Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

কুরুচিপূর্ণ বিকৃত এ সমাজ কি বসবাস উপযোগী?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৪৯ PM
আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৪৯ PM

bdmorning Image Preview


পীর হাবিবুর রহমান।। একটা কুরুচিপূর্ণ চরম বিকৃত সমাজে আমরা তলিয়ে যাচ্ছি। অশালীনতার পর্দা সরিয়ে নগ্নতা আর নোংরামিতে ডুবে যাওয়া নায়িকার বিকৃত অমর্যাদার পোশাক ও নাচ সিনেমা বা সাংস্কৃতিক পাড়ার বাসিন্দাদের গায়ে কলঙ্ক মাখায় না। গৌরবের অহংকারের তিলক পরায়। কেউ থামাবারও নেই। কেউ প্রতিবাদও করে না। একালের তথাকথিত নারীবাদীরাও ধন্য হন। কারণ তারাও সামাজিক মাধ্যমে কত নোংরা ভাষা ও ঘুমন্ত মানুষকে সুড়সুড়িতে জাগানোর কয়েক লাইন লেখাকেই নারীবাদ বোঝেন। ইজ্জতের ভয়ে সমাজে আজ শিক্ষিত রুচিশীল ভদ্র মানুষরা নির্বাক! কি নারী কি পুরুষ। মনে করেন কথা বলতে যাওয়া মানেই কলতলায় হাজিরা দেওয়া। ভাবেন, কথা বললেই বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়া। পচা শামুকে পা কাটা। অন্যদিকে সাত সাগর তেরো নদীর ওপারে হাসপাতালের শয্যা থেকে অশীতিপর বৃদ্ধ লিখেন কবিতা। নায়িকার কাছা মারা লুঙ্গির খেলা দেখলে না জানি লিখে বসেন কি না জীবনের শেষ কালজয়ী গান। কিন্তু বারণ করবেন না নারী তুমি শালীন হও যদি আবার তথাকথিত একালের ফেসবুক নারীবাদী ভক্ত কমে যায়! যারা চটি বইয়ের ভাষায় নারীবাদের অহংকার করে! কেউ বিকৃত পুরুষদেরও বলে না থামো এই অসুস্থ মিথ্যাচারের ধারা থেকে, থামো দুর্নীতি লুটেরা অর্থনীতির খলনায়করা, থামো হে রাজনীতির বাজিকররা! রাজনীতি মানে মানবকল্যাণ, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ। রাজদুর্নীতির বিকৃত বেহায়াপনা নয়। ভোগের অশান্ত জীবন নয়। নিরাভরণ সৎ সরল জীবনযাপন। মূল্যবোধ আর আত্মমর্যাদার জীবন বড় গৌরবের। তা উপেক্ষা করে সমাজটাকে একদল রুচিহীন বেহায়া টানতে টানতে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে! মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষাদগ্রস্ত হয়। হয় একের পর এক মৃত্যু সংবাদ দেখে শোকাচ্ছন্ন হয়, নয় হিংসা বিদ্বেষ হিংস্রতার ছোবলে আক্রান্ত হয়। ভালোবাসা মায়া মহব্বত প্রেম আবেগ টান সব চাপা পড়ে। জীবনের নির্মল আনন্দ মরে যায়। ইউটিউবে তো চোখ রাখাই যায় না, একদল হিংসুটে, যৌন ও রাজনৈতিক এমনকি সাংস্কৃতিক বিকৃত উন্মাদদের আস্ফালন দেখতে হয়। এরা নিজেদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে হিরো মনে করে। সমাজও এদের নিয়ে আলোচনা করে। লাজ-লজ্জাহীন এক বেহায়া সমাজে মানুষের কী আর্তনাদ! শোনার বা দেখার অথবা একে কবর দেওয়ার কেউ নেই।

আমাদের জীবন ছিল সহজ সরল সুন্দর। মায়া মহব্বতে ভরা। ধর্ম প্রচারেও ওয়াজ মাহফিলে আলেমরা আল্লাহ-রসুলের বাণী প্রচার করতেন। ধর্মীয় বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে একটি ধর্মের উৎসবকে বেদনাবিধুর করা হতো না। মাদরাসায় ছাত্র বলাৎকার, মসজিদের ইমামের কাছে ছাত্রী ধর্ষণ, শিক্ষকের কাছে ছাত্রী ধর্ষণের বিকৃত ঘটনা ঘটেছে। আবার একদল মানুষ নাস্তিক হতেই পারে। তাই বলে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বিকৃতি ছাড়া কিছু নয়। দেশের তরুণ সামাজকে মাদকের নেশায় আক্রান্ত করা হয়েছে। কিশোর গ্যাং নিয়ে সমাজে চলছে অপরাধ। একদল নারী কি বিবাহিতা। কি অবিবাহিতা, কি ডিভোর্সি বা বিধবা সন্তানদের কথা না ভেবে নিজেদের ভোগবিলাস আর লোভের নেশায় আক্রান্ত। আজ এর রক্ষিতা তো কাল ওর! লাজ-লজ্জা বলে কিছু নেই। সমাজের ধার তারা ধারেই না। এমন নষ্ট সমাজ আমাদের ছিল না। এমন নেশায় ডুবে থাকা নর-নারীর উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন, ছিল না। 

