Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

তিস্তার পানি বন্টন: ভারত বিলম্ব করলে বিকল্প পথে হাঁটবে বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০২২, ০৬:৪৭ PM
আপডেট: ২৮ জানুয়ারী ২০২২, ০৬:৪৭ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


সমস্ত সীমান্ত বিরোধের দীর্ঘ মেয়াদী শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি স্বরূপ ২০১৫'র ৬ জুন ভারত ও বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। করোনা মহামারী সত্ত্বেও ভারতীয় নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের সময় বাংলাদেশে উপস্থিত থেকেছে। এই ঘটনাগুলি প্রতিবেশী দেশের প্রতি ভারতের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতিকে আবারও নিশ্চিত করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যত গতিপথের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে। কিন্তু এই বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের মধ্যেও দুই দেশের মধ্যে রয়ে যাওয়া একটি দীর্ঘ বিবাদের সমাধান সূত্র এখনো অধরা রয়েছে- তা হলো তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বিরোধ। এই সমস্যার সমাধান হলে শুধু বাংলাদেশ উপকৃত হবে না, সব দিক থেকে দু দেশই লাভবান হতে পারে।

পূর্ব হিমালয়ের পানহুনরি পর্বতমালায় উৎপন্ন তিস্তা নদী যা ব্রহ্মপুত্রের একটি উপনদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তিস্তা নদীর বিরোধ উদ্ভূত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের পরে, যখন ভারতকে তিস্তা নদীর অববাহিকায় নিয়ন্ত্রণকারী এলাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ১৯৭২ সালে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়। ১৯৮৩ সালে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে একটি অ্যাড-হক মীমাংসা হয়েছিল যেখানে স্থির হয় ভারত তার ৩৯ শতাংশ পানি পাবে এবং বাংলাদেশ পাবে ৩৬ শতাংশ।বিগত বছরগুলিতে বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও সেই অর্থে কোনো সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসেনি। ২০১১ সালে ভারত সরকার বাংলাদেশের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিল যেখানে তারা তিস্তার পানির ৩৭.৫ শতাংশ বাংলাদেশকে দিতে সম্মত হয়েছিল এবং নিজের জন্য রেখেছিল ৪২.৫ শতাংশ। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কঠোর বিরোধিতার কারণে এই চুক্তিটি কখনই বাস্তবায়িত হয়নি।

বাংলাদেশ একটি নদীপ্রধান দেশ হওয়ায় দ্বিপাক্ষিক পানি বণ্টন ইস্যুতে খুবই সংবেদনশীল। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম রংপুর অঞ্চলের কৃষি ও জীবিকা মূলত তিস্তার পানির উপর নির্ভরশীল। তিস্তা সমস্যার একটি ফলপ্রসূ সমাধান শুধু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত করবে না বরং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতেও সাহায্য করবে। কিন্তু ভারত দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার কোনো সম্ভাব্য সমাধানের পথ খুঁজতে ব্যর্থ। প্রায় ১২ বছর আগে ২০১০ সালে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুটি আলোচিত হয়। সেখানেও এর সুরাহা হয়নি। নিজেদের মধ্যে মোট ৫৪ টি নদী ভাগ করে নিলেও, ভারত ও বাংলাদেশ গত ২৬ বছরে পানি বণ্টন নিয়ে একটিও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেনি।

সংকট নিরসনে ভারতের দীর্ঘস্থায়ী উদাসীনতা বাংলাদেশকে চীনের দিকে টেনেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে যেখানে তারা একটি একক ব্যবস্থাপনাযোগ্য চ্যানেল গঠনের উদ্দেশ্যে তিস্তা নদীর বড় অংশ ড্রেজিং এবং বাঁধ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ভারত এই অঞ্চলে যেকোনো ধরনের চীনা অন্তর্ভুক্তির তীব্র বিরোধিতা করেছে কারণ তারা চায় না যে ভারতের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশ 'শিলিগুড়ি করিডোর'-এর কাছাকাছি কোথাও চীন থাকুক। এ বিষয়ে ভারতের দীর্ঘ নীরবতার কারণে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এখনও পর্যন্ত চীনের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন কিন্তু বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এখনও তাদের সব বিকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।

প্রায়ই বলা হয় যে বাংলাদেশ ও ভারত বর্তমানে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি সুবর্ণ সময় প্রত্যক্ষ করছে। বাংলাদেশ ইস্যুতে চীনের সহযোগিতা গ্রহণ করার আগে ভারতের উচিৎ বিরোধের নিস্পত্তি করার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা এখনও ভারতকে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং মিত্র হিসাবে বিবেচনা করে। ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে শেখ হাসিনা তিস্তা নদী বণ্টন সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত আগ্রহী। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে খুব বেশি দেরি হলে বাংলাদেশ বিকল্প পথ ভাবতে পারে।

তিস্তা চুক্তি ভারতীয় শিবিরকেও দারুণভাবে উপকৃত করবে। এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি যদি এগিয়ে যায় তাহলে এটি বাংলাদেশের সকল স্টেকহোল্ডারদের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে।ভারত অবশ্যই বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী মিত্র হিসেবে তার অবস্থানকে শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে এবং একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। সুতরাং, বিষয়টিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া এবং বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ‘সুবর্ণ সময়’কে ভারতের সর্বোত্তম স্বার্থে কাজে লাগানো উচিত।
 

Bootstrap Image Preview