Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

মায়ের কাছে বেকার যুবকের খোলা চিঠি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২১, ১১:২০ PM
আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২১, ১১:২০ PM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী ছবি


আমার জন্ম একটি মধ্যবিত্ত ধার্মিক পরিবারে। মা-বাবার সাত সন্তানের মধ্যে আমি ষষ্ঠ। গ্রামে অন্য দশটি ছেলের মত আমার বেড়ে ওঠা। আমার মা এবং বড় ভাইয়ের প্রবল ইচ্ছায় স্কুলের গন্ডি শেষ করা। আর বাবার আর্থিক এবং মানসিক সাপোর্টে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি শেষ করা।

আমার বাবা কখনোই টাকার অভাব বুঝতে দেননি। নিজে না খেয়ে আমায় খাইয়েছে,নিজে নতুন জামা না কিনে আমায় পড়িয়েছে, আমাকে ফলমূল খাবার টাকা দিয়েছে। আমি আজ এতো বড় হয়ে বুঝেছি, বাবার ডেডিকেশনটা কতটা উচ্চ পর্যায়ে ছিলো।

পরিবারের আমিই একমাত্র সন্তান যাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে আজ আমার পরিবারটি অসহায়ত্ব বরণ করেছে। কারণ, তারা তো জানে ছেলেটি বেকার খাতায় নাম লিখেছে। তারা সেটাও জানে এ দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও দিনকে দিন জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রাষ্ট্রে শিক্ষার হার ১০০% করেছে কিন্তু চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে পারছে না। কর্মসংস্থানের অভাবে শিক্ষিত ছেলে/মেয়েটি সার্টিফিকেটের ভারে সমাজে নির্ধারিত নিঁচু লেভেলের কাজটি করতে পারছে না। একজন অনার্স পাশ করা ছেলেটিকে ১০/১২ হাজার টাকার বেতনের চাকরির অফার করা হয়।

কিন্তু, বেকার সেই ছেলেটি, মানে আমি অনার্স, মাষ্টার্স শেষ করে প্রায় চারটি বছর অতিক্রম করতে চলেছি কোন তথাকথি বিসিএস বা ফার্স্টক্লাস চাকরি যোগার করতে পারি নি। আমি প্রতিনিয়ত অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটা চাকরি খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমি চাকরিটা পেলে আমার পরিবারটি উঠে দাঁড়াতে পারতো, তবুও আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা দু-চোখের কোনে জ্বল রেখে বলে বাবা আমরা ভালো আছি। অথচ আমার পিতা-মাতা আমার ক্যারিয়ারের টেনশনে কতগুলো রাত নির্ঘুম পার করেছে তার হিসেব জানা নেই।

তাদের দুচোখের পানে তাকেলে বুঝি চারপাশে কালো দাগ পড়ে আছে। আমার মত এরকম হাজারো বেকারের বাবা-মাকে বয়সের তুলনায় অনেক বয়স্ক মনে হয়। তারা সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে, বুকের ভেতর হাজারো চাপা কষ্ট নিয়ে পৃথিবীতে বেঁচে আছে। কতদিন হয়েগেলো তাদের ছেলে/মেয়ের কাছ থেকে কোন সুখের সংবাদ পাচ্ছে না। বেকার ছেলেটির যেমন সমাজে পরিচয় নাই তেমনি প্রতিটি বাবা-মাও বড় গলায় সমাজের কাছে পরিচয় দিতে পারে না। কারও কাছে বলতে পারে না, আমার ছেলেটিও বিসিএস ফরেন ক্যাডার।

তারা শুধু, নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। আমি তো বড় হয়েও তাদের মুখে এক বেলা আহার তুলে দিতে পারি নি। জন্মদাতা পিতা-মাতা স্বপ্ন দেখে একদিন তার ছেলে অনেক বড় অফিসার হবে। সে অনেক সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে,অনেক টাকা পয়সা আয় করবে,বাড়ি-গাড়ি থাকবে। বাবা-মার পবিত্র স্বপ্ন গুলো কি ওনাদের জীবদ্দশায় বাস্তবায়ন করতে পারবো! নিজের অজান্তে দুচোখের কোনে জ্বল বয়ে আসে। তবুও তাঁদের আশ্বস্ত করি এই তো আর কটা দিন। বেকার থেকে মুক্তি লাভ করবো। দেখবে তোমাদের আর কোন অভাব থাকবে না। তোমার ছেলে ঠিকই বড় অফিসার হবে। কিন্তু মা,দেশের সরকার তো আমাদের মত বেকার যুবকদের কান্না শুনে না। রাষ্ট্র তো আমার মত হাজারো পিতা-মাতার কষ্ট জেনেও বুঝতে চাই না।

মাগো, তোমার আদর্শ তো আমি ভুলতে পারি না। তুমিই তো শিখিয়েছো দশের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে। আমি তো তাই করছি। হাজারো বেকার যুবসমাজের পক্ষে যৌক্তিক দাবি চাকরির বয়স স্থায়ীভাবে ৩২ আদায়ে কাজ করছি। মাগো, অনেক ছেলে-মেয়ে করোনার ভয়াল থাবায় চাকরির বয়স হারিয়েছে। অনেকে চাকরি হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গেছে। এমনকি, এসব বেকাররা আত্মহত্যা নামক ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনার মাহামরির দুটো বছরে কোন চাকরির সার্কুলার হয়নি। হয়নি বৃহৎ কোন চাকরির পরীক্ষা, অনেক শিক্ষার্থী একই ক্লাসে পড়ে আছে একাডেমিক সেশন জটে ভুগছে বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুই বছর ধরে বন্ধ থাকায় বেড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা। একটি জাতি গঠন করার হাতিয়ার সেই শিক্ষকগণ আদর্শ ভুলে পেশা পরিবর্তন করেছে। তাই সবার কথা চিন্তা করে তোমার ছেলে আজ রাজপথে চাকরির বয়স বৃদ্ধির আন্দোলন করছে। তুমি দোয়া করো মা, দেখবে মমতাময়ী মা ঠিকই ৩২ দিয়ে দিবে।

আর আমার মতমত লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার সোনার ছেলে-মেয়েরা পড়ার টেবিলে বসে যাবে। তারা সবাই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ করে বাবা-মার পাশে দাঁড়াবে। মাগো,বেকাররাও তো মানুষ, তারাও যে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। শুধু, ৩০ বছরের আবদ্ধ সময় দিয়ে বেকারদেরকে চাবুক দিয়ে মারা হচ্ছে। করোনা তো বেকাররা আনে নি। সময় থাকতে বেকারদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা তো বৈষম্যহীন সোনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। মাগো, তুমি কষ্ট করো না। তোমার মুখে দুমুটো ভাত তুলে দিতে না পাড়লে, নিজেকে অভাগা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার অবকাশ থাকবে না। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি,তিনি যেনো আমার মত সকল সন্তানেরর পিতামাতকে দীর্ঘায়ু দান করেন। প্রত্যেক সন্তান যেনো নিজস্ব আয়ের টাকা দিয়ে বাবা মায়ের সেবা করার সুযোগ পান। আমিন।।

মাগো, আজ না হৌক কাল, চাকরির বয়স সীমা স্থায়ীভাবে ৩২ করেই পড়ার টেবিলে বসবো। আমি পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করে যাবো, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে, এ আমার চির অঙ্গিকার।।

আকাইদুল ইসলাম আকন্দ

সাবেক শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Bootstrap Image Preview