Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

করোনায় মিশুর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:৩২ PM
আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৮:৩২ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: বিডি মর্নিং


ইয়াসমিন আক্তার: বৈশ্বিক মহামারি করোনার আঘাতে থমকে গেছে বিশ্ব। গত মার্চ থেকে একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থা। তার আঘাত লেগেছে বাংলাদেশেও। লকডাউনে ঘরে বসে বসে অলস সময় পার করতে হচ্ছিলো লাখো মানুষকে। কিন্তু এই বিরূপ পরিস্থিতিতেও থেমে থাকেননি কামরুন নাহার মিশু। একজন ব্যাংকার হয়েও এমন প্রতিকূলতাকে জয় করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার ভূমিকায় নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন।

একজন উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প বলতে গিয়ে মিশু জানান, শুরুটা ছিলো গত জুন মাসের দিকে। তখন করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় বাসায় অনেকটা অবসর সময় কাটাচ্ছি। কোন কিছুই করার নেই। ঘর বন্ধী আমরা সবাই বাসায় টিভি দেখছি এমন সময় হঠাৎ দেখি আব্বা কাঁচা রসুন খাচ্ছেন। তখনই আমার মনে হলো আমি রসুনের আচার তৈরি করবো। যেই ভাবনা সেই কাজ। তৈরি করে ফেললাম রসুনের আচার। তারপর নিছক আনন্দের ছলে সেই রসুনের আচারের ছবি অনলাইনে পোষ্ট দিলাম। পোষ্ট করার সাথে সাথে অনেকেই রসূনের আচার নিতে চাইলো! আর হ্যাঁ…! আমিও তাদের না করিনি। বলে দিলাম চাহিদা মত দিতে পারবো। এভাবেই আমার ‘Mishu's Tea & Pickles’ এর যাত্রা শুরু।

আমের আচার। ছবি:বিডি মর্নিং

তিনি আরও বলেন, ব্যবসার শুরুতে একটু ভয় পাচ্ছিলাম। আমি তো নিজের হাতে আচার বানাই। তাই মনে বারবার প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছিলো, সবাই কি আমার হাতে বানানো আচার পছন্দ করবে, তাদের খেতে ভাল লাগবে? কিন্তু আমার ক্রেতাদের সঠিক রিভিউ এবং আমার কঠোর পরিশ্রমে সেই ভয় কেটে গিয়েছে। শুরুতে আচার ডেলিভারি করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো। কারণ আমার আচার ডেলিভারি করার মত কেউ ছিলো না। আমি নিজেই আচার সব জায়গায় পৌঁছে দিয়ে আসতাম। এখন সেই সমস্যা কেটে গিয়েছে।

এই ব্যবসায় পুঁজির প্রধান বিষয়টি ছিলো আমার সাহস এমনটা জানিয়ে মিশু আরও বলেন,  আমি বাসা পরিবর্তন করি গত জুনের ১৬ তারিখ। সেই সময় বাসার আলমারি গোছাতে গিয়ে কিছু এনভেলাপ চোখে পড়ে। তার ভিতর একটা এনভেলাপ খুলে দেখি পাঁচ হাজার টাকা। আমি হয় তো রেখেছিলাম কোন একটা কাজের জন্য। পরের এই টাকা দিয়েই আচারের প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটা করি।

একজন ব্যাংকার হয়েও নিজের ব্যবসায় সময় দিতে কোন বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বেশ কম। এর বড় কারণ সামাজিক ও পারিবারিক দিক থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা। বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এখনো নারী উদ্যোক্তাবান্ধব হয়ে ওঠেনি।। চাকরির পাশাপাশি উদ্যেক্তা হওয়াটা আরও বেশি কঠিন। তবে আমি আমার জায়গায় চাকুরি আর ব্যাবসাটাকে আলাদা ভাবেই দেখেছি। চাকুরির জায়গায় যেমন বিন্দুমাত্র ছাড় দিইনি তেমনি ব্যবসার ক্ষেত্রে আমি আমার মনের শত ভাগ উজাড় করেই দিয়েছি। এর ফলে আমি কখন দুইটি আলাদা আলাদা ক্ষেত্র নিয়ে ঘুলিয়ে যাইনি।

বাবা ও ছোট ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ ও ভালবাসা প্রকাশ করে মিশু বলেন,  আমার এই ব্যবসায় এক কথায় বলতে গেলে আমার বাবা ও ভাই দেখে। তাদের সহযোগিতায় আমার কাজ সহজ হয়ে যায়। আমার বাবা আমাকে কাঁচামাল ক্রয় করতে সাহায্য করে।

আচার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। এটা আমার কাছে প্রশান্তির বিষয়। আমি শুধু বলবো, একজন উদ্যোক্তা তাঁর বহুবিধ দক্ষতার মাধ্যমে যেমনি নিজেকে মেলে ধরার প্রয়াস পান, অপর দিকে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করেন। আমি কি পারবো? ব্যবসার মূলধন কোথায় পাবো? আমার ব্যবসাটা নিয়ে মানুষ কি বলবে? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর না খুঁজে কাজ শুরু করে দিতে হবে। ইনশাআল্লাহ সফলতা আসবেই। খুব শীগ্রই বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করবে ‘Mishu's Tea & Pickles’।

বিভিন্ন রকমের আচার। ছবি:বিডি মর্নিং

মিশু আরও বলেন, ‘Mishu's Tea & Pickles’ এর কোন শো রুম নেই। যেহেতু এখনো বড় পরিসরে শুরু করতে পারিনি সেহেতু এই ব্যবসায় জনবলের প্রয়োজন হয়নি। আমি বাবা আর ভাইয়ের সহযোগিতায় অনলাইনে চালিয়ে নিচ্ছি। যখন বাণিজ্যিক ভাবে শুরু করবো তখন হয়তো আরও কিছু হ্যান্ডের প্রয়োজন হবে।

বিডি মর্নিং এর পাঠকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,  উদ্যোক্তা হওয়ার বিকল্প নেই। সর্বোপরি আমি আপনাদের সহযোগিতায় একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই।

মিশু নিজেকে এখনো উদ্যোক্তা হিসেবে দাবি করেন না। তিনি আরও শিখতে চান। তবে তার স্বপ্ন সবাই আচার বলতে ‘Mishu's Tea & Pickles’ কেই চিনবে।

Bootstrap Image Preview