Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৮ বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কর্মকর্তাদের ফাঁকি দেয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ডা. মুরাদ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৫৪ PM
আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৫৪ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


বিতর্কিত রাজনীতিক সদ্য পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডার পর দুবাইয়ের দরজাও তার জন্য বন্ধ থাকায় উপায় না পেয়ে তাকে দেশেই ফিরতে হয়েছে।রোববার বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মুরাদ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন।

বিমানবন্দরে নামার পর সাংবাদিকদের এড়াতে মুরাদ হাসান আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হন। তিনি সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

এদিকে বিমানবন্দরে নামার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে ডা. মুরাদকে।কারণ তিনি করোনার ডাবল ডোজ টিকার সনদ ছাড়া কীভাবে বিমানবন্দর দিয়ে কানাডায় গেছেন- এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে মুরাদ ট্রানজিটের যাত্রী হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাকে।

জানা যায়, মুরাদ হাসান একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। পরে তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।

এ ছাড়া করোনাকালীন চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র না দেখাতে পারায় তাকে কানাডার টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কানাডার বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ফেরত পাঠিয়েছে বলেও দেশটির স্থানীয় বাংলা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়। অনলাইন পোর্টালের খবরে বলা হয়, কানাডায় বসবাসরত মুরাদের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে।

ফলে কানাডায় মুরাদ হাসানকে ঢুকতে না দেওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণও হচ্ছে তার কাছে করোনার ডাবল ডোজের টিকার সনদ না থাকা। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কানাডা ইমিগ্রেশনে আটকেপড়া মুরাদ কীভাবে করোনা সনদ ও কোভিড প্রটোকল না মেনে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগ করলেন।

রোববার এক ব্রিফিয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী ও শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদুল আহসানকে।

জবাবে শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদুল আহসান বিষয়টি দেখার দায়িত্ব তাদের নয়।তিনি বলেন, বিমানবন্দর দিয়ে যে যাত্রীই বাইরের দেশে যান সেসব বহির্গমন যাত্রীদের স্বাস্থ্য সনদ চেক করা, ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নয়। আমরা ইমিগ্রেশন করি, যাত্রীদের সেবা দেই। ইমিগ্রেশন শাখা ইমিগ্রেশন করবে, স্বাস্থ্যের কাজ স্বাস্থ্য করবে। মুরাদ সংক্রান্ত তথ্য জানতে হলে আপনাদের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলে তারা ভালো উত্তর দিতে পারবেন।

মুরাদ হাসানকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইমিগ্রেশনের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীও।তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো কথা বলেননি।

সম্প্রতি এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে ডা. মুরাদের অশালীন ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এই সংসদ সদস্যকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করলে ওইদিন রাতেই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইদিনে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভায় মুরাদ হাসানকে জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার তাকে সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার মুরাদ হাসানকে তার নিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।এ ছাড়া মুরাদের আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিলের বিষয়েও দলের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এরপর ৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেছিলেন তিনি। রাত ৯টার দিকে ডা. মুরাদ হাসান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে এমিরেটসের ফ্লাইটে যাওয়ার কথা থাকলেও ফ্লাইটটি ছেড়ে যায় রাত ১টার দিকে। দুবাই হয়ে কানাডার পথে রওনা দেন তিনি। সংসদ সদস্য হিসেবে মুরাদ কূটনৈতিক পাসপোর্টের অধিকারী।এরপর কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলেও তাকে সে দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।সেখান থেকে তাকে দুবাইগামী একটি ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়।কিন্তু দুবাইও তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।

কানাডায় প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ার পর দুবাইয়ের ভিসা পাওয়ার চেষ্টায় করছিলেন ডা. মুরাদ।কিন্তু সেই চেষ্টায়ও ব্যর্থ তিনি।দুবাইয়ের ভিসা না পেয়ে শেষমেশ দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মুরাদ।অবশেষে রোববার বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি।

Bootstrap Image Preview