Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইউক্রেনের পথে পথে প্রবল প্রতিরোধ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০৪:৪১ AM
আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০৪:৪১ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ইউক্রেনীয়দের কেউ নববধূর হাত ছেড়ে, কেউ সদ্যোজাত সন্তান রেখে, কেউ বা না খেয়ে বন্দুক হাতে হামলাকারী রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধে প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করছেন। দেশটিতে রাশিয়ার হামলার চতুর্থ দিনও গতকাল কিয়েভের রাস্তায় রাস্তায় প্রচণ্ড লড়াই হয়েছে। কামানের গোলা আর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মুহুর্মুহু কেঁপে উঠছে ঘরবাড়ি।

বিশ্বের প্রবল চাপ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দেশে দেশে বিক্ষোভ, নিষেধাজ্ঞার বোঝা উপেক্ষা করে কিয়েভ দখলে নিতে অনড় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভদ্মাদিমির পুতিন তার বাহিনীকে হামলা চালিয়ে যেতে বলেছেন। এ পর্যন্ত আড়াইশর বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হেনেছে রুশরা। তবে যেমনটি আশঙ্কা ছিল, কয়েক ঘণ্টায় কিয়েভের পতন হবে, তা হয়নি। উল্টো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল দাবি করেছেন, পুতিনের পরিকল্পনা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। অনেক রুশ সেনা গ্রেপ্তার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেছেন, প্রবল প্রতিরোধের মুখে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছে রুশ বাহিনী। যদিও এসব দাবির পক্ষে নিরপেক্ষ তথ্যপ্রমাণ নেই।

কিয়েভের প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে এক ভিডিও বার্তায় বলিষ্ঠ কণ্ঠে জেলেনস্কি তার দেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর প্রতি রাশিয়াকে প্রতিহতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। জেলেনস্কি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন- মস্কোর পক্ষ থেকে এমন দাবি করার পর তিনি এই বার্তা দেন। তিনি বলেছেন, আমি কিয়েভেই আছি, থাকব ও লড়াই করে যাব। একই বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পশ্চিমা নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, 'আমাকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া লাগবে না। আমাদের এখন অস্ত্র চাই।' ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য করতে এবং রাশিয়াকে পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এরপর কিয়েভের মেয়র নগরীতে সোমবার পর্যন্ত কারফিউ জারি করেন। কয়েক ঘণ্টা পর মস্কো আবার দাবি করে, জেলেনস্কি ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছেন। সর্বশেষ এই দাবির বিষয়ে ইউক্রেনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় কিয়েভের পতন হতে পারে। গতকাল ক্রেমলিন দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের ৮০০ সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এ দিন তাদের হাতে পতন হয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নগরী মেলিটোপোলের। অন্যান্য সামরিক স্থাপনায় ক্রুজ মিসাইল হামলা চালানো হচ্ছে।

ইউক্রেন অভিযোগ করেছে, কিয়েভে বেসামরিক ভবনেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। এতে হতাহতও হয়েছে। তবে মস্কো এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে প্রাণহানি ও ধ্বংসের খাতা বড় হচ্ছে। ইউক্রেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, রাশিয়ার হামলায় ১৯৮ জন বেসামরিক ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছেন। তবে প্রতিরোধ যুদ্ধে তিন হাজার ৫০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছেন।

রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছে এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ। প্রতি মুহূর্তে এই সংখ্যা বাড়ছে। জরুরি উদ্ধারকারী বাস-ট্রেনে করে জীবন বাঁচাতে কিয়েভ ছাড়ছে মানুষ। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী হতে পারে।

শুক্রবার ইউক্রেনীয় সেনাদের জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পুতিন আহ্বান জানালেও তার মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা আলোচনার একটি প্রবণতা ছিল। তবে জেলেনস্কি শর্তহীন বৈঠকে বসার বিষয়ে অবিচল থাকায় এই আলোচনা হবে কিনা, তা এখন দোলাচলের মধ্যে পড়েছে। যদিও পরে জেলেনস্কির মুখপাত্র সের্গি নিকিফোরভ জানান, অস্ত্রবিরতি ও শান্তির জন্য তারা আলোচনায় প্রস্তুত।

নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পুতিনকে নিস্তার করতে ব্যাপক সামরিক তৎপরতাও শুরু করেছেন পশ্চিমা নেতারা। রাশিয়ার সীমান্তঘেঁষা ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোতে শুক্রবার কয়েক হাজার সেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের পর ন্যাটোর এ ধরনের পদক্ষেপ এটিই প্রথম। ফলে ইউক্রেন পরিস্থিতির গতিপথ কী হতে পারে- সমাঝোতা নাকি আরও বড় যুদ্ধ, তা এখন বলা সম্ভব নয়।

ইউক্রেন আরও অস্ত্র পাচ্ছে: রাশিয়াকে মোকাবিলায় জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ২৭টি দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ইইউ। শুধু জার্মানিই এক হাজার ট্যাঙ্কবিধ্বংসী অস্ত্র ও ৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনকে আরও ৩৫ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক।

যুদ্ধ দীর্ঘ হবে- মাখোঁ: ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গতকাল প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে তার দেশের কৃষকদের সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘ হবে। ফলে আপনাদের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে, তবে এগিয়ে যেতে হবে। এ দিন ইংলিশ চ্যানেলে প্রাইভেটকার বহনকারী একটি রুশ জাহাজ জব্দ করার দাবি করেছে প্যারিস।

দেশে দেশে বিক্ষোভ: রাশিয়ার হামলা বন্ধের দাবিতে গতকালও দেশে দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার দূতাবাসের সামনে বহু মানুষ জড়ো হয়ে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। টোকিও থেকে সিডনি পর্যন্ত বিক্ষোভে ধ্বনিত হয়েছে- এ অন্যায্য যুদ্ধে জয়ী হবে ইউক্রেনই।

মোদিকে জেলেনস্কির ফোন: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে শুক্রবার ইউক্রেনে হামলায় রাশিয়ার নিন্দা করে আনা প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে ভারত। এরপর গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন জেলেনস্কি। তবে মোদি তাকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান।

গুজব যুদ্ধও হচ্ছে: হামলা-পাল্টা হামলায় ক্ষয়ক্ষতি, যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে উভয় পক্ষে অনলাইনে গুজব ছড়াচ্ছে। হামলাকারী ও যোদ্ধাদের হতাহতের সংখ্যা, কিয়েভের পতন, ক্ষয়ক্ষতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তৈরি করা ছবি ও পুরোনো ছবি-ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ অবস্থায় অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ দমনে রাশিয়া ফেসবুকে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে এবং টুইটার বন্ধ করে দিয়েছে।

Bootstrap Image Preview