Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

২০৪০ সালেই ধ্বংস হয়ে যাবে মানবসভ্যতা, কম্পিউটার প্রোগ্রামের ভয়াবহ ভবিষ্যদ্বাণী!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২২, ০৫:১৯ PM
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২২, ০৫:১৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


১৭০৪ সালে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ আইজ্যাক নিউটন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ২০৬০ সালের মধ্যে কিংবা তার পরেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অদ্ভুত কিছু গাণিতিক সমীকরণের মাধ্যমে তিনি এই হিসাব বের করেছিলেন। বুক অব রিভিলেশন বা বাইবেলের বিভিন্ন লেখা গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন তিনি। আধুনিক যুগে মানুষের কাছে এটি খুব চমকপ্রদ মনে হলেও গবেষকরা কিন্তু বলেছেন ভিন্ন কথা! এই যেমন, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যালাটিন স্কুল অব ইনডিভিজুয়ালাইজড স্টাডিজের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্ট্যানলির মতে, "আধুনিক পদার্থবিদ্যার ভিত্তি স্থাপন ও জ্যোতির্বিদ্যার পথিকৃৎ হয়ে ওঠাই নিউটনের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ববহ ছিল না। তার আসল আগ্রহ ছিল প্রাচীন ধর্মগ্রন্থের পাঠোদ্ধার ও খ্রিস্টধর্মের সত্যপ্রকৃতি তুলে ধরার দিকে।"

তবে পৃথিবীর শেষ কবে তা জানার আগ্রহ শুধু যে নিউটনেরই ছিল, তা নয়। পরবর্তী ৩০০ বছরেও পৃথিবী ধ্বংসের ব্যাপারে হাজারো অনুমান করেছেন ধর্মীয় নেতারা। কিন্তু মজার ব্যাপার এই যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরাও তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা ও সম্পদের বিবেচনায়, জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই ক্ষমতাকে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসছেন।

বিজ্ঞানীদের অনুমানে কোনো প্রাচীন ইতিহাস বা ধর্মতত্ত্বের স্থান নেই। নেই মানুষ ও শয়তানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। যদিও মাঝেমাঝে প্লেগ বা অন্য কোনো মহামারি আসে বটে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা সেটিকে বাড়তি-উৎপাদন ও ভোগের ফলাফল হিসেবে ধরে নিচ্ছেন; সৃষ্টিকর্তার দেওয়া কোনো শাস্তি হিসেবে নয়। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, এতগুলো বছর পর এসেও নিউটনের ভবিষ্যৎ বাণীর মতো প্রায় একই তারিখকে পৃথিবী ধ্বংসের দিন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বর্তমান বিজ্ঞান!

'পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে' বললেই যেন আমাদের সামনে ভেসে ওঠে আধুনিক  সভ্যতার পতনের দৃশ্য: শিল্প-বাণিজ্য, বৃহৎ পরিসরে কৃষি উৎপাদন, সাপ্লাই চেইন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা, রাষ্ট্রপুঞ্জ… সবই কি ধ্বংস হয়ে যাবে?

ষাটের দশকের শেষদিকে বিত্তবান শিল্পপতি ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে গঠিত একটি এলিট সোসাইটি হলো 'ক্লাব অব রোম'। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই বেশ কয়েকবার এই ধ্বংসযজ্ঞের আভাস দিয়েছেন তারা। আর তাদের এই দূরদর্শীতার উৎস হলো এমআইটির একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম।

কম্পিউটিং এর পথিকৃৎ ও সিস্টেম থিওরিস্ট জে ফোরেস্টার এটির নির্মাতা। জে ফোরেস্টারের তৈরি 'গ্লোবাল সাসটেইনেবিলিটি বা বৈশ্বিক স্থায়িত্ব' মডেল বলছে, সভ্যতার পতন হবে ২০৪০ সালে! বিগ থিং এর পল র‍্যাটনারের ভাষ্যে, "সত্তরের দশকে কম্পিউটার যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, তার অনেক কিছুই এখন সত্যি হচ্ছে।"

এসব ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও দূষণ বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে যাওয়া, প্রাকৃতিক সম্পদ হ্রাস পাওয়া… বাকিটা পাঠক আন্দাজ করেই নিতে পারেন। জে ফোরেস্টার রচিত বই 'আরভাব ডায়নামিকস (১৯৬৯)' ও 'ওয়ার্ল্ড ডায়নামিকস (১৯৭১)' বইয়েও পাওয়া যাবে এর আভাস। 

নিউটনের মতো বাইবেল বা ধর্মতত্ত্বে অতটা আগ্রহী না হলেও, মনমানসিকতার দিক থেকে তার সাথে জে ফোরেস্টারের মিল ছিল। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "আমি মনে করি আমার লেখা বইগুলো ঠিকই আছে।" তবে তিনি এও সতর্ক করেছেন যে, বৈশ্বিক নানা ইস্যু একটি অপরটির সাথে আন্তঃসম্পর্কিত। তাই পদ্ধতিগত চিন্তা না করলে এসব সমস্যার সমাধান মিলবে না।

যুগ যুগ ধরে মানুষ সমস্যার প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে গেছে, কিন্তু তাদের কার্যক্রমই যে সমস্যা সৃষ্টি করছে তা উপলব্ধি করেনি। আর এই দুষ্টচক্রই পৃথিবীকে আরও অশুভ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এখনকার বৈজ্ঞানিক মডেলগুলো আমাদের যে বার্তা দিচ্ছে তা ই আমাদের ভবিষ্যত। তাই সামনে যে আরও কঠিন দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সূত্র: ওপেন কালচার 

Bootstrap Image Preview