বাংলাদেশে অন্তত এক হাজার ট্রাক পেঁয়াজ পাঠাতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, ২৫ টন করে পেঁয়াজ বোঝাই বেশ কয়েকটি ট্রাক পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে আটকা পড়েছে এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে আজ এই আলোচনা শুরু হয়েছে।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর গত সোমবার থেকে পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল, মালদহ, হিলি, ঘোজালডাঙ্গা, চ্যাংরাবান্ধা ও ফুলবাড়িতে এ সব পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে।
দ্য ডেইলি স্টার নয়াদিল্লী সংবাদদাতা জানান, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফটি) এর প্রজ্ঞাপনে এটা স্পষ্ট যে যে সব চালানের কাগজপত্র চূড়ান্ত হয়ে গেছে, সেগুলোর জন্য এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্টার্স অর্গানাইজেশনস (এফআইইইও) জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছ থেকে যে সব এলসি পেয়ে গেছেন এবং যে সব চালান চূড়ান্ত হয়ে গেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা থাকা ঠিক নয়।
এফআইইও এর পূর্ব ভারত অঞ্চলের চেয়ারপারসন সুশীল পাটোওয়ারি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় শুল্ক কর্তৃপক্ষ এবং ডিজিএফটি এর কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পাটোওয়ারি বলেন, যেহেতু পেঁয়াজ পচনশীল। তাই, স্থলবন্দরে আটকে থাকা চালানগুলো শিগগির বাংলাদেশে যেতে দেওয়া উচিত।
এদিকেদুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বিবেচনায় নেয়ার কথা উল্লেখ করেই বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় হাইকমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পেঁয়াজ রফতানির নীতিমালায় ভারত হঠাৎ করে পরিবর্তন এনে এমন ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কারণ এতে বাংলাদেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে সরাসরি প্রভাব পড়েছে।’
এ বছরের ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি দুই দেশের বাণিজ্য সচিবদের বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী রফতানি বন্ধ না করার জন্য ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তখন অনুরোধ করা হয়েছিল যে, যদি কোনো কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতেই হয়, তবে তা যেন বাংলাদেশকে আগেভাগে জানানো হয়।
বিষয়টি উল্লেখ করে ভারতকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘হুট করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের বিষয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের আকস্মিক ঘোষণা দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের ২০১৯ ও ২০২০ সালের আলোচনা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সমঝোতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি পুনরায় শুরু করতে ভারতকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এরপরই দেশের বাজারে বাড়তে থাকে এ নিত্যপণ্যের দাম।
দেশে পেঁয়াজ মজুত ও ঘটতির বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বর্তমানে দেশে ৫ থেকে ৬ লাখ টন পেঁয়াজ রয়েছে। আগামী নতুন পেঁয়াজ ওঠা পর্যন্ত আমাদের আরও প্রায় চার লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। ইতোমেধ্য টিসিবি টার্কি (তুরস্ক) থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিসিবির মাধ্যমে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করব।’