মানুষের সাংস্কৃতিক জাগরণ, নির্লজ্জদের বর্জনই রুখতে পারে সমাজের এ অবক্ষয়, এ বিকৃতি। এভাবে একটা সমাজে কি বাস করা যায়? কারও কোনো দায়বদ্ধতা নেই যেন! উন্মুক্ত কতিপয় উগ্র ভালগার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে এভাবে অবজ্ঞা করতে পারে না। পারে না তাদের রুচি, শালীনতা মূল্যবোধের ওপর এমন আঘাত করতে। দেশে সরকারি-বেসরকারি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, হয়েছে অবকাঠামোর উন্নয়ন। দেশপ্রেমিক শিল্পপতিরা গড়েছেন কত কলকারখানা। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেড়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। বেড়েছে ক্রয়ক্ষমতা। তেমনি শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও কম বাড়েনি, বাড়েনি মানুষে মানুষে বৈষম্য। সুমহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাংলাদেশ এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংস হত্যাকান্ডের পর খুনিদের শাসন আর সামরিক শাসনকবলিত বাংলাদেশ বিচ্যুত হয়েছে নির্লজ্জের মতোন। রাষ্ট্র আদর্শচ্যুত হয়েছে। যা আর ফিরে পায়নি! কতটা বিকৃত নির্দয় নির্লজ্জ হলে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে পুরস্কৃত করা হয়! এটাই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক বিকৃত ঘটনা। নির্লজ্জতার এক ভয়ংকর ইতিহাস। অমানবিক ও ন্যায়বিচারহীনতার কালো ইতিহাস। রাষ্ট্রের জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারবর্গের কারবালার চেয়েও ভয়াবহ হত্যাকান্ডের বিচার করতে তাঁর বেঁচে যাওয়া কন্যা শেখ হাসিনাকে দলের নেতৃত্বে এসে দীর্ঘ সংগ্রাম করে ক্ষমতায় আসতে হয়েছে। কি জঘন্য প্রতিহিংসার নির্দয় বিকৃতির চিত্রপট যে খুনিদের পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালকদের অবস্থান! এরপর সামরিক শাসন দমনপীড়ন আর নির্বাচনী গণরায় ছিনতাইয়ে কখনো ভোট ডাকাতি কখনো বা মিডিয়া ক্যুর ফলাফল জনগণের রায়কেও প্রতিফলিত হতে দেয়নি। প্রশাসন তো সামরিক শাসকদের হাতে ব্যবহৃতই হয়েছে! রাজনীতিতেও ভাঙাগড়া আর দল গড়ার খেলায় বড় বড় নেতাদের অংশগ্রহণ ছিল রাজনৈতিক বিকৃতির আরেক চিত্র। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ছিল বীভৎস। তবু আদর্শিক গণমুখী রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর তাদের অনুসারী তারুণ্যের শক্তিনির্ভর ছাত্ররাজনীতি লড়েছে সামরিক শাসন ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে।

