Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বোদা, চুমাচুমি, সোনাপোতা নাম নিয়ে এতো বিড়ম্বনা কেন?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ মার্চ ২০২২, ০১:৩৯ PM
আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২, ০১:৩৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


নামে কি-ই বা আসে যায়! মনীষীরা এ কথাই বলে এসেছেন বটে যে নামের চেয়ে কর্মের গুরুত্ব বেশি, তা সে মানুষের হোক কি স্থানের। কিন্তু নামে আসলেই এসে যায়- অন্তত তেমনটাই দেখা গেছে সম্প্রতি। বিশেষ করে কোন জায়গার নাম যদি হয় কিছুটা বিব্রতকর, কিংবা তার যদি দ্বৈত মানে থাকে, অর্থাৎ অন্য কোন অঞ্চলে ঐ একই শব্দের হয়ত ভিন্ন অর্থ প্রচলিত থাকতে পারে।

এজন্যই হয়ত বাংলায় আরেকটি প্রবচন চালু আছে, ''এক দেশের বুলি আরেক দেশের গালি।'' বাংলাদেশে বেশ কিছু স্থানের নাম আছে এমন দ্বৈত অর্থের বা বিব্রতকর শব্দবন্ধ দিয়ে, সেগুলো নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে।

যেসব নাম নিয়ে দুশ্চিন্তা: 

যেসব জায়গার নাম নিয়ে বেশি আপত্তি উঠেছে, তার মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা, নওগাঁর পত্নীতলা, খুলনার সোনাপোতা, রাঙ্গামাটির চুমোচুমি, ঝিনাইদহের চুলকানি বাজার, চাঁদপুরের ল্যাংটার হাট, টাঙ্গাইলের মহিষমারা, ফেনীর ছাগল নাইয়া থানা, গাইবান্ধা জেলা, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা, এবং ঢাকার ভূতের গলি উল্লেখযোগ্য।

পঞ্চগড়ের বোদা:  উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পঞ্চগড়ের একটি উপজেলার নাম বোদা। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই শব্দটি নারীর প্রজনন অঙ্গের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই নামটি নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে অনেকের। সেখানকার বাসিন্দা ও বাইরে থেকে সেখানে থাকতে যান এমন অনেকেরই আপত্তি রয়েছে, জায়গাটির ব্যাপারে।

ফেসবুক পাতায় যারা মন্তব্য করেছেন, তাদের একটি বড় অংশ এই উপজেলার নাম নিয়ে নিজেদের অস্বস্তির কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে, বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নে উপজেলা পরিচিতি অংশে লেখা আছে, এক সময় বোদা উপজেলায় 'বদেশ্বরী' নামে একটি মন্দির ছিল, যার নামানুসারে ঐ এলাকার নামকরণ হয়।

বোদা ও ভোদা : কোন শব্দের অর্থ কি?

 

বোদা: বোদা দেশি শব্দ। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বোদা শব্দের অর্থ স্বাদহীন, বিস্বাদ প্রভৃতি। স্থান ও নাম বিশ্লেষণে অর্থ পাওয়া যায় – জ্ঞানী, বোদ্ধা, পণ্ডিত, ঈশ্বর, বোয়াল মাছ প্রভৃতি। এক্ষেত্রে ‘বোদ্ধা’ বা ‘জ্ঞানী’ শব্দ হতে ‘বোদা’ শব্দের উদ্ভব। (যেমন‍ঃ বুদ্ধ ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ বোদা(জ্ঞানী, পণ্ডিত)। ঢাকার যানজট জীবনটাকে বোদা (বিস্বাদ) করে দিলো। বোদা (বোয়াল মাছ) মাছটি ধরতে অনেক কষ্ট হলো।)

অনেকের মতো, ‘বোদা’ শব্দটি গৌতম বুদ্ধের সংক্ষিপ্ত নাম ‘বুদ্ধ’ শব্দের আঞ্চলিক রূপ। এছাড়াও বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলায় ‘বোদা’ নামের একটি উপজেলা রয়েছে।

ভোঁদা: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘ভোদা’ বানানের কোনো শব্দ নেই। তবে ‘ভোঁদা’ বানানের একটি শব্দ আছে। অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত দেশি ‘ভোঁদা’ শব্দের অর্থ – স্থূলকায়, মোটা, মাংসল, স্থূলবুদ্ধি, বোকা, হাবাগোবা ইত্যাদি। (যেমনঃ ভোঁদা (স্থুলকায়) ছেলেটির হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। ছেলেটি এত ভোঁদা (হাবাগোবা) যে, নিজের নামটিও ভালোভাবে বলতে পারে না।)

সূত্রঃ
১. বাংলা ভাষার মজা(২), পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি., ড. মোহাম্মদ আমীন
২. সমার্থক ও সমোচ্চারিত শব্দের অর্থভেদ: প্রয়োগ ও প্রমিত প্রয়োগ, ড. মোহাম্মদ আমীন

 

চুমাচুমি প্রাথমিক বিদ্যালয়: রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম, চুমাচুমি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক তামাশা প্রচলিত রয়েছে। নাম নিয়ে বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা বিবিসির সঙ্গে শেয়ার করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, এই নামটি এসেছে সেখানকার একটি নদী থেকে। জুরাছড়ি উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বিরো চাকমা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, সুবলং নদীটির চাকমা নাম শলক নদী। সেখানে দুইটি উপনদী মুখোমুখি হয়েছে জুরাছড়িতে।

মুখোমুখি শব্দটিকে চাকমা ভাষায় বলা হয় 'সুমোসুমি', যা দুইটি উপনদীর মুখোমুখি হবার সংযোগস্থলকে নির্দেশ করে। কালক্রমে সুমোসুমি শব্দটি বিকৃত হয়েই এই চুমোচুমি বা চুমাচুমি নামটি এসেছে।

সোনাপোতা:  খুলনা জেলা শহরে অবস্থিত একটি জায়গায় নাম সোনাপোতা। সোনা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ধাতব পদার্থের নাম, সন্দেহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এ শব্দটি আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে পুরুষ জননাঙ্গের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খুলনা জেলা শহরে এই নামে বেশ কয়েকটি স্কুল এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে নিঃসন্দেহে নামটি নিয়ে অনেকেরই অস্বস্তি রয়েছে। কিন্তু খুলনা শহরের পুরনো বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহরের যে অংশের নাম সোনাপোতা, আগে সেই জায়গাটির নাম ছিল ময়লাপোতা। কারণ সেখানে একটি বড় ময়লার ডিপো ছিলো, পরবর্তীতে আশির দশকে ঐ জায়গার নামকরণ করা হয় সোনাপোতা।

পরিবর্তনের বিপক্ষে যুক্তি: সামাজিক মাধ্যমে দেয়া পোস্টের ওপর যেসব কমেন্ট পড়েছে, তার একটি বড় অংশ জায়গার নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের যুক্তি ওইসব এলাকায় যারা জন্মেছেন ও বেড়ে উঠেছেন, তাদের কাছে হয়ত নামগুলো আলাদা করে বিব্রতকর নয়, যে কারণে তাদের কাছে নামগুলো স্বাভাবিক শোনায়। এছাড়া তাদের আরেকটি যুক্তি হচ্ছে, প্রতিটি নামের পেছনে একটি ইতিহাস থাকে, যা সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকার কারণেই নামগুলো বিকৃত করে মানুষ। ফলে নাম পরিবর্তন না করে তাদের প্রস্তাব হচ্ছে প্রতিটি নামের সঠিক ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করা হোক্।

Bootstrap Image Preview