ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া আরও সৈন্য পাঠিয়েছে এবং যে কোনো সময় আগ্রাসন চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। শুক্রবার তিনি এই সতর্কবার্তা দেন।
ব্লিনকেন বলেন, ওয়াশিংটন ইউক্রেন দূতাবাস থেকে স্টাফ সরিয়ে নিচ্ছে এবং নতুন করে মার্কিন নাগরিকদেরকে অবিলম্বে ইউক্রেন ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার শক্তিবৃদ্ধির কিছু উদ্বেগজনক কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছি। ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার নতুন বাহিনী জড়ো হচ্ছে। আমরা আগে যেমনটি বলেছি, আমরা এমন এক জায়গায় আছি যেখানে যে কোনো সময় আগ্রাসন শুরু হয়ে যেতে পারে। আর স্পষ্ট করে বললে, বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকস চলার এই সময়েও তা হতে পারে
ঠান্ডা যুদ্ধের পর থেকে ইউক্রেন নিয়ে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর মধ্যে উত্তেজনা একেবারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি মহলের পক্ষে দাবি করা হয়েছে যে ইউক্রেন সীমান্তের কাছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ফৌজি জমায়েত করেছে রাশিয়া। শুধু তাই নয়, ‘লাইভ ফায়ার ড্রিলস’-এর জন্য (সামরিক মহড়া) ‘বন্ধু’ দেশ বেলারুশে ট্যাঙ্ক নিয়ে গিয়েছে মস্কো। পাঠানো হয়েছে একজোড়া পারমাণবিক বোমারু বিমান।
রাশিয়ার সেই ‘লাইভ ফায়ার ড্রিলস’-এর কয়েক ঘণ্টা পরই বাইডেনের যে সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে, তাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বের অন্যতম বড় সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করছি। এটা অত্যন্ত আলাদা পরিস্থিতি এবং দ্রুত পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে উঠতে পারে।’ তবে বাইডেন জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো পরিস্থিতিতেই ইউক্রেনে বাহিনী পাঠাবেন না। তার কথায়, ‘সেটা বিশ্বযুদ্ধ হয়ে যাবে। আমেরিকান এবং রাশিয়ানরা যখন একে অপরকে গুলি করতে শুরু করেন, তখন আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন দুনিয়ায় চলে যাই।’
তারইমধ্যে ‘লাইভ ফায়ার ড্রিলস’-এর পর ন্যাটোর তরফে রাশিয়াকে কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। ন্যাটো জানিয়েছে, রাশিয়া যেভাবে ক্ষেপণাস্ত্র, অস্ত্রশস্ত্র এবং মেশিন গান থাকা জওয়ানদের মোতায়েন করছে, তা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের তিন দশক পরে ইউরোপের জন্য ‘বিপজ্জনক’ পরিস্থিতি তৈরি করছে। সেই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ এড়াতে তৎপরতা শুরু করেছে পশ্চিমী দেশগুলিও।
ইউক্রেন সীমান্তে আরও রুশ সেনা মোতায়েন
ইউক্রেন সীমান্তে আরও সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি কোম্পানি মাক্সার টেকনোলজিস স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নেওয়া কিছু ছবি প্রকাশ করে এ দাবি করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি—বুধ ও বৃহস্পতিবার (৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ছবিগুলো নেওয়া হয়েছে। যেখানে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চল ও বেলারুশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে রুশ সেনা মোতায়েনের চিত্র ধরা পড়েছে। খবর রয়টার্সের। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স মাক্সার টেকনোলজিসের ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে অবস্থান করা মার্কিন নাগরিকদের দ্রুত দেশটি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বাইডেন বলেছেন, সবকিছুই দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে কোনো সৈন্য পাঠাবে না যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারেও সেখানে সেনা পাঠানো সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সীমান্তে এক লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া। তবে দেশটিতে মস্কোর হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই। সাবেক সোভিয়েত মিত্র দেশটি যাতে ন্যাটো জোটে যুক্ত না হয়, তা নিশ্চিতে রেডলাইন নির্ধারণ করে রাখতে চায় মস্কো।
অন্যদিকে বেলারুশের সঙ্গে সামরিক মহড়া শুরু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়া-বেলারুশের বড় ধরনের সামরিক মহড়ার কারণে সাগরে প্রবেশ করতে পারছে না তারা।