Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

পুরোনো সব অর্ডার ছয় মাসে মধ্যে ডেলিভারি দেব: রাসেল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২১, ১১:৩৮ AM
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২১, ১১:৩৮ AM

bdmorning Image Preview


ইভ্যালি আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাস্টমারের পুরোনো সব অর্ডার ডেলিভারি দেবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেন, ইভ্যালি বন্ধ করে কোনো সমাধান হবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে ইনভেস্টমেন্ট ফেরত আনা সম্ভব নয়। তাই আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিন, আমরা কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেব না। সুযোগ দিলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে পুরোনো সব অর্ডার ডেলিভারি দেব।’

গতকাল শনিবার রাত ১১টায় ফেসবুক লাইভে তিনি এসব কথা বলেন। এক ঘণ্টা ২২ মিনিটের ফেসবুক লাইভে ইভ্যালির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যবসা করবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেন।

ইভ্যালির সিইও রাসেল বলেন, ‘একটি প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে যদি ইভ্যালি বন্ধ করা যায় তাহলে হয়তো কোনো একটি গোষ্ঠী উপকার পাবে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ ইভ্যালি বন্ধ করা কোনো সমাধান না। কোনো প্রতিষ্ঠানই বন্ধ করে ইনভেস্টমেন্ট ফেরত আনা সম্ভব নয়। আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিন, আমরা কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেব না।’

মোহাম্মদ রাসেল বলেন, 'অনেকের রি-ফান্ডের চেক আটকে গেছে। দুটি ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। এটি সমাধানে আরও সময় লাগবে। সাত থেকে ১০ দিন লাগতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গেও আমরা কথা বলছি। পুরোনো অর্ডারগুলো নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। আমরা সবাইকেই অনুরোধ করব, আমাদের একটু সময় দিন। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আমাদের পুরোনো সমস্ত অর্ডার ডেলিভারি দেব। অনেকেই ভাবছেন ক্রমাগত চাপ দিতে থাকলেই বোধ হয় সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এভাবে চাপ আসতে থাকলে আমাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। 

রাসেল বলেন, ইভ্যালি বন্ধ করার জন্য একটা অংশ উঠেপড়ে লেগেছে। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন আমরা আর ব্যবসা করতে পারব না। যাচাই না করেই এটা বলা ঠিক না। অনেক সংবাদমাধ্যমেই আমাদের নিয়ে এমন কিছু লেখা হচ্ছে, যার ফলে গ্রাহকেরা বিভ্রান্ত  হচ্ছেন। ইভ্যালি এখন পর্যন্ত ৭০ লাখ অর্ডারের পণ্য গ্রাহককে ডেলিভারি দিয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। আমাদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। এত সমস্যার মধ্যে আমাদের অর্ডার আসছে। গতকাল ২০ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছি। এগুলো দিতে গেলে অবশ্যই নিয়ম মেনে দিতে হবে। এ জন্য আমাদের কিছু সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের ১০ লাখ ইউনিক গ্রাহক আছে। এখন আমাদের সুযোগ দিলে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব।' 

ইকমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই–ক্যাব) দেওয়া সদস্যপদ স্থগিতের কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন ই–ক্যাব যেটা করেছে আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। তারা তাদের কাজটাই করেছে। তারা শুরু থেকেই আমাদের পাশে ছিল। 

সবাইকে ইভ্যালি থেকে কেনাকাটার অনুরোধ জানান মোহাম্মদ রাসেল। তিনি বলেন, আপনারা যতটা সম্ভব ইভ্যালি থেকে অর্ডার করুন। এটাই আমাদের সাহায্য করবে। আমি বলছি না বাইরের চেয়ে বেশি দামে পণ্য নিন আমাদের কাছ থেকে। এমন অনেক পণ্য আছে যেগুলো এখনো অন্যান্য জায়গার থেকে ইভ্যালিতে দাম কম। আপনারা আমাদের কাছ থেকে পণ্য কিনুন। প্রয়োজনে টপ আপ করুন। এগুলোতে তো ক্ষতি নেই। 

ইভ্যালির এই প্রতিষ্ঠাতা সবশেষে বলেন, আমার ভুল থাকতে পারে। কিন্তু কোনো অপরাধ ছিল না। আমাদের একটু সুযোগ দিন।

এর আগে ইভ্যালির ‘সম্পদের চেয়ে ছয় গুণ বেশি দেনা’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে জানানো হয় ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম নিয়েছে ২১৪ কোটি টাকা, আর মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নিয়েছে ১৯০ কোটি টাকার। স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কমপক্ষে ৪০৪ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা। কিন্তু সম্পদ আছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার।

এ ছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির নেওয়া অগ্রিম ৩৩৯ কোটি টাকার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এ টাকা আত্মসাৎ বা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

ইভ্যালির ওপর করা বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের ৪ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে- দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

এরপর দুদকের পক্ষ থেকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরীন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেলের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়। আদালতও একই নির্দেশনা দিয়েছেন।

Bootstrap Image Preview