অস্ট্রেলিয়ায় আটকেপড়া এক বাংলাদেশি মাশরুর মাহমুদ শুভ। সেখান থেকে এক অডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন দেশে ফেরার আকুতি। শুভর অডিও বার্তাটি এরকম-আসসালামুআলাইকুম। আমি মাশরুর মাহমুদ শুভ। বাংলাদেশের নাগরিক। পেশায় একজন ব্যাংকার। আমি গত ১৩ই মার্চ দেড় বছরের মেয়ে এবং স্ত্রীসহ অস্ট্রেলিয়াতে বেড়াতে আসি। আমাদের একটি এয়ারলাইন্সের সাথে ফিরতি টিকিট ছিল ২৭শে মার্চের।
কিন্তু ১৯শে মার্চ তারা ফ্লাইটটি ক্যানসেল করে মেইল দিলে আমরা ২৬শেশে মার্চের টিকিট পুনরায় কিনি। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ২১শে মার্চ আবার অন্য একটি এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনি। যেটা ছিল ২৩শে মার্চের। ২৩শে মার্চ সকালে পরিবারের সাথে এয়ারপোর্টে গেলে জানানো হয়, ওই দেশের ট্রানজিট বন্ধ করে দেয়াতে আমরা যেতে পারব না। ইতিমধ্যে আগের এয়ারলেন্স জানিয়ে দেয়, যেহেতু বাংলাদেশে ফ্লাইট অবতরণ করতে পারবে না এই কারণে তাদের ফ্লাইটটিও বাতিল করেছে। আমরা ফেরত এসে ২৩শে মার্চেই বাংলাদেশের হাই কমিশনে যোগাযোগ করি এবং উনারা জানান যে এই মুহূর্তে আমাদের কমার্শিয়াল ফ্লাইটই খুঁজে নিতে হবে।
ইতিমধ্যে আমরা নিজ উদ্যোগে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খুলি এবং আমাদের মতই অন্যান্য যারা বিপদে আছেন তাদের খুঁজতে থাকি। করোনা ভাইরাসকে দমন করার জন্য এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়ান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে এবং যার অংশ হিসেবে তারা জানিয়ে দেয়, যারা এখানে ভিজিটর কিংবা স্টুডেন্ট হিসেবে আছেন তারা যেন খুব দ্রুত নিজেদের দেশে ফেরত যান। অস্ট্রেলিয়াতে ১৪ থেকে ২৩শে মার্চের মধ্যে লকডাউন কার্যক্রম হয় পর্যায়ক্রমে। এর ফলে বহু মানুষ চাকরি হারান অথবা হারাচ্ছেন। অনেকেরই আয় কমে যাচ্ছে। বহু ছাত্র যারা আগে পার্টটাইম চাকরি করতেন তারা এখন বেকার। ফলশ্রুতিতে খুব অল্প সময়ে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে দেশে ফেরত যেতে চাওয়া যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আমরা ১শ' জনের বেশি সংখ্যা যখন হই গত ৮ই এপ্রিল এবং ৯ই এপ্রিল বাংলাদেশ হাই কমিশন ক্যানবেররাতে যোগাযোগ করি। আমাদের ফেরত নেয়ার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু শুক্রবার ১০ই এপ্রিল উনারা জানান যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিটিং হলেও এখনো আমাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আমি এই মুহুর্তে আমার পরিবারকে নিয়ে প্রচন্ড অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে দিন পার করছি। আমরা আসলে খুব সীমিত বাজেট নিয়ে ১৫ দিনের জন্য এখানে বেড়াতে আসি। কিন্তু এখন উপায় না পেয়ে আমাদের এক আত্মীয়র বাসায় ঠাঁই নিয়েছি। এরই মধ্যে যেহেতু আমি দু'বার টিকিট করেছি সেই কারণে আমার ফান্ডও আস্তে আস্তে কমে আসছে। অস্ট্রেলিয়াতে জীবনযাপন আসলেই খুব ব্যয়বহুল এবং এই অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে আমাদের প্রচন্ড বিপদে পড়তে হচ্ছে। এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়ান সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের নাগরিকদের আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে। তাদের দেশে অবস্থিত অন্যান্য দেশগুলোর অ্যাম্বাসিগুলোকেও তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। চার সপ্তাহ পর তারা খুব সম্ভবত এই বছরের জন্য আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট বন্ধ করে দিবে।
সুতরাং খুব দ্রুতই আমাদের ফেরত না নিলে আমার মত এখানে দেড় থেকে ২শ' বাঙালি প্রায় পথে বসতে হতে পারে। কারণ এত মাস থাকার অর্থ আমাদের কারোরই সঞ্চয় নেই। আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট খুব দ্রুতই জুন মাসে এক্সপায়ার করবে। কিন্তু দেশের সব বন্ধ থাকায় এবং অস্ট্রেলিয়াতেও সব লকডাউন থাকায় পাসপোর্ট রিনিউ সুযোগ এই মুহূর্তে নেই। আমাদের ভিসা জুন মাসে শেষ হয়ে যাবে।এখানে আসার পরে আমার দেড় বছর মেয়ের জলবসন্ত বা চিকেন পক্স হয়েছিল। আমরা ঘরে বসেই তার চিকিৎসা করেছি কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের করোনা না হয়ে অন্য কোন রোগে আক্রান্ত হয় সেই ক্ষেত্রেও এইখানে যে ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেটা গ্রহণ করা আমাদের জন্য আসলেই দুষ্কর। অস্ট্রেলিয়ান সরকার এক্ষেত্রে আমাদের কোন দায়িত্ব নেবে না।