Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

অবশেষে প্রকাশ হলো ‘জিনের’ রাস্তা তৈরির রহস্য

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০১:০৪ PM
আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০১:০৪ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ঢাকার ধামরাইয়ে রাতারাতি একটি গ্রামের রাস্তা তৈরি নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। তৈরি হয়েছে নানা গল্প। অশরীরী শক্তি এর পেছনে- এমন কথা চাউর হয়ে গেছে এরই মধ্যে। তবে টানা দুই দিনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ঘটনার আসল রহস্য।

ধামরাই উপজেলার বালিয়া ও আমতা ইউনিয়নের দুই গ্রামের সংযোগ সড়কটি মাটি কেটে নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। কামারপাড়া-বড় নারায়ণপুর শাখা সড়কটি পুরোটাই কৃষি জমি বা চকের মধ্য দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু রাস্তার শেষ প্রান্তে এসে আইপি গ্লোবাল নামে কারখানার কেনা জমির বাউন্ডারির কারণে কাজ অসমাপ্তই থেকে গেছে। প্রায় ২০০-২৫০ ফুট রাস্তা পাকা রাস্তার সঙ্গে সংযোগ দেয়া হয়নি এখনও।

তবে গত সোমবার গভীর রাতে কে বা কারা ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে নির্মাণাধীন রাস্তাটির সঙ্গে আরেকটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে। তবে কারা এই কাজ করেছে নিশ্চিত করে সে বিষয়ে কেউ কিছু না বলতে পারলেও ভেকু দিয়ে রাস্তা তৈরির কথা জানিয়েছেন গ্রামবাসী।

একজন কৃষক জানিয়েছেন, রাতের আঁধারে যে ভেকু দুটি দিয়ে মাটি কেটে আরেকটি রাস্তা বানানো হয়েছে, তার একটির মালিক বালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং অপরটির মালিক স্থানীয় আলমগীর।

কামারপাড়া এলাকার বাসিন্দা একটি জাতীয় দৈনিকের ধামরাই প্রতিনিধি ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য তার জমির পাশ দিয়ে নিতে সুপারিশ করেছেন বলে জানিয়েছেন বালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহমেদ হোসেন। জিনের উদাহরণ দিয়ে রাতারাতি সংযোগ সড়কটি নির্মাণের ঘটনায় সেই সাংবাদিকই প্রতিবেদন লিখেছেন।

উপজেলা প্রকল্প অফিসের তথ্য মতে, প্রায় এক বছর আগে তিন হাজার ২০০ ফুট কাঁচা রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় পৌনে ২ লাখ টাকা।

গ্রামের বাসিন্দাদের ভাষ্য, বহুকাল থেকে তারা এই চকে চাষাবাদ করে আসছেন। কিন্তু চক থেকে কৃষকদের বাড়ি অনেক দূরে হওয়ায় ফসল নিয়ে যাওয়াসহ চলাচলে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। এ কারণে কামাড়পাড়া থেকে বড় নারায়ণপুর পর্যন্ত চকের মধ্য দিয়ে একটি সংযোগ সড়ক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ইউনিয়ন পরিষদ।

কিন্তু চকের মধ্য দিয়ে রাস্তাটি সোজাসুজি বড় নারায়ণপুর পাকা রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা ঘুরিয়ে অন্য দিক দিয়ে নেয়া হয়েছে। মূলত সেই সাংবাদিকের জমির পাশ দিয়ে রাস্তা নিতেই এমনটা করা হয়েছে।

রাস্তা ঘুরিয়ে নেয়ায় অনেক কৃষকের জমির ওপর দিয়ে যাওয়ায় ক্ষতি বেশি হয়েছে। তারপরও কোম্পানির জায়গার কারণে রাস্তাটার কাজ শেষ করা হয়নি।

এখন কে বা কারা রাতের আঁধারে আগের প্রস্তাবিত সোজা অংশ দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করেছে। দুই পাশের ফসল নষ্ট করে জমির মাটি কাটায় আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক কৃষক।

বড় নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে চকের মধ্যে এটা আইল ছিল। সবার সুবিধার জন্য একটি ৭-৮ ফুট রাস্তা বানানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। সে জন্য ওই সাংবাদিক সবার অনুমতি চায়।

‘আমরা নিজেও জমি দিতে রাজি হই। কিন্তু প্রথমে যে দিক দিয়ে রাস্তা বানানোর কথা সেটা না করে রাতারাতি অন্য দিক দিয়ে সাপের মতো পেঁচিয়ে রাস্তা বানানো হয়। সেটা আমরা দেখিনি। এতে আমার জমির তিন পাশে প্রায় ১০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর হঠাৎ করে গত ১৪ তারিখ রাতে আবার সেই পুরাতন মাপ নেয়া জায়গায় ভেকু দিয়ে ফসলসহ মাটি কেটে সোজাসুজি রাস্তা বানানো হয়।’

‘এতেও আমার ৫ শতাংশের মতো জমি নষ্ট হলো, দুইবারই আমাদের কিছুই জানানো হয়নি- আক্ষেপ করে বলছেন ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘এবার তো কেউ স্বীকারই করছে না কে বানাল রাস্তা। চেয়ারম্যান, কৃষি কর্মকর্তা, মেম্বার সবাইকে জানিয়েছি। তারা বলেছে, রাস্তা না চাইলে মাটি সরিয়ে ফেলতে। হঠাৎ করে এমন রাস্তা বানানোয় আমার ধান ও সরিষা ক্ষেতের অনেক লোকসান হলো।’

ফজলুর বলেন, ‘ওই চকের দুই পাশে দুইটা রাস্তা আছে। এক পাশে ইটের সলিং, আরেক পাশে পাকা রাস্তা। মূলত চকের মধ্যে আইল দিয়ে চাষবাসের ফসল নেয়া হতো। এখন সাংবাদিক নিজের জমি ফরোয়ার্ড করার জন্য ওই রাস্তা বানাইছে। ওখানে কোনো রাস্তা দরকারই ছিল না।’

জিন রাস্তা বানিয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি হেসে বলেন, ‘এটা তো বাচ্চা পোলাপান দেখলেও বুঝবে ভেকু দিয়ে মাটি তুলে রাস্তা বানানো হয়েছে। শুনেছি দুইটা ভেকু রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত মাটি কেটে রাস্তা বানিয়েছে।’

বালিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আহমদ হোসেন বলেন, ' আসলে রাস্তা যে দিক দিয়ে নেয়া হইছে, ওখান দিয়া যাওয়ার কথা ছিল না। রাস্তাটা সোজা বড় নারায়ণপুর রাস্তার সাথে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কামাড়পাড়ার সাংবাদিকের রিকোয়েস্টে আমি বাঁকা করে রাস্তাটা একটু ঘুরায় নিছিলাম। ওর একটা জমি আছে ওইটার পাশ দিয়া নিছিলাম।

‘কিন্তু একটা ফ্যাক্টরি জায়গা কিনছে, তারা মাঝখান দিয়া রাস্তা দিল না। বাধা দেয়ার কারণে রাস্তাটার সংযোগ হলো না। ২০০-২৫০ রাস্তা ইনকমপ্লিট রাইখাই দুই-তিন দিন আগে আমি আইসা পড়ছি। কিন্তু ৩-৪ দিন আগে শুনলাম আগে সোজা যেদিক দিয়া রাস্তা হওয়ার কথা ছিল, ওই দিক দিয়াই রাত্রে বেলা নাকি কানেকশন দিছে। তবে কানেকশনটা কারা দিছে সেটা আমি সঠিক বলতে পারলাম না। কাউরে খুঁইজা পাওয়া যাচ্ছে না।'

রাতে যে দুইটা ভেকু দিয়া কৃষি জমির মাটি কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে তার মধ্যে একটি আপনার কি না এমন প্রশ্নে বলেন, 'তা আমি বলতে পারলাম না। তবে হতে পারে আমি জানি না। আমার ভেকুর ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করব আমাকে না জানায় সে গেছিল কি না।’

তিনি আরও বলেন, 'রাস্তা যেখান দিয়ে হয় ভালো। কিন্তু মানুষ চায় কি জানেন? তারা চায় প্রত্যেকের জমির পাশ দিয়া রাস্তা হোক। আরও রাস্তা হলে সমস্যা তো নাই। আর যাদের জমি থেকে রাতে মাটি কেটে রাস্তা বানাইছে তাদের তো কোনো অভিযোগ নাই।'

ধামরাই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, ‘এটা সরকারি বরাদ্দের রাস্তা। প্রায় দেড় কিলোমিটারের মতো। পত্রিকায় এটা নিয়ে একটা ফালতু, ভুয়া ও মনগড়া রিপোর্ট করছে। এই রাস্তার ব্যাপারটা নিয়ে আমার কোনো বক্তব্যও নেয়া হয়নি।’

আইপি গ্লোবাল কারখানার প্রকৌশলী মঈনুল ইসলাম খান শান্ত বলেন, 'ইউনিয়ন পরিষদের রাস্তা হবে রাস্তার জায়গায়। আমাদের জায়গায় আমরা আছি। আমাদের সঙ্গে তো ওইটার কোনো সম্পৃক্ততা নাই।'

সূত্রঃ নিউজবাংলাইমতিয়াজ উল ইসলাম

Bootstrap Image Preview