আইসিসি কমনওয়েলথ গেমস ২০২২–এর নারী বাছাইপর্বে বাংলাদেশ নারী দলের মূল স্কোয়াডে সুযোগ পাননি অভিজ্ঞ ক্রিকেটার জাহানারা আলম। দল ঘোষণার পরপরই জাহানারাকে বাদ দেওয়া নিয়ে সমালোচনা উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আঙুল তোলা হচ্ছে নারী দলের কর্তাদের দিকে।
জাহানারাকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে বিসিবির পক্ষপাতিত্বকে দেখছেন অনেকেই। জাহানারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন—এমন কথাও রটেছে। এ ছাড়া কদিন আগে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীকে লিখিতভাবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের বিভিন্ন বিষয়ে নিজের অভিযোগ জানিয়েছেন জাহানারা। সে বিষয়টিকেও সামনে আনা হচ্ছে।
এত আলোচনার মধ্যেই এ ব্যাপারে নিজেদের স্পষ্ট বক্তব্য জানালেন, মহিলা উইংয়ের প্রধান শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তাঁর মতে, শুধু নতুনদের সুযোগ দিতেই জাহানারাকে এ সফরে দলের বাইরে রেখেছে বিসিবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় জাহানারাকে নিয়ে এসব উসকানিমূলক কথাবার্তা ছড়ালে সেটা তাঁর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন বিসিবির এ পরিচালক।
শফিউল আলম বলেন, ‘মূল আলাচনা হলো যে, তাকে নির্বাচকেরা ও কোচ এ টুর্নামেন্টে রাখেননি। এটার মূল কারণ নতুনদের সুযোগ দেওয়া। তবে, তার বিরুদ্ধে কিছু ঝামেলা আছে, কিন্তু আমরা এগুলো নিয়ে চাপ দিচ্ছি না। এগুলো আমলেও নিচ্ছি না। আমরা চাচ্ছি না যে, আমাদের খেলোয়াড়দের ওপর চাপ দিতে। সামনে যেহেতু বিশ্বকাপ আছে, তাই আমরা এগুলো এড়িয়ে যাচ্ছি। তার করা বিভিন্ন অভিযোগ আমি নিজেই জানি। সে কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। ফাহিম ভাইয়ের বিরুদ্ধে, মঞ্জুর বিরুদ্ধে তার অভিযোগ রয়েছে। তার অভিযোগ একটাই যে, তাকে নাকি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এখনও তার মঞ্জুর (নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম) ওপর অভিযোগ আছে। এ ছাড়া অন্য কিছু নেই। কিন্তু, কয়েকটা মিডিয়া বিভিন্নভাবে উসকানিমূলক কথা ছড়াচ্ছে। এটা পক্ষান্তরে তো ওর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।’
বিসিবির এ পরিচালক আরও বলেন, ‘আমরা তাদের অভিভাবক। তাদের ভালোমন্দ সবকিছুতে আমার ক্রিকেটারদের পাশে থাকব। দিন শেষে আমাদের ক্রিকেটটাই আগে। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। সবকিছুর পর সে একটা মেয়ে। অনেকেই অনেকভাবে ব্যাপারটা উপস্থাপন করছে। এভাবে তো ওর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সে তো শুধু জানিয়েছে, তাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সে শুধু বলছে—তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি। আমরা কিন্তু কোথাও বলিনি নিয়ম ভঙ্গের কারণে তাকে বাদ দিয়েছি। আমরা শুধু তরুণদের সুযোগ দিতে তাকে বাদ দিয়েছি। কেউ যদি টু্ইস্ট করে বিভিন্ন তথ্য ছড়াতে চায়, তাহলে কী করার আছে। মেয়েদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে সেটাকে অন্যদিকে নিয়ে গেলে তো হবে না।’
এদিকে চিঠিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচকের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেন সাবেক এই অধিনায়ক। জাহানারার চিঠি দেওয়ার কথা স্বীকার করে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'আমরা জাহানারার কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। কারণ যখন জাহানারার মাপের কোনও ক্রিকেটার অভিযোগ করছে তখন দেখতে হবে তার মধ্যে কতটা সত্যি রয়েছে।'
জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে বিসিবিকে যে চিঠি দিয়েছেন জাহানারা, সেখানে নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম, কোচ একে এম মাহামুদুল ইমনের বিপক্ষে পক্ষপাতের অভিযোগ এনেছেন। একই সঙ্গে তুলে ধরেছেন ড্রেসিংরুমের অনেক ঘটনা।
তিনি জানান, তাকে ক্রিকেটীয় কারণে নয়, বরং অন্য কারণে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনার তদন্তের আবেদন করেছেন তিনি।
২০২২ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব খেলে জিম্বাবুয়ে গিয়েছিল নারী দল। সেখানে বেশ উজ্জ্বল ছিল জাহানারার পারফরম্যান্স। ছয় ম্যাচ খেলে ৯টি উইকেট নিয়েছেন এই ডানহাতি পেসার। এর মধ্যে ২ ম্যাচে নিয়েছিলেন ৩টি করে উইকেট।