Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ই-কমার্স: দেড় মাসে গ্রেপ্তার ৪০

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:১৫ AM
আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:১৫ AM

bdmorning Image Preview


ই-কমার্সের বেশে পরিচালিত অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ডিজিটাল নিরাপত্তা ও অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) আইনে ৩৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে ৯৬ জনকে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারসহ ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত ১৭ আগস্ট গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ই-অরেঞ্জের মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা হয়। প্রতিষ্ঠানের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন, তার স্বামী মাসুকুর রহমান ও চিফ অপারেটিং অফিসার আমানউল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর গত দেড় মাসে ১৩টি 'ই-কমার্স' প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার দালাল প্লাসের বিরুদ্ধে বনানী থানায় একটি মামলা হয়েছে।

১৩টি প্রতিষ্ঠান কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তার সঠিক হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডির অনুসন্ধানে। আরও কয়েক প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার বিষয়ে তদন্ত চলছে। এ ছাড়া অন্তত ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মনিটরিং করছে সংস্থাটি।

সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন সমকালকে বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন পণ্য সরবরাহ করছে না। এ কারণেই ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ যাচাই ও অনুসন্ধানে অন্তত ৬০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে।
গ্রাহকের টাকা ফেরতের উপায় কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আদালত ও সরকারের ওপর নির্ভরশীল।

যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা :গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ১৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক এবং সিআইডি। মামলাগুলোর মধ্যে মানি লন্ডারিং আইনে রয়েছে চারটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১২টি এবং প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০টি। ৩৬টি মামলার মধ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে তিনটি, রিং আইডির বিরুদ্ধে দুইটি, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে নয়টি, ধামাকার বিরুদ্ধে তিনটি, এসপিসি ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের বিরুদ্ধে চারটি, সিরাজগঞ্জশপের বিরুদ্ধে একটি, কিউকমের বিরুদ্ধে তিনটি, ২৪টিকেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে পাঁচটি, সহজ লাইভ অ্যান্ড লাইভলি লাইফের বিরুদ্ধে দুইটি, নিরাপদ শপের বিরুদ্ধে একটি, র‌্যাপিড ক্যাশের বিরুদ্ধে একটি, থলে ও উইকুম ডটকমের বিরুদ্ধে একটি এবং দালাল প্লাসের বিরুদ্ধে একটি। মামলায় এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, ৩৬টি মামলার মধ্যে ২৪টির তদন্ত করছে সিআইডি। এর মধ্যে রয়েছে- ইভ্যালির দুইটি, রিং আইডির দুইটি, ই-অরেঞ্জের সাতটি, ধামাকা শপিংয়ের দুইটি, এসপিসি ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের দুইটি, কিউকমের একটি, ২৪টিকেট লিমিটেডের তিনটি, নিরাপদ শপের একটি, সহজ লাইফের দুইটি, র‌্যাপিড ক্যাশের একটি ও থলে ডটকমের একটি।

অর্থ পাচার মামলা :সিআইডি সম্প্রতি চারটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ২৪টিকেট লিমিটেড, এসপিসি ওয়ার্ল্ড লিমিটেড, ধামাকা শপিং ও ই-অরেঞ্জ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় ২৪টিকেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে করা মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক প্রদ্যুত বরণ চৌধুরী, এম মিজানুর রহমান সোহেল ও আসাদুল ইসলাম। তারা প্রতারণার মাধ্যমে অন্তত ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩২৪ টাকা পাচার করেছেন বলে সিআইডি জানিয়েছে।

গত ২৬ আগস্ট এসপিসি ওয়ার্ল্ডের আল আমীন, তার স্ত্রী শারমীন আক্তারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে কলাবাগান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে সিআইডি। এক কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে, ১১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকার বিরুদ্ধে গত ৯ সেপ্টেম্বর বনানী থানায় মামলা করে সিআইডি। মামলায় ধামাকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন চিশতী, তার স্ত্রী ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদা রোকসানা খানমসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ২৩২ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত ৩ অক্টোবর গুলশান থানায় মামলা করে সিআইডি।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার গুলশান থানায় কিউকমের মালিক রিপন মিয়া এবং দুই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা তানভীর চৌধুরী ও আরজে নীরবকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন একজন গ্রাহক।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির সমকালকে বলেন, এই চারটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করেছে। অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার করেছে কিনা, সে ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে।

গ্রেপ্তার যারা :৩৬টি মামলায় ৯৬ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে কয়েকজনের নাম একাধিক মামলায় রয়েছে। আসামিদের মধ্যে গত সোমবার পর্যন্ত ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও তার স্বামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল, ২৪টিকেট লিমিটেডের পরিচালক রাকিবুল হাসান ও মিজানুর রহমান সোহেল, কিউকমের সিইও রিপন মিয়া ও হেড অব সেলস অফিসার হুমায়ুন কবির নীরব ওরফে আরজে নীরব, এসপিসি ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. আল আমীন ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শারমীন আক্তার, ই-অরেঞ্জের মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা (ভারতে আটক), ধামাকার সিইও সিরাজুল ইসলাম রানাসহ তিনজন, রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলাম, থলে ডটকম ও উইকুম ডটকমের নজরুল ইসলাম, সোহেল হোসেন, তারেক মাহমুদ অনিক, সাজ্জাদ হোসেন পিয়াস, মুন্না পারভেজ ও মাসুম হাসান।

রিং আইডির মালিক কানাডা প্রবাসী শরিফ ইসলাম ও আইরিন ইসলামকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সিআইডি।
বিভিন্ন সূত্রের ভাষ্য, গ্রাহকদের কাছ থেকে এসপিসি ওয়ার্ল্ড ২৯০ কোটি, ইভ্যালি ৯৫০ কোটি, ধামাকা ৮০৩ কোটি, ই-অরেঞ্জ এক হাজার ১০০ কোটি, কিউকম ৩৯৭ কোটি, রিং আইডি তিন মাসে ২১৩ কোটি, নিরাপদ শপ ৭৮ কোটি, সিরাজগঞ্জশপ ৪৭ কোটি, থলে ডটকম ও উইকুম ডটকম অন্তত আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম সমকালকে বলেন, মামলাগুলোর তদন্ত চলমান। যেসব অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। প্রতারণার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, সিআইডি ই-কমার্সের বিরুদ্ধে নয়। তবে ই-কমার্সের আড়ালে জনগণকে যারা প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Bootstrap Image Preview