তবু সেই সামরিক শাসনামলে আমাদের রাজনৈতিক আদর্শিক শক্তির পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতির সে কি উত্তাল সময় ছিল। গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য জীবন আত্মদান করার রাজনৈতিক সংগ্রামের সঙ্গে ছিল আমাদের চলচ্চিত্রের মানের উচ্চতা, শিল্পীদের সে কি জনপ্রিয়তা। দর্শকরা ছিলেন হলমুখী। শুক্রবারে ছবি মুক্তির ঘোষণায় হলে হলে ঢল। অন্যদিকে সাদা-কালো থেকে রঙিন টেলিভিশন জমানায়ও বিটিভির নাটকের কি মান! কি উচ্চতা, কি নির্মাতা, নাট্যকার আর ভুবন জয় করা অভিনেতা, অভিনেত্রী, কি সেই ক্রেজ। এখন সিনেমা নেই, নাটকে ভাঁড়ামি চলছে। সারা দেশে কি প্রতিযোগিতামূলক সহাবস্থানের সাহিত্যচর্চা। লিটল ম্যাগাজিনের শিল্প প্রকাশনা মান। শক্তিমান সব কবি লেখক। কবিতা পাঠ, কবিতা সন্ধ্যা, সাহিত্যের আড্ডা, গানের জলসা, কবিয়াল লড়াই, যাত্রাপালা, এক কথায় দেশজুড়ে ঊর্মিমুখর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে সাহিত্য-সংস্কৃতির কি গণজাগরণ। ঢাকার বেইলি রোড থেকে প্রান্তিকে ছড়িয়ে যাওয়া থিয়েটার, মঞ্চনাটক। কি দর্শক। মানুষের মননশীলতা, মেধা পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আর অংশগ্রহণ। বই পড়ায় সে কি এক উন্মাদনা কিশোর ও তরুণদের মধ্যে। তখন প্রযুক্তির এমন অবাধ স্বর্ণযুগে পৃথিবী প্রবেশ করেনি। মোবাইল, স্মার্টফোনের নামও শোনা যায়নি। অথচ আজ বিশ্বায়নের এ যুগে হাতে হাতে স্মার্টফোন, মোবাইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কিন্তু চোখ রাখা যায় না। গুগুলে সার্চ করলে যেমন যখন তখন কত তথ্য-উপাত্ত চলে আসে, তেমনি আসে ইউটিউবে নোংরা জঘন্য সব বিকৃত মানুষের নির্জলা মিথ্যাচার। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ সমাজে দায়িত্বশীল মানুষদের প্রতি মত ও পথের ভিন্নতার জন্য প্রতিহিংসার কি নোংরা আক্রমণ। নাম-পরিচয়হীন একদল মানুষ অনলাইন টিভি খুলে আরেকদল অচেনা মানুষদের খুঁজে এনে এই বিকৃতির নোংরা উৎসবে মেতে উঠেছে। এসব নিয়ে সরকার কঠোর কোনো অবস্থানে যেতে পারে না। এমনকি তলানিতে ঠেকে যাওয়া চলচ্চিত্রের নানা চরিত্রের বিকৃত রুচিহীন যত উল্লাস তা-ও চলছে। বলার কেউ কোথাও নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গণমাধ্যমকর্মীদের সরকার ধরতে পারে কিন্তু বিকৃত নোংরা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।

সামরিক শাসন যুগের অবসান সেই কত বছর আগে হলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে দেশ বের হতে পারেনি। একুশের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় যেমন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনাকে দিন-দুপুরে দুনিয়া থেকে উড়িয়ে দিতে রক্তবন্যা বইয়ে দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে, তেমনি বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকান্ড গুম, খুন থেকে রাজনীতির প্রতিহিংসা মুক্ত হয়নি। দিনে দিনে রাজনীতি, রাজনীতিবিদশূন্য হয়েছে। হারিয়েছে আদর্শিক গণমুখী রাজনীতির গতিপ্রবাহ। রাজনীতিবিদরা হারিয়েছেন তাদের ক্ষমতা-কর্তৃত্ব। বিরোধী দল হয়েছে অতিশয় দুর্বল। বামপন্থি রাজনীতি হয়েছে সাইনবোর্ডসর্বস্ব। এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাণশক্তি ছাত্ররাজনীতি গেছে নির্বাসনে। জনগণের মধ্যে বেড়েছে গণতন্ত্রের আকুতি। অবাধ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চাওয়া। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের শক্তি বৃদ্ধি। রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকে এসব চাওয়া যেমন চলে আসছে তেমনি একেক সরকারের একেক শাসনকালও বিরোধী দলের সরকারবিরোধিতার একেক চিত্রও জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। নির্বাচন হারিয়েছে মানুষের আকর্ষণ, নির্বাচন কমিশন নিয়ে চলছে সার্কাস, কমেডি। দেশ সামনে এগিয়েছে যত মানুষের লোভ-লালসার বিকৃতিও বেড়েছে তত।

