চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যায় নিজের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন এসএমওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদ। শিমুর স্বামী ও নিজের বাল্যবন্ধু সাখাওয়াত আলী নোবেলের সঙ্গে মিলে চিত্রনায়িকাকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর।
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবীর বাবুল জানান, আসামিদের রিমান্ড চলাকালেই ২০ জানুয়ারি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় আসামিরা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা স্বীকার করেছিলেন সাখাওয়াত আলী নোবেল। পরে এসএমওয়াই আব্দুল্লাহ ফরহাদ শিমুর লাশ গুম করায় সহযোগিতা করেছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ফরহাদ শুধু লাশ গুম করেননি, বরং ঘটনাস্থলে উপস্থিত নোবেলের সঙ্গে মিলে শিমুকে হত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নোবেল একসময় নেশায় আসক্ত ছিলেন। এখন তিনি কিডনি ও লিভারের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন। ফলে শারীরিকভাবে তিনি অনেকটাই দুর্বল। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হলে শিমুকে একা কাবু করতে পারছিলেন না নোবেল। তখন ফরহাদ বন্ধুর পক্ষ নেন। একপর্যায়ে শ্বাসরোধে শিমুর মৃত্যু হয়।
আব্দুল্লাহ ফরহাদ সম্পর্কে হুমায়ুন কবীর জানান, ফরহাদ নোবেলের বাল্যবন্ধু। তিনি ঢাকায় একটি মেসে থাকেন। তার তেমন উপার্জন নেই। তিনি মাঝেমধ্যেই নোবেলের বাসায় আসেন, তারা খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি সপ্তাহে অন্তত দুই-তিন দিন সকালবেলা নোবেলের বাসায় এসে আর্থিক সাহায্য নিতেন। ঘটনার দিনও তিনি সকালে নোবেলের বাসায় যান এবং পরে এ হত্যাকাণ্ডে জড়ান।
পুলিশ জানায়, রবিবার সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে গ্রিন রোডের বাড়িতে শিমুকে হত্যা করা হয়। পরে নোবেল ও ফরহাদ দুটো বস্তায় শিমুর শরীরের দুপাশ মুড়িয়ে মাঝ বরাবর প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দিয়ে বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে বস্তাটি নিচে রাখা নোবেলের গাড়ির পেছনে তোলেন।ওইদিন সকালে তারা লাশ নিয়ে মিরপুরের দিকে যান। কিন্তু সেখানে লাশ ফেলার জায়গা না পেয়ে আবারও ফিরে আসেন। পরে তারা রাতে কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ঝোপের ভেতরে ফেলে আসেন।
এর আগে, সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ব্রিজের কাছে শিমুর মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ জানিয়েছে, লাশটি বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছিল। পরে র্যাবের একটি দল শিমুর স্বামী নোবেল ও গাড়িচালক ফরহাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেটকার জব্দ করে। প্রাইভেটকারটির ব্যাকডালায় রক্ত পাওয়া যায়।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজি রমজানুল হক বলেন, “নায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর মরদেহ সোমবার সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন হযরতপুর ইউনিয়নের আলিপুর নামক স্থানে একটি ব্রিজের নিচে থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মরদহের গলায় একটি দাগও রয়েছে। মরদেহটি উদ্ধার করে আমরা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। শিমু নিখোঁজ হওয়ার এ বিষয়ে কলাবাগান থানায় একটি জিডি হয়েছিল।”