Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

পোশাকে আপত্তি, পরিবারকে 'একঘরে', ভুল বুঝতে পেরেছে মসজিদ কমিটি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০১:১৩ PM
আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০১:১৩ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


বিদেশে পড়তে যাওয়া এক তরুণীর স্বাধীনচেতা চলাফেরা ও অমুসলিম ছেলেকে বিয়ে করার জন্য মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘটনায় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে মসজিদ কমিটি। এ জন্য কমিটি দুঃখ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন কুলাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী। 

কুলাউড়া এই ঘটনাটি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে এলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও গ্ৰামের মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউএনও।  বৈঠকে কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ দেব, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকের বিষয়ে ইউএনও ফরহাদ চৌধুরী বলেন, দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়াও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, তারা বয়স্ক মানুষ, ইন্টারনেট চালাতে পারেন না। এলাকায় রটে যায় যে ঝর্ণা একটি হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছেন। তাই তার বাবাকে তারা (মসজিদের সভাপতি ও সম্পাদক) ডাকায়, কিন্তু উনি না আসায় তারা বলেন যে উনি উনার মতো চলুক, আমরা আমাদের মতো চলব।  

ইউএনও আরও বলেন, তবে আজ তারা ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঝর্ণার বাবার কাছে। সেই সঙ্গে লিখিত দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে আর এমন কিছু করবেন না। ঝর্ণার পরিবারও খুশি হয়েছেন, তারাও লিখিত দিয়েছেন যে তারা এখন খুশি। 

উল্লেখ্য উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া নুরুননাহার চৌধুরী ঝর্ণার জীবনাচার নিয়ে আপত্তি তুলে কয়েকদিন আগে দেশে তার পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ঝর্ণার বাবা হাজি আব্দুল হাই চৌধুরী বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে জানান। 

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ঝর্ণা চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, আমি কী পোশাক পরব, কার সঙ্গে ছবি তুলব, কার সঙ্গে চলব সেটা আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অধিকার। সেটা তো আমাকে এলাকার লোক নির্ধারণ করে দিতে পারে না। মসজিদ কমিটির লোকজন অতি উৎসাহী হয়ে অনধিকার চর্চার মাধ্যমে আমার পরিবারকে একঘরে করে দিয়েছে। এসব নারীবিদ্বেষী, মৌলবাদীদের অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম। তবে অভিযুক্তরা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছের লোক হওয়ায় তার কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। 

যেভাবে ঘটনার শুরু: ঝর্ণা চৌধুরীর বাবা ইউএনও’র কাছে লিখিত যে অভিযোগ দিয়েছেন তা থেকে জানা যায়, ঝর্ণা ২০০৮ সাল থেকে ‘পজিটিভ জেনারেশন অব সোসাইটি বাংলাদেশ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ২০১৩ সাল থেকে সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। নারী অধিকার, নারী শিক্ষা নিয়ে স্থানীয়ভাবে নানা রকম কর্মসূচি হাতে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এসবের জন্য এলাকার কিছু মানুষ তাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতেন। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান ঝর্ণা। সেখানে তার সংগঠনের চেয়ারম্যান জয়তূর্য চৌধুরীসহ কয়েকজন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগতদ জানাতে আসেন। তাদের সঙ্গে ছবি তুলে তা ফেসবুকে প্রকাশ করেন ঝর্ণা। যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া এবং ফেসবুকের এই ছবি নিয়ে স্থানীয় অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

মেয়ের যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে জয়তূর্য চৌধুরীর সঙ্গে চলাফেরা এবং ছোট কাপড় পরার কারণও জানতে চাওয়া হয় তার বাবার কাছে। 

এরপর স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সামছুল ইসলাম মাখন ও সাধারণ সম্পাদক আমিন মিয়া, কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা শেখ টি এম মাছুম, এলাকার প্রবীণ বাবলু মিয়া, পংকি মিয়া, পাখি মিয়াসহ অনেকে ঝর্ণার বিচার করার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঝর্ণার বাবাকে কমিটির সভায় উপস্থিত থাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি মেয়ের হয়ে তার বাবাকে দোষ স্বীকার করে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছিল।  

মসজিদের কমিটির ডাকে উপস্থিত না হওয়ায় ২৮ জানুয়ারি সভা করে ঝর্ণার বাবাকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন মসজিদ কমিটির লোকজন। 

Bootstrap Image Preview