একসময় সমাজে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজরা ঘৃণিত ছিল। সমাজ এদের এড়িয়ে চলত। এরা নিজেরাও লাজলজ্জায় ভুগত। কিন্তু বর্তমান রুচিহীন বিকৃত সমাজে এসব ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজরা বড় বেশি উল্লাস, দম্ভ করে। প্রতাপের সঙ্গে বিচরণ করে। সমাজ এদের সমীহ করে। এরাও লাজলজ্জাহীনের মতোন যেন নগ্ন বেহায়ারা হাসে তৃপ্তির হাসি। দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারের ছায়ায় থাকা ব্যবসায়ী, কোথাও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, কোথাও বা এমপি, দলের পদধারী নেতা-কর্মী লুটপাটে জড়ায়। লুটপাট দুর্নীতিতে নির্লজ্জ বেহায়ার মতো অর্থসম্পদ বানায়, বানিয়ে আসছে, বানাচ্ছে। এমন দুর্নীতির স্বর্ণযুগ গত কয়েক বছরে অনেক বেড়েছে। শেয়ারবাজারে যত লুটে নিয়েছে ততই যেন সে সমাজে প্রভাবশালী। আইন তাকে স্পর্শ করে না। যে যত ব্যাংক লুটে নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করে, বিলাসী জীবনযাপন করে, অঢেল সম্পদ গড়ে সে-ই বিকৃত সমাজে সফল মানুষ হিসেবে খ্যাতি পায়। বিদেশে অর্থ পাচারকারী, ব্যাংক লুটেরারা দম্ভ নিয়ে সমাজে বিচরণ করে। এদের জেলের ভাত খেতে হয় না। ব্যাংকের ঋণের টাকা পেয়ে বিদেশে বাড়িঘর করে বেগমদের নিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। কতটা নির্লজ্জ বেহায়া হলে এমন হয়! এদের সহযোগিতা করে কারা? অথচ দেশপ্রেমিক শিল্পপতি যারা, দেশে বিশাল বিনিয়োগ করেন, বিশাল কর্মসংস্থান করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাখেন ভূমিকা, তাদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হয়। তাদের বিতর্কিত করতে দেশ-বিদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের আদর্শ সন্তানরা বিকৃত অপপ্রচার চালায়। কি অদ্ভুত এক সময় অতিক্রম করতে হচ্ছে। রাজনীতিবিদদেরই এই বিকৃতি থেকে, এই দুর্নীতি থেকে, এই লোভ ও লালসার রাহুগ্রাস থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হবে। নিজেদের কর্তৃত্ব ও ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে হবে। আদর্শিক নির্লোভ গণমুখী মানবকল্যাণের উত্তরাধিকারের রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ভোগবিলাসের পথকে না বলতে হবে। রাজনৈতিক দলে তৃণমূল পর্যন্ত যদি কমিটি বাণিজ্য হয়, ইউপি নির্বাচনেও মনোনয়ন বাণিজ্য হয় তাহলে এসব নেতৃত্ব মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয় কী করে? দলেই তো বিতর্কিত, বিকৃত! বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও তাদের লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছে। অনেকে বিনা লড়াইয়ে হয়ে গেছেন চেয়ারম্যান, মেম্বার। অনেক জায়গায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তৃণমূল নেতারাই নন, দলের অনেক কেন্দ্রের নেতা, এমপি ও দলীয় ছায়ায় থাকা ব্যবসায়ী আর প্রশাসনের কর্তারা ভুলেই গেছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। তারা সবাই মিলে ইমেজ তলানিতে নেবেন আর আশা করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলকে ক্ষমতায় নেবেন, আর তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ভাগ্য বদলাবেন। ভোগবিলাসের জীবনযাপন করবেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের ক্ষমতার অপব্যবহারের করুণ পরিণতি দলের ভুল না করা নেতা-কর্মীরাও ভোগ করছেন। আর যারা পাপ করেছিলেন তাদের পরিণতি দেশ দেখছে। এক যুগে যারা ক্ষমতায় তারা ভুলেও চিন্তা করছেন না, ক্ষমতায় না থাকলে তাদের পরিণতি কতটা নির্মম হতে পারে। জনগণের আস্থা অর্জন না করে, মতলববাজ, চাটুকার আর দুর্নীতিবাজদের নিয়ে ক্ষমতার সংসার করলে শেষ পরিণতি ভালো হয় না। বিকৃত সমাজে একদল লোক নির্লজ্জের উল্লাস করে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠরা দমবন্ধ জীবনযাপন করে। সবাই তো আর সেই হিপোক্রেট নয়, সেই প্রতারক নয় যে সময়ে সময়ে সুর বদলাবে।

বিকৃতদের সঙ্গেও গা ভাসাবে আবার ভালো মানুষও সাজবে! সমাজে যা বিশ্বাস করে না তা বলবে আর নির্জলা মিথ্যাচার করে বেড়াবে। সমাজের অভ্যন্তরে আজ ভয়াবহ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ রক্তক্ষরণ থামাতে সব বিকৃতদের রুখতে হবে। দেশ-বিদেশে দেশপ্রেমিক মানুষকেও রুখে দাঁড়াতে হবে। হিংসা, প্রতিহিংসা, মিথ্যাচার, ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট থেকে সমাজকে বাঁচাতে হবে। অন্ধকার নয়, আলোর পথটাই উত্তম, যেখানে বিকৃতির ঠাঁই নেই।

লেখাটি বাংলাদেশ প্রতিদিন থেকে সংগৃহীত। 

Bootstrap Image Preview