Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রেলের অত্যাধুনিক নতুন ইঞ্জিনের ভার নিতে পারবে না সাত সেতু

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২৪ AM
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২৪ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে নতুন বেশকিছু ইঞ্জিন যুক্ত হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরো ইঞ্জিন আমদানি করা হবে। কিন্তু অত্যাধুনিক ভারী এসব ইঞ্জিনের ভার বহনে সক্ষম নয় পূর্বাঞ্চল রেলের সাতটি সেতু। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এসব সেতুতে নতুন ইঞ্জিন চলাচলের বিষয়টি না ভেবে আমদানি করায় এখন বিপাকে পড়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এখন এসব ইঞ্জিন ব্যবহারের জন্য সেতুগুলোতে সংস্কারকাজের পরিকল্পনা করতে হচ্ছে।

গত বছর দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১০টি নতুন লোকোমোটিভ আমদানি করা হয়। ইঞ্জিনগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার না হয়েই পড়ে ছিল রেলওয়ের ওয়ার্কশপে। বর্তমানে এসব ইঞ্জিন দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু রুটে সার্ভিস পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া আরো ২০টি ইঞ্জিন আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যার মধ্যে ১০টি দেশে এসে পৌঁছেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে আরো ১০টি দেশে চলে আসবে।

রেলের মেকানিক্যাল বিভাগ বলছে, আগের সবচেয়ে ভারী ইঞ্জিনগুলোর গড় ওজন প্রতি এক্সেলে ১১ দশমিক ৯৬ লোডের হিসাবে (প্রতিটি ইঞ্জিনে ৬ এক্সেল) ৭০ থেকে ৭২ টন। বর্তমানে আমদানি হওয়া ও আমদানির প্রক্রিয়ায় থাকা ইঞ্জিনগুলোর গড় ওজন ১০০ টনেরও বেশি (প্রতি এক্সেলে ১৫ থেকে ১৬ টন)। সর্বশেষ প্রযুক্তির ইঞ্জিন হওয়ায় এসব ইঞ্জিন এক্সেল লোডের হিসাব থেকেও ভারী হয়। সে কারণে আমদানি হওয়া নতুন ইঞ্জিনগুলো প্রায় শতবর্ষী সেতুগুলো দিয়ে পারাপারের সময় দুর্ঘটনা ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। এতে রেলের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি হতাহতের আশঙ্কাও প্রবল বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এসব সেতু দিয়ে বর্তমানে ১১ দশমিক ৯৬ টন এক্সেল লোডবিশিষ্ট লোকোমোটিভ/কোচ নিয়ন্ত্রিত গতিসীমায় চলাচল করে। কিন্তু বর্তমানে আমদানি হওয়া লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিনগুলো ১৫ থেকে ১৬ টন এক্সেল লোডের। বিদ্যমান পুরনো ইঞ্জিনের তুলনায় এক্সেল প্রতি লোডের পরিমাণ ৩ থেকে ৪ টন বেশি হওয়ায় এগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সেতুগুলো আপত্কালের বিবেচনায় মেরামত বা লোড বাড়ানোর কার্যক্রম নিতে যাচ্ছে রেলওয়ে।

এ সাতটি সেতু হলো কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু, ভৈরব পুরাতন সেতু, কুশিয়ারা সেতু, ঘোড়াশাল (আপ) সেতু, শম্ভুগঞ্জ সেতু, ঘুমঘাট সেতু ও ছাতক-সিলেট রুটের ২৮ নং সেতু। এসব জীর্ণ সেতু দিয়ে নতুন আমদানি হওয়া ও আমদানিতব্য ভারী ইঞ্জিন চলাচল করতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে গত জুনে বুয়েটকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিতে মহাপরিচালকের অনুমোদন চায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ। সেতুগুলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত কিংবা নতুন সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে বলেই বেশি এক্সেল লোডের ইঞ্জিন চলাচলের কারিগরি উপযুক্ততা যাচাইয়ে বুয়েটের বিআরটিসি বিভাগকে সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতিতে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দিতে প্রস্তাব করা হয়। সম্প্রতি প্রকৌশল বিভাগের এ প্রস্তাব অনুমোদন করে রেলপথ বিভাগ।

তাছাড়া বিশেষ প্রকল্প হিসেবে দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণের আগে ট্রেন চলাচল নিরাপদ করতেও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিচ্ছে রেলওয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ অক্টোবর বুয়েটের তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল কালুরঘাট সেতু সরেজমিনে পরিদর্শনও করেছে।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন বলেন, রেলে দীর্ঘদিন ধরে ইঞ্জিন সংকট ছিল। বর্তমানে রেলওয়ে সংকট দূর করতে ইঞ্জিন আমদানি শুরু করেছে। সুদূরপ্রসারী চিন্তার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ভৈরব সেতুসহ বেশ কয়েকটি পুরনো সেতুর স্থলে নতুন সেতু নির্মাণও করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি সেতু নির্মাণ পরিকল্পনাধীন থাকায় নতুন আমদানি হওয়া ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চলাচলে আপাতত সংস্কারকাজ করা হবে পুরনো সেতুগুলোতে। সংস্কারের মাধ্যমে এসব সেতুর এক্সেল লোড বাড়ানো গেলে নতুন ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালাতে সমস্যা হবে না।

Bootstrap Image Preview