নিজের দেশের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য অনেকেই গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকেন। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শত্রু দেশের গোপন তথ্য জানতে গুপ্তচর পাঠিয়ে থাকে। অন্য দেশে নিজেদের কাজ করে সেখান থেকে আবার নিজের দেশে ফিরে আসেন গুপ্তচরেরা। তবে শত্রু দেশের হাতে ধরা পড়লে প্রাণও যেতে পারে এসব গুপ্তচরদের। ইতিহাসে এমন নজির অনেক আছে।
দ্য সানের খবরে বলা হয়, এসব গুপ্তচরেরা খুব একটা সাধারণ হন না। বিশেষ কিছু দক্ষতা তাদের অসাধারণ এবং অসামান্য করে তোলে। বেশিরভাগ গুপ্তচরই নিজেদের বুদ্ধিমত্তা এবং কর্মক্ষমতার জন্য পরিচিত। তবে আজ যে গুপ্তচরের কথা বলা হবে, তার বিশেষ দক্ষতা জানতে পারলে আপনিও অবাক হবেন।
এ গুপ্তচরের নাম আলিয়া রোজা। তার জন্ম অবিভক্ত সোভিয়েত রাশিয়ায়। সম্প্রতি তিনি দাবি করেন, ভ্লাদিমির আমলে তিনি রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তি করতেন। অনেকে তাকে রাশিয়ার ‘মাতা হারি’ বলে থাকেন। তবে তার পরিণতি বাস্তবের মাতা হারির মতো হয়নি।
রোজার বিশেষ দক্ষতা কী ছিল?
রুশ গুপ্তচর হিসেবে মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকেই তিনি জানতেন, কীভাবে কাউকে প্রলুব্ধ করে নিপুণভাবে নিজের কাজে ব্যবহার করতে হয়। এ জন্য তাকে শিখতে হয়েছিল, অন্যকে কীভাবে যৌন ফাঁদে ফেলতে হয়।
মস্কোর কাছে একটি সামরিক কেন্দ্রে মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকে তিনি গুপ্তচর হওয়ার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। কাউকে যৌন আবেদনের মাধ্যমে প্রলুব্ধ করে কী করে নিজের কাজ হাসিল করতে হয়, মূলত সেটাই তাকে শেখানো হয়েছিল।
রোজার যখন ২০ বছরের বেশি বয়স, তখন তাকে প্রথম বিশেষ একটি অভিযানে পাঠানো হয়েছিল। মাদকচক্র এবং মানব পাচারকারীদের ধরার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছিল।
রোজা বলেন, আমার যখন ১৮ বছর বয়স, তখন আমাকে একটি সামরিক একাডেমিতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই আমি সব বিশেষ কৌশল শিখেছি। আমাকে শেখানো হয়, কীভাবে অন্যদের প্রলুব্ধ করা যায়, কী ভাবে ফাঁদে ফেলে নিজের কাজে লাগানো যায়। এ ছাড়াও কীভাবে বিভিন্ন ধরনের বন্দুক থেকে গুলি করতে হয়। মার্শাল আর্টের কৌশলও শিখতে হয়েছিল।
রোজা জানান, নিজের পরিবারের কারণেই তিনি এ সামরিক একাডেমিতে যোগ দেন। রোজার দাদু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশের জন্য লড়াই করে জাতীয় নায়কের তকমা পান। এমনকি রোজার নাম স্তালিনগ্রাদের মনুমেন্টে খচিত আছে। এই বিষয়টি তার পরিবারের জন্য অত্যন্ত গর্বের বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোজা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা। তবে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই। তবে তিনি দাবি করেছেন যে, তার ডান চোখের উপর একটি দাগ গুপ্তচর হিসেবে কাজ করার প্রমাণ। গুপ্তচর পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর একদল অপরাধীর সঙ্গে হাতাহাতি করার সময় চোট লেগে এ ক্ষতটি তৈরি হয়।
রোজা যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা হলেও তার পরিবার এখনও রাশিয়াতেই বসবাস করে। তবুও রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে কিয়েভের সমর্থনে এসেই দাঁড়িয়েছেন রোজা। রোজার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অতি সত্বর ইউক্রেনের আকাশে রাশিয়ার বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত।
রাশিয়ার পেট্রল এবং গ্যাসেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিৎ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। রাশিয়ার অধিকাংশ জনগণ যুদ্ধের বিপক্ষে থাকলেও তারা সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন বলেও তিনি দাবি করেন।