Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

শ্রীমঙ্গলের চা জাদুঘর প্রাচীন ইতিহাস সংবলিত এক ঐতিহাসিক নিদর্শন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২০, ০৫:৩১ PM
আপডেট: ৩১ জানুয়ারী ২০২০, ০৫:৩৪ PM

bdmorning Image Preview


শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্টের গেটেই পেরোলেই চার কামড়ার 'চা জাদুঘর'। এখানে এলে জানা যাবে বাংলাদেশে দেড়শ বছর আগের চা চাষের সূত্রপাতের অজানা ইতিহাস। ব্রিটিশরা এ দেশে প্রথম কীভাবে চা চাষের শুরু করেছিল এবং প্রথমদিকের কিছু নিদর্শন।

এই জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে প্রাচীনকালের চা সংগ্রহের চয়নযন্ত্র, খস্তি, বাগানের কাদা পরিষ্কারের জন্য লোহার পাপোস, ইংরেজ সাহেবদের ব্যবহৃত হাড়ের লাঠি, কাটা কোদাল, সেসময়ে চা শ্রমিকদের ব্যবহৃত গহনা, ছেওরাছাড়া চা বাগানের প্রাচীন মুদ্রা, ব্রিটিশ আমলের রেডিও, নয়াপাড়া চা বাগান থেকে সংগ্রহ করে এনে রাখা জীবাশ্ম, ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত কেরোসিন চালিত ফ্রিজ, চা বাগান থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা বিশ্বযুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ।

ব্রিটিশ আমলের যান্ত্রিক লাঙ্গল, পানির ফিল্টার, ব্রিটিশদের ব্যবহৃত টেলিফোন সেট, টাইপ রাইটার, লিফট পাম্প, জরিপ ছিকল, টারবাইন পাম্প এমনকি ব্রিটিশ আমলের সার্ভিস বুক।

প্রাকৃতিক পরিবেশ সমৃদ্ধ চা শিল্পের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখতে শ্রীমঙ্গলের টি মিউজিয়াম বা চা জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে লাউয়াছড়া সড়কে এই চা মিউজিয়ামের উদ্বোধন করা হয়। চা সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিত্যক্ত ভবনের ছোট চারটি ঘরে চালু করা হয় এই মিউজিয়ামটি।

এই মিউজিয়ামে ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী অতি যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে।এছাড়াও বাংলাদেশ টি বোর্ডের প্রথম বাঙালি চেয়ারম্যান বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যবহৃত ঐতিহাসিক চেয়ার-টেবিলটিও সংরক্ষিত রয়েছে এখানে।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে কমলগঞ্জ ও শমশের নগরের দিকে চলে গেছে যে সড়ক, সেটি ধরে দুই কিলোমিটারের মতো এগোলেই বাংলাদেশ চা-বোর্ডের ‘টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম’। চা-বাগানে ঘেরা এ চায়ের জাদুঘরে বাংলাদেশের চা-শিল্পের প্রায় দেড়শ’ বছরের ইতিহাস ফুটে উঠেছে নানা সংগ্রহে-স্মারকে। সড়কের পাশ ঘেঁষা টিলার ওপর ছড়িয়ে থাকা টিনশেড ঘরগুলোর মধ্যে প্রথমটিতে ঢুকতেই বঙ্গবন্ধুর আপাদমস্তক প্রতিকৃতি। খালি চেয়ার-টেবিলের পেছনে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত বঙ্গবন্ধুর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা মনোমুগ্ধকর একটি ছবি যা যে কাউকেই আকৃষ্ট করে।

(১৯৫৭-৫৮) সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন । আর তিনিই ছিলেন তৎসময়ে টি বোর্ডের বাঙালি চেয়ারম্যান। সে সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রীমঙ্গল নন্দরানী চা বাগানে এসেছিলেন। সে সময় তিনি যে চেয়ারটিতে বসে মিটিং করেছিলেন টি মিউজিয়ামের সংগ্রহশালায় সেই চেয়ারটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। টেবিলের এক কোনায় ছোট ছোট কাগজের চিরকুটে এসব তথ্য দেয়া আছে। চা জাদুঘরে চা-গাছ ব্যবহার করেই আসবাব তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোর ওপর প্রদর্শন করা হয়েছে সংরক্ষণ করা এসব জিনিসপত্র।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের (পিডিইউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. একে এম রফিকুল হক বিডি মর্নিং কে বলেন এখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত ঐতিহাসিক একটি চেয়ার ও টেবিল ছাড়াও ব্রিটিশ আমলে চা-বাগানে ব্যবহৃত ঐতিহাসিক বিভিন্ন আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এই মিউজিয়াম দেখতে দেশে/বিদেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই লোকজন এসে ভীড় করে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে শতবছরের প্রাচীন এই নিদর্শনগুলো তুলে ধরার লক্ষেই এই মিউজিয়ামের উৎপত্তি।

শ্রীমঙ্গলের টি-রিসোর্টের আশপাশের চা বাগান, বন-বনানী সব মিলিয়ে প্রকৃতি সৃষ্ট এক নয়ন জুড়ানো পরিবেশ। পুরো এলাকাটাকে পর্যটকদের জন্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্টরা।

Bootstrap Image Preview