Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

চীনে যৌনকর্মীদের শ্রম শিবির বাতিল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:১৯ PM
আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:১৯ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


যৌনকর্মী এবং তাদের খদ্দেরদের আটক করে কথিত শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে পাঠানোর শাস্তি বাতিল করেছে চীন। এরকম অভিযোগে আটক যৌনকর্মী এবং তাদের খদ্দেরদের পুলিশ আটক করার পর সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য কথিত শিক্ষা কেন্দ্রে পাঠানো হতো।

সেখানে তাদের জোরপূর্বক কাজ করতে হতো। বলা হয়, তাদের সেখানে খেলনা এবং বাসাবাড়ির জিনিসপত্র তৈরি করতে হয়। রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে এই শাস্তি ব্যবস্থার অবসান হচ্ছে। যারা এখনও এসব বন্দীশিবিরে রয়েছেন, তাদের মুক্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা শিনহুয়া। তবে যৌন পেশা চীনে অবৈধই থাকছে। এই অপরাধে কেউ দণ্ডিত হলে ১৫ দিনের আটকাদেশ এবং পাঁচ হাজার ইউয়ান (৫৪৬ ডলার) পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

শিনহুয়া বলছে, ২০ বছর আগে ‘আটক এবং শিক্ষা’ ব্যবস্থা চালু করার ফলে ‘ভালো সামাজিক পরিবেশ এবং জনশৃঙ্খলা’ তৈরি হয়েছে। তবে সেখানে আরও বলা হয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যবস্থাটি অনেক বেশি অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

২০১৩ সালে বেসরকারি সংস্থা এশিয়া ক্যাটালিস্টের একটি গবেষণায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, এই ব্যবস্থার আদৌ কোনও উপকারিতা আছে কিনা? সেই প্রতিবেদনে দুইটি শহরের ৩০ জন নারী যৌনকর্মীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আটক থাকা নারীরা এমন কোনও নতুন কাজ শিখতে সক্ষম হননি, যা মুক্তি পাওয়ার পর তাদের জীবনযাপনে সাহায্য করতে পারে। সাধারণত সেখানে আটককৃতদের হাতে করার কাজ শেখানো হয়। সেখানে বলা হয়, যে যৌনকর্মীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে, আটককেন্দ্র থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই তারা আবার যৌন পেশায় ফিরে গেছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৩ সালে ১৪০ জন নারী যৌনকর্মী, খদ্দের, পুলিশ এবং বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। তারা দেখতে পায়, অনেক যৌনকর্মীকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পুলিশ স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে।

একজন যৌনকর্মী দাবি করেছেন, পুলিশ তাকে মিথ্যা কথা বলে স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর করিয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ আমাকে বলল, এতে কোনও সমস্যা হবে না, আমাকে শুধু আমার নাম স্বাক্ষর করতে হবে। চার-পাঁচদিন পরে তারা আমাকে ছেড়ে দেবে। বরং তারা আমাকে হেফাজতে এবং পরে শিক্ষা কেন্দ্রে ছয় মাস ধরে আটকে রাখে।

এশিয়া ক্যাটালিস্টের পরিচালক শেন টিংটিং বলছেন, জোরপূর্বক আটকে রেখে কাজ করার ব্যবস্থা বাতিল করা অবশ্যই ভালো একটি ব্যাপার। কিন্তু যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষায় এটা খুবই ছোট একটি পদক্ষেপ। তিনি বলেন, চীনের আইন এবং নীতির লক্ষ্য হচ্ছে যৌনকর্ম নিবারণ এবং দমন করা। কিন্তু উচিত ছিল তাদের নিরাপদ স্বাস্থ্যের জন্য একটি কাঠামো তৈরি এবং যৌন পেশাকে একটি পেশা হিসেবে নিরাপত্তা প্রদান করা।

২০১৩ সালে চীন ঘোষণা দিয়েছিল যে, ছোটখাটো অপরাধীদের জন্য তারা শ্রমশিবিরের মাধ্যমে পুনঃশিক্ষা দেয়ার কার্যক্রম বিলুপ্ত করছে। এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিচার সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি আলোচিত অন্যায্য ঘটনার প্রেক্ষাপটে। সেসব ঘটনার একটি হলো একজন মাকে শ্রমশিবিরে পাঠানো হয়েছিল কারণ তিনি ধর্ষণের শিকার হওয়া তার মেয়ের জন্য বিচার দাবি করেছিলেন।

তবে যৌনকর্মী ও তাদের খদ্দেরদের জন্য ‘আটক এবং শিক্ষা’ ব্যবস্থা চালু ছিল। পুনরায় শিক্ষা দেয়ার কার্যক্রম একেবারে বাতিল করে দিচ্ছে না চীন। দেশটির কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, শিনজিয়াং প্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছামূলক শিক্ষা ক্যাম্প রয়েছে, যা উগ্রপন্থা দমনে সহায়তা করছে।

তবে অধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন যে, চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের সদস্যদের জোর করে ধরে এসব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং তাদের ধর্মবিশ্বাস সমালোচনা বা ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে।

Bootstrap Image Preview