Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

ডাকাতির ঘটনায় ডাক্তারের মামলা কেন নেয়া হলো না জানতে চেয়েছেন আইজিপি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০২২, ১০:৪৫ AM
আপডেট: ২৮ জানুয়ারী ২০২২, ১০:৪৫ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী ডা. শফিকের মামলা কেন নেয়া হলো না জানতে চেয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে কর্মকর্তাদের সাথে অভ্যন্তরীণ সভায় ডা. শফিকের মামলা না নেয়ার বিষয়ে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন তিনি। এসময় দ্রুত মামলা নেয়ার নির্দেশ দেন আইজিপি।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার জানান, ডাকাতির ঘটনা শুরুর জায়গা ঢাকা জেলার অধীনে হওয়ায় মামলা নেয়নি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দুটি থানা। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা তাদের ব্যাখ্যা দেন। কর্মকর্তারা জানান, ঘটনা তদন্ত ও ডাকাতদের শনাক্তে কাজ শুরু হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে কর্মস্থল টাঙ্গাইলে যাওয়ার সময় দূরপাল্লার বাসে ডাকাতের কবলে পড়েন ডা. শফিকুল ইসলাম। ১০ ঘণ্টা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা পশ্চিম থানা গেলে কোনো থানাই মামলা নেয়নি তার। 

এর আগে ফেসবুক পোস্টে শফিকুল ইসলাম সজিব লিখেছেন, মহাসড়কে চলাচলকারী একটা বাস ১২ ঘণ্টা ধরে ঢাকা শহরে সারারাত ঘুরে ডাকাতি করে, কিন্তু ঢাকা সিটির কোনো চেকপোস্ট সেটি থামায় না, বিষয়টা খুবই ভাবনার।

একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রাতে যাতায়াত না করার এবং কাউন্টার ছাড়া অন্য কোনো জায়গা থেকে বাসে না ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার জরুরি প্রয়োজনে ঢাকায় গিয়েছিলেন শফিকুল। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার পর ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে যাওয়ার বাস না পেয়ে এক বন্ধুকে নিয়ে রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল্লাহপুরে যান তিনি। উদ্দেশ্য, অন্য কোনো বাসে টাঙ্গাইলে যাওয়া। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর ঢাকা-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একটি বাস পেয়ে সেটিতে ওঠেন তারা। বাসটা একটু অন্ধকার ও ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল তাদের কাছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাসচালকের হেলপার জানান, বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমাচ্ছেন। এছাড়া আরও যাত্রী পথ থেকে উঠবেন।

এর কিছুক্ষণের মধ্যে বাসটি নির্জন একটা জায়গায় পৌঁছালে সাত-আটজন গলায়, পেটে ছুরি ধরে তাদের জিম্মি করে। এর মধ্যে কেউ একজন বলে ওঠেন, এ বাসের সবাই ডাকাত। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে শফিকুল আত্মসমর্পণ করে ওদের বলেন, যা আছে নিয়ে যান। কিন্তু কোনো ক্ষতি করবেন না।

এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা শফিকুলের তিনটি মোবাইল ফোন, দুটি এটিএম কার্ড, দুটি ওয়ালেট, বিকাশ ও কার্ডের পিন নম্বর নেয়। সেই সঙ্গে তাকে বিকাশ থেকে টাকা দিতেও বাধ্য করে ডাকাত দল।

সবকিছু কেড়ে নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের চোখ-হাত-পা বেঁধে ফেলে। হাত-পা-চোখ সব বাঁধা থাকায় অ্যাজমা রোগী শফিকুলের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তার ব্যাগ থেকে ডাকাতদের ইনহেলার দিতে বললেও তারা দেয়নি। তখন মৃত্যুভয়ে শফিকুল শুধু কলেমা পড়ছিলেন। তার মনে হচ্ছিল, বাচ্চাদের মুখ বুঝি আর দেখা হলো না।

এর মধ্যে আশপাশের লোকজনের গোঙানির শব্দ আসছিল শফিকুলের কানে। সব নিয়েও নির্যাতন করছিল ডাকাত দল। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে চন্দ্রার আগে কবিরপুর এলাকায় শফিকুলের বন্ধুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দেয় তারা। এরপর শফিকুলকে মারতে মারতে পেছনে নিয়ে যায় ডাকাতেরা। সারা রাতে অন্তত ৮০টি থাপ্পড় মারা হয়েছে তাকে। ওই বন্ধু পরে শফিকুলের স্বজনদের খবর দেন। একটা সময় বাসটি অনেকক্ষণ থামিয়ে রাখা হয়। এর মধ্যে বাসচালকের হেলপার পরিচয়ে একজন তার চোখ ও হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দেন।

তার দাবি, তিনি (হেলপার) নিজে আর বাসচালকও ভুক্তভোগী। ডাকাত দলের লোকজন যাত্রী সেজে তাদের বাসে উঠে সেটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল। এ জায়গাটি যাত্রাবাড়ীর কাছে বুঝতে পেরে শফিকুল বাসটি যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যেতে বলেন চালককে।

চালক ও হেলপার প্রথমে রাজি হলেও পরে বলেন, মামলা করলে বাস থানায় আটকে রাখবে। মালিকের সঙ্গে পরামর্শ না করে এ সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবেন না।

যাত্রাবাড়ী পৌঁছে শফিকুল বাস থেকে নেমে দৌড়ে মাতুয়াইলের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড অ্যান্ড মাদার হেলথ (আইসিএমএইচ) হাসপাতালে যান। সেখান থেকে পরে যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে পুলিশকে সব কিছু খুলে বলেন।

শুনে তারা বলেন, যেহেতু আবদুল্লাহপুর থেকে বাসে উঠেছেন, তাই অভিযোগ দিতে হবে সেখানে। শুনে তিনি উত্তরা পশ্চিম থানায় আসেন। সেখান থেকে বলা হয়, যেখানে নেমেছেন অভিযোগ সেখানে দিতে হবে। কোনো থানাই যখন দায়িত্ব নিতে চাচ্ছিল না, তখন তিনি বাসায় ফিরে যান।

Bootstrap Image Preview