অমর একুশে গ্রন্থমেলায় মাস্ক না পরায় এক নারীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা রানী কর্মকার জরিমানা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় সারা দেশে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ ঘটনা তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে বিস্ময় প্রকাশ করেছে নেটিজেনরা।
প্রশ্ন উঠেছে, মেয়েটি জরিমানা দিতে সম্মত হয়, কিন্তু ভিডিও করতে নিষেধ করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে বারবার অনুরোধ করে। তারপরও ম্যাজিস্ট্রেট অন্যদের ভিডিও ধারণ করতে নিষেধ না করে এভাবে জরিমানা করতে পারেন কি না, কারও অসম্মতিতে ভিডিও করা যায় কি না, ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে দেওয়া আইনসম্মত কি না।
অপরদিকে ম্যাজিস্ট্রেটের টিমে থাকা এক নারী সদস্যের মুখে মাস্ক না থাকার ছবি নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। নেটিজেনরা বলছে, যে ম্যাজিস্ট্রেট নিজের টিমের সদস্যদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারে না, সে জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য জরিমানা করে কীভাবে? এর আগে গত বছর মার্চে যশোরের মনিরামপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তিন বৃদ্ধকে কান ধরিয়ে উঠবস করানোর ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে তীব্র সমালোচনার মুখে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে প্রত্যাহার করা হয়।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দর্শনার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি না এবং মাস্ক পরছেন কি না, সেটা নিশ্চিত করতে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। শনিবার আদালত ৬ জন দর্শনার্থী ও প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিকে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় অপরাধের মাত্রা বুঝে অর্থদণ্ড করেন। বইমেলায় হওয়া এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা রানী কর্মকার। কিন্তু একজন নারীকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগে দণ্ড দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এটা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
ভিডিওতে দেখা যায়, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা রানী কর্মকার ওই নারীকে মাস্ক না পরার অপরাধে ২০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন। এ সময় ওই নারী বারবার ম্যাজিস্টেটকে বলছিলেন, ভিডিও করা হচ্ছে এগুলো বন্ধ করে আপনি আমার সঙ্গে কথা বলুন। আপনি আমাকে পাবলিক প্লেসে হ্যারাজ করছেন। তখন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আমি ভিডিও করছি না। এটা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম। আদালত চলছে।
ভিডিওর শেষ পর্যায়ে দেখা যায়, মেয়েটি একা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছে, সাধারণত কাউকে আটক করলে যেমন দেখা যায় তেমন। অনেকেই বলছেন, ‘মিডিয়ার সামনে দণ্ড প্রদানের ক্ষমতা আইন ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়নি। তিনি এমন করতে পারেন না।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘ভিডিওতে যতটুকু দেখলাম মাস্ক না পরার কারণে মেয়েটা তার ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে বিরোধিতা করেছে সেটা হলো ভিডিও করা নিয়ে। আমার মনে হয় সে দিক দিয়ে মেয়েটা সঠিক ছিল। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বইমেলায় এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা রানী কর্মকার। অভিযানের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মানুষকে সচেতন করতেই এ অভিযান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সাদেকা হালিম বলেন, ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, আমিও দেখেছি। যখন কোর্টে কোনো বিচার হয়, তখন কি সেটা আমরা ভিডিও করে প্রচার করতে পারি, মিডিয়া ট্রায়াল করতে পারি, পারি না। মোবাইল কোর্ট চলার সময় ভিডিও করা যাবে কিনা, সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা মিডিয়ায় প্রচার করা যাবে কি না সেটা প্রশাসনকে স্পষ্ট করা দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রাইভেসি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না সেটাও দেখা দরকার।