Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

দেশে যারা মদ খাওয়া ও বিক্রির অনুমতি পাবেন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:৪৯ PM
আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১২:৪৯ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


দেশে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮’ থাকলেও সেই আইনের আওতায় কোনো বিধিমালা ছিল না। এবার অ্যালকোহল বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মদপান, ক্রয়-বিক্রয়-মজুতসহ সব দিক নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।

মূলত অন্যান্য মাদকের চাহিদা কমানো, চোরাচালান বন্ধ করে রাজস্ব আয় বাড়ানো, ভেজাল রোধসহ নানা কারণে ‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২’ প্রণয়ন করা হয়েছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনে করেন, এই বিধিমালার ফলে শৃঙ্খলা ফিরবে এ খাতে। পাশাপাশি এর বাস্তবায়নের জন্য পুরো মনিটরিং ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

যা আছে নতুন বিধিমালায়

২১ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তিকে মদ্যপানের পারমিট বা অনুমতি দেয়া যাবে না। এর বেশি বয়সী যে কেউ পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে। একজন পারমিটধারীর কাছে এককালীন সর্বোচ্চ তিন ইউনিট এবং মাসে সর্বোচ্চ সাত ইউনিটের বেশি অ্যালকোহল বিক্রি করা যাবে না। তবে বিশেষ পারমিটধারীর কাছে এই পরিমাণ অ্যালকোহল এককালীন বিক্রি করা যাবে। একই ব্যক্তির নামে একই মেয়াদে বিদেশি এবং দেশি অ্যালকোহলের পারমিট ইস্যু করা যাবে না। পারমিটধারী ক্লাব মেম্বাররা ক্লাবের নির্ধারিত স্থানে বসে মদ্যপান করতে পারবেন।

হোটেল, রেস্তোরাঁয় বা যেসব স্থানে সাধারণ খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি অ্যালকোহল সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও পরিবেশন করা হয়, তারা বার স্থাপনের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবে।

কোনো এলাকায় ১০০ জনের দেশি মদ বা বিদেশি মদের পারমিটধারী থাকলে ওই এলাকায় অ্যালকোহল বিক্রির লাইসেন্স দেয়া যাবে। কোনো ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন অ্যালকোহল পারমিটধারী থাকলে ওই ক্লাবকে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।

বিধিমালার অধীনে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, ডিউটি ফ্রি শপ ও প্রকল্প এলাকায় নির্দিষ্টসংখ্যক বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে। যেমন ক্লাব ও রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে একটি করে আবার পাঁচতারকা বা তার চেয়ে বেশি মানসম্পন্ন হোটেলে সাতটিরও বেশি বারের লাইসেন্স দেয়া যাবে। ইপিজেড, থিমপার্ক বা সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পে যেখানে বিদেশি নাগরিক থাকবে, সেখানে বার স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া যাবে।

বিদেশি মদ আমদানি বা রপ্তানির জন্য আবেদন করা যাবে। বিদেশি মদের জন্য ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যে ব্র্যান্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন নেয়া হবে, শুধু সেই ব্র্যান্ডের অ্যালকোহল আমদানি করতে হবে। তবে পর্যটন করপোরেশন, বার বা সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ অ্যালকোহল আমদানি করতে পারবে না। যেসব ক্লাবে মদ্যপানের পারমিটধারী সদস্যের সংখ্যা ২০০ বা তার চেয়ে বেশি, সেসব ক্লাব তাদের চাহিদার ৪০ শতাংশ আমদানি করতে পারবে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না এমন ইথাইল অ্যালকোহল, অ্যাবসলিউট অ্যালকোহল, রেক্টিফাইড স্পিরিট, স্ট্রং অ্যালকোহল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেথিলেটেড স্পিরিট এবং শিল্প, গবেষণাগার ও অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার্য অ্যালকোহল আমদানি করা যাবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন কোনো দেশ থেকে অ্যালকোহল আমদানি করে বিদেশি মদ উৎপাদন করা যাবে।

সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ ও যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল ব্যবহার ছাড়া বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না। সরকার নির্ধারিত বিয়ার ছাড়া অন্য কোনো বিয়ার উৎপাদন করা যাবে না।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ নিজ বাসায় মদ্যপান করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রচার কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নিলাম ডাকের মাধ্যমে চোলাই মদের মহালের সংখ্যা ও অবস্থান নির্ধারণ করতে হবে।

অ্যালকোহল (মদ বা মদজাতীয় পানীয়) পান এবং অ্যালকোহল ব্যবহার ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনুমোদন নিতে হবে। এ ছাড়া অ্যালকোহল বহন এবং অ্যালকোহল পরিবহনের ক্ষেত্রে পাস নিতে হবে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যেকোনো একটি বা একাধিক পথে অ্যালকোহল বহন বা পরিবহন করা যাবে। তবে পাসের ওপর অবশ্যই বহনপথ লিপিবদ্ধ থাকতে হবে।

বিধিমালা বাস্তবায়নে কতটা জোর দেয়া হবে জানতে চাওয়া হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, ‘এই বিধিমালা সরকারের ও অধিদপ্তরের জন্য একটি মাইলফলক। নীতিমালায় যা আছে, আমাদের তা-ই বাস্তবায়ন করতে হবে। আগে নীতিমালা ছিল না, তখন আমরা ইচ্ছে হলে কখনও মনিটর করেছি, কখনও করিনি। কিন্তু এখন যেহেতু আইন হয়েছে, এটি বাস্তবায়ন না করার সুযোগ নেই। যেভাবেই হোক, এটি বাস্তবায়ন করতে হবে, এটি আমাদের জন্য শিরোধার্য।’

এটির বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে চান তিনি। তিনি বলেন, “আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সে জন্য এখন আমাদের আগের নিয়মেই ম্যানুয়াল মনিটরিং চলবে। তা ছাড়া পুরো মনিটরিং ব্যবস্থা ডিজিটাল করার পরিকল্পনা আমার রয়েছে। আমি একটি ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করতে চাই, যেখানে যিনি মদ পান করবেন তার থেকে শুরু করে প্রতিটি বার এবং তাদের অ্যালকোহলের মজুত সম্পর্কে তথ্য থাকবে। এতে করে ঘরে বসে আমি সব তথ্য পাব। আমার পারমিটধারী কতজন, কে কোথায় বসে মদ পান করছেন, কাদের কতটুকু স্টক আছে– সব হিসাব ডাটাবেজে থাকবে। ডিজিটালাইজেশনের আগ পর্যন্ত আগের মতোই আমাদের ইন্সপেক্টর, ডিডি, এডিরা মনিটর করবেন।’

বিধিমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় সম্পর্কে আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, ‘বিধিমালা মাত্র পাস হয়েছে। আমরা যতক্ষণ এর বাস্তবায়নের জন্য মাঠে কাজ করা শুরু না করব, ততক্ষণ এটি বাস্তবায়নে কোনো বাধা বা অন্তরায় আছে কি না তা বোঝা যাবে না। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।’

মদে ভেজাল মেশানো যাবে না– বিধিমালায় এমন কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ভেজাল রোধে মনিটরিং ছাড়া অন্য কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া নেই। তাই মদে ভেজাল মেশানো রোধে মিথাইল অ্যালকোহলের রং পরিবর্তন করার প্রস্তাব রাখবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব করব যেন মিথানল বা স্পিরিটের রং পরিবর্তন করে দেয়া হয়। কারণ মিথানল আর ইথানল একই রঙের হওয়ায় কোনটা মদ আর কোনটা বিষ সেটা বোঝা যায় না। সে জন্য না জেনে ইথানলের জায়গায় মিথানল পান করে অনেক প্রাণহানি হয়। আমরা প্রস্তাব করব, আমদানি করা মিথানলগুলোর রং পোর্টেই যাতে পরিবর্তন করে দেয়া হয়। তাহলে আর এসব ভেজাল মদ তৈরি করার সুযোগ থাকবে না।’

এই নীতিমালা শতভাগ প্রয়োগ করা গেলে অ্যালকোহল গ্রহণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে মত দিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

Bootstrap Image Preview