের অস্বাভাবিক লাগছিল। আবার দ্রুত সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছিল মাসুম। এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে কথাও বলে। মূলত গোড়ান ক্লাবে বন্ধুদের সামনে সামান্য সময়ের ওই আচরণ ও কথা বলার ধরনের সূত্র ধরে মিলে গেল ঢাকায় চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্যের দ্বার খোলার প্রথম সূত্র।

এই মামলার তদন্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান, হত্যার পর ডিবির ছয় কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তারা শুরুতেই একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ দেখেন। কথা বলেন যারা ওই এলাকা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন এমন বাসিন্দা ও পুলিশের সোর্সদের সঙ্গে। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজ ধরে চলে বিশ্নেষণ। এতে তারা প্রথমে একমাত্র শুটারের দৈহিক গড়ন ও উচ্চতা সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা নেন। গোয়েন্দারা দেখেন, শুটারের গড়ন, উচ্চতাও ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির বেশি হবে। ফুটেজ বিশ্নেষণের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত তদন্তও শুরু করেন তারা। এরপর ঘটনার প্রথম রাতেই ওই এলাকার এক ব্যক্তির খোঁজ পান। তথ্য জানতে তাকে ডেকে আনা হয় গোয়েন্দা হেফাজতে। ওই ব্যক্তি মাসুমের দীর্ঘদিনের পরিচিত। ওই রাতে গোড়ান ক্লাবে মাসুমের অস্বাভাবিক আচরণের কিছু বর্ণনা গোয়েন্দাদের দেন তিনি। এর পরই মাসুমের নামটি সামনে আসে। তার বাসায় ওই রাতে খোঁজ নেওয়া হয়। এরপর দেখা যায়, মাসুম বাসায় নেই। কোথায় রয়েছে তাও পরিবারের সদস্যরা জানেন না। তখন তাকে ঘিরে সন্দেহ বাড়তে থাকে। এর পরই মাসুমের স্ত্রী দীনাকে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। স্বামীর অবস্থান সম্পর্কে তিনিও কোনো তথ্য দিতে পারেননি। এর পরই গোয়েন্দারা প্রযুক্তিগত ও সোর্সনির্ভর তদন্ত করে জানতে পারেন, ওই রাতেই ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর এলিয়ন গাড়ি নিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছে মাসুম। আর তার সহযোগীরা ভিন্ন রুট ধরে। এর পরই গোয়েন্দারা মাসুমকে ধরতে কাজ শুরু করেন। ঢাকা থেকে টিম চলে যায় জয়পুরহাট। সীমান্ত হয়ে পালাতে ব্যর্থ হয়ে মাসুম চলে যায় বগুড়া। রেজিস্ট্রারে নাম-পরিচয় না লিখেই সেখানের একটি অখ্যাত হোটেলে ওঠে। এক বন্ধু তাকে এতে সহায়তা করে। পরে বগুড়া পুলিশের সহায়তায় ঢাকার গোয়েন্দারা তাকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় খুব ধীরস্থির ও স্বাভাবিক ছিল সে।

এরপরই জানা যায়, হত্যা মিশন সফল করে দ্রুত শাহজাহানপুর ও মতিঝিল এলাকা ত্যাগ করার কৌশল নেয় মাসুম। আওয়ামী লীগ নেতা টিটুকে হত্যা করে শাহজাহানপুর থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে রাজারবাগ মোড়ে চলে যায়। এরপর মালিবাগ উড়াল সড়ক হয়ে বাংলামটরে এসে নামে তারা। বাংলামটর থেকে মগবাজার হয়ে হাতিরঝিলে ঢুকে পড়ে। বাড্ডার ইউলুপ হয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে দিয়ে বনশ্রী হয়ে গোড়ানে প্রবেশ করে। এরপর সেখানকার ছাপরা মসজিদের কাছে গিয়ে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল একজনকে হস্তান্তর করে ক্লাবে ঢোকে। মিনিট দশেকের মতো গোড়ান ক্লাবে ছিল মাসুম।

জানা গেছে, শুটারকে শনাক্ত করতে তার ওই বন্ধুসহ অন্তত ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মাসুমের স্ত্রী দীনা পুলিশকে জানান, স্বামীর সঙ্গে তিন মাস ধরে তার বনিবনা কম। এ কারণে তিনি গোড়ানে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক তাজমিলুর রহমান জানান, ঢাকার ডিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল সকালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১ নম্বর কক্ষে অবস্থান করছিল শুটার মাসুম। তার ছবি আগে থেকেই পাঠানো হয়েছিল। সেই ছবি দেখে মাসুমকে শনাক্ত করা হয়। ধরা পড়ার পর অকপটে সে আওয়ামী লীগ নেতা টিপুকে গুলি করে হত্যার কথা স্বীকার করে।

Bootstrap Image